মৌসম বেনজির নুর
প্রয়াত বরকত গনিখান চৌধুরীর মুখে মাঝেমধ্যেই শোনা যেত শব্দটা। ‘বেইমান’! দলের কোনও নেতার আচরণে ক্ষুব্ধ হলে বেইমানির কথা তুলতেন বরকত। তাঁর রেখে যাওয়া তালুকে এসে তাঁরই এক উত্তরসূরীর উদ্দেশে সেই সুরেই আক্রমণ শানালেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী।
উত্তর মালদহের কংগ্রেস সাংসদ তথা বরকতের ভাগ্নী মৌসম বেনজির নূর ভোটের আগে দল বদলে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী। উত্তর মালদহের চাঁচলে শনিবার সভা করতে এসে মৌসমের নাম না করেই রাহুল বলেছেন, ‘‘আপনারা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এক জন ধোঁকা দিয়েছেন। আপনাদের ভোট নিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী অন্য দলে চলে গিয়েছেন। ভয় পেয়েছেন বলেই চলে গিয়েছেন! এটা কংগ্রেসের গড়। ধোঁকা দিয়ে কংগ্রেসকে শেষ করা যায় না, এটা বুঝিয়ে দিতে হবে।’’
তাঁর পুরনো দলের সভাপতির মন্তব্য শুনে মৌসমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি মানুষকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি বেইমানি করেছি কি না, মানুষই বলে দেবেন।’’ দু’বারের সাংসদের আরও সংযোজন, ‘‘এ রাজ্যে বিজেপিকে এখন আটকাতে পারে তৃণমূল। আমি সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে চাই। কাজ করতে চাই। বরকতসাহেবও কাজ না করলে বরকতসাহেব হতে পারতেন না!’’ মৌসমের দাবি, চাঁচলের ওই কলমবাগান মাঠেই কাল, সোমবার তৃণমূল পাল্টা সমাবেশ করে দেখিয়ে দেবে তাদের সঙ্গেই মালদহে বেশি মানুষ আছেন।
বরকতের ভাই আবু নাসের (লেবু) খান চৌধুরীও এর আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছিলেন। মৌসমের দলবদলের পরে বরকত-নামের ‘আবেগ’কে তৃণমূলের মতো কাজে লাগাতে চাইছে কংগ্রেসও। ‘দলত্যাগ করা মহাপাপ। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত কংগ্রেসের পতাকা আমার বুকে থাকবে’— বরকতের এই পুরনো কথাকে পোস্টার বানিয়ে প্রচারে নেমেছে কংগ্রেস। রাহুলের সভার মাঠেও চোখে পড়েছে বরকতের ছবি দেওয়া সেই পোস্টার।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভিড় উপচে পড়া মাঠে রাহুলের আগে কংগ্রেসের সব নেতাই ‘বেইমানি’র দায়ে মৌসমকে অভিযুক্ত করে তাঁর ভাই ঈশা খান চৌধুরীর ‘হাত’ শক্ত করার আবেদন জানিয়ছেন। এআইসিসি-র সম্পাদক এবং ফরাক্কার বিধায়ক মইনুল হক যেমন বলেছেন, ‘‘খুব অল্প বয়সে মৌসমকে সুজাপুরের বিধায়ক করা হয়েছিল। কিছু দিনের মধ্যেই সাংসদ। তার পরে জেলা সভানেত্রী। এখন নানা প্রলোভনে সে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়েছে।’’ মালদহের কংগ্রেস জেলা সভাপতি মুস্তাক আলমের মন্তব্য, ‘‘উত্তর মালদহে মৌসম নূরের বেইমানির জবাব আমাদের দিতেই হবে।’’ উত্তর মালদহে মৌসমের বিরুদ্ধে গত বার দ্বিতীয় স্থান পাওয়া সিপিএমের খগেন মুর্মুও যে এ বার দলবদলে বিজেপি প্রার্থী, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতাদের কেউ কেউ।
আরও পড়ুন: দু’জনেই ‘লম্বা-চওড়া ভাষণ’ দেন, মোদী-মমতাকে তীব্র আক্রমণ রাহুলের
মৌসমের ‘ডালুমামা’ অবশ্য ভাগ্নীর বিরুদ্ধে আক্রমণে যাননি। তিনি আবেদন জানিয়েছেন, মালদহে কংগ্রেসের প্রতি সমর্থন অটুট রাখার।