পার্টি অফিসে বসে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ইস্তাহারের মুখবন্ধনীতে ঠাঁই পেয়েছে চাঁচলে রাহুল গাঁধীর জনসভার ভিড়ের ছবি। এর থেকে সহজেই আঁচ করা যায় মালদহকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে কংগ্রেস। রাহুল গাঁধীর ‘ভোকাল টনিকে’ মালদহের কংগ্রেসকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তৃণমূল পূর্ণ শক্তি নিয়ে প্রচারে নামতে পারল না।
যিনি গনিখান চৌধুরির হাত ছেড়ে মালদহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাসফুলের পরিচর্যা করেছিলেন, সেই কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর মতো নেতারা ভোটের মরসুমে আদালতে ওকালতি করছেন। পার্টি অফিসে বসে টিভি দেখে কার্যত নিজেকে ‘গৃহবন্দি’ করে রেখেছেন।
শুনতে অবাক লাগলেও, এটাই বাস্তব। ইংরেজবাজার পুরসভার ঠিক উল্টো দিকেই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী দলীয় নেতাদের সঙ্গে বসেছিলেন। গোটা মালদহ হাতের তালুর মতো যাঁর চেনা, তিনি কিনা, সন্ধের মুখে বসে রয়েছেন?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জিজ্ঞেস করলাম, প্রচারে বেরোননি। হাসি মুখে জবাব এল, “কোথায়? আমাকে তো ইংরেজবাজার পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে! এখানে আমি চার বার চেয়ারম্যান ছিলাম, ঘরে বসে থাকলেও সবাই তৃণমূলকেই ভোট দেবেন। গোটা জেলায় কী হবে আমি কিছু জানি না।”
অথচ পোড়খাওয়া এই নেতা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কোথায় কত আদিবাসী ভোট, বামেদের চটি ফেলে আসা মালদহ উত্তরের বিজেপি প্রার্থী খখেন মুর্মু, দিল্লি থেকে উড়ে আসা বিজেপির শ্রীরূপা মিত্র এবং উত্তর মালদহে সিপিএমের বিশ্বনাথ ঘোষকে কী ভাবে রুখে দেওয়া যায়, এমনকি কংগ্রেসকে হারাতে গেলে তৃণমূলের কী রণকৌশল হওয়া উচিত— সবই তিনি ছকে ফেলেছিলেন। কথাপ্রসঙ্গে তাঁর কাছ থেকেই জানলাম, কৃষেন্দু নয়, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর উপরেই শেষ পর্যন্ত ভরসা রেখেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ইংরেজবাজারের তিন বারের বিধায়ক ‘চৌধুরীবাবু’। শুধু তিনিই নন, যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশেরই যেন গা ছাড়া ভাব!
আরও পড়ুন: ‘স্টেজে উঠলে নিজেই বুঝতে পারি না, কী বলছি’
কংগ্রেসের অভিযোগ, ভোট প্রচারের লোক জড়ো করতে এখন মৌসম বেনজির নুর ‘ক্রাইসিস ম্যানেজাররা’ গ্রামের যুবকদের বাইকে তেল ভরিয়ে দিচ্ছেন। প্রচারে গেলেই মাছ-ভাত, মাংস-ভাতের লোভ দেখাচ্ছেন গরিবগুর্বোদের। এই পরিস্থিতিতে মৌসমের একমাত্র ভরসা সংখ্যালঘু ভোট। কিন্তু তাতেও ভাগ বসিয়েছে প্রয়াত নেতা গনিখানের ‘আবেগ’। এখনও যেন তিনি ভোট ময়দানেই রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ৫ বছরে ৫০০০ কোটি, রেকর্ড গড়েছে মোদীর প্রচার খরচ
কী বলছেন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী?
তাঁর কথায়: “আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত সৈনিক। এই জেলায় শুভেন্দু অধিকারীকে অবজার্ভার করে পাঠানো হয়েছেন। তিনি আমায় ইংরেজবাজার পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডটাই দেখতে বলেছেন। তাই আমি এটুকুই দেখছি।” পর মুহূর্তেই কিছুটা ক্ষোভের সুরে ভেসে এল, “চাঁচলের ছবি কংগ্রেসের ইস্তাহারে। আর আমি এখন কোর্ট থেকে আসছি। আমি জ্যোতিষী নই। তবে বরকত সাহেব মৃত হলেও জীবিত রয়েছেন। সব নির্বাচনেই দেখি, তিনিই ফ্যাক্টর। মানুষ এখন কোন নজর থেকে দেখছে, বলা খুব মুশকিল।”