জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নদিয়ার বগুলায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
‘হারাতঙ্কে’ ভুগে নরেন্দ্র মোদী ভুল বকছেন— প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী বক্তৃতার প্রতিক্রিয়ায় এ ভাবেই মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার তাঁর প্রথম নির্বাচনী সভা ছিল নদিয়ার পানিঘাটায়। সেখানেই মোদীর বুনিয়াদপুরের বক্তব্যের জবাব দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক হয়। উনি হারাতঙ্কে ভুগছেন। আর রোজ ভুলভাল বকছেন।’’
লোকসভা ভোটের পরে রাজ্যে মমতা আর ক্ষমতায় থাকবেন না বলে মোদী যে হুঙ্কার দিয়েছেন, তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মমতার মন্তব্য, ‘‘এটা বাংলার নির্বাচন নয়। দিল্লির নির্বাচন। নিজে কী করেছ, তা বলছ না। পাঁচ বছর ঘুরে বেড়িয়েছ। আগে পাঁচ বছরের হিসেব দাও। তার পর ভোট দেব।’’ রাজ্য নিয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাসী দাবি, ‘‘এখানে এলে মোদীকে সরপুরিয়া দেব। কাঁচাগোল্লা দেব। মিহিদানা দেব। আমরা অতিথি এলে খাওয়াই। কিন্তু ভোট দেব না। আপনারাও ভোট দেবেন না।’’
এ বারের নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই নরেন্দ্র মোদীকে ‘মেয়াদ ফুরনো প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করছেন তৃণমূল নেত্রী। এ দিনও তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, পঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাত, ওড়িশা, উত্তর-পূর্বে বিজেপি হারবে। ত্রিপুরার একটি আসন না হয় জিতল। অন্ধ্রপ্রদেশে শূন্য, তামিলনাড়ুতে গোল্লা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানেও গোল্লা পাবে। উত্তরপ্রদেশে এ বার ১৩টি আসনও পাবে না।’’ মমতার কথায়, ‘‘আরএসএস মোদীকে বলেছে, সব জায়গায় হারবে। বাংলায় গিয়ে ঘুরে বেড়াও। মমতা তোমার বিরুদ্ধে কথা বলছে। ওঁর গলা বন্ধ করতে হবে।’’
রাজ্যে তৃণমূল সরকারের কাজের বিবরণ দিয়ে মোদীর কাছে পাঁচ বছরের জবাবদিহি চান মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘২ কোটি ছেলেমেয়ের চাকরি চলে গেছে। মোদীবাবুর জবাব চাই। সবার পকেটে ১৫ লক্ষ টাকা দেবেন বলেছিলেন। কালো ধন নিয়ে এসে। দিয়েছেন কি?’’ এ বারের নির্বাচনী লড়াইয়ে নিজের মেজাজ বুঝিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘বাংলার মাটি রবীন্দ্র-নজরুলের মাটি। এ মাটি দাঙ্গা সহ্য করে না। এখানে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না।’’
এ দিন সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে সভা ছিল প্রধানমন্ত্রী। তার ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যেই নদিয়ার পানিঘাটায় সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই এ দিন মোদীর তোলা অভিযোগ নস্যাৎ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখানে দুর্গাপুজো হয়, রাস, লক্ষ্মীপুজো, ইদ, সরস্বতীপুজো হয়। চৈতন্যদেবও আছেন। মিথ্যা বলার একটা সীমা আছে।’’ সেই সূত্রেই প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘এখানে সব হয়। শুধু মোদী হয় না, বিজেপি হয় না।’’
নোটবন্দির ফলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘রাতে হঠাৎ মনে হল, নোট বাতিল করতে শুরু করলেন। রাতারাতি মানুষকে ভিখিরি বানিয়ে দিল। দোকান বন্ধ হল। ইন্ডাষ্ট্রি, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।’’ প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘আগে বলত মিত্রোঁ। এখন শত্রু।’’