কখনও উধাও হননি অর্ণব, দাবি অনীশার

চাপে পড়লেই তিনি উধাও হয়ে যান বলে যে ‘রটনা’ হয়েছে, তা কার্যত উড়িয়ে দিলেন নদিয়া থেকে নিখোঁজ অফিসার অর্ণব রায়ের স্ত্রী। বরং তাঁর দাবি, কেউ আটকে না রাখলে কোনও ভাবেই এত দিন বেপাত্তা হয়ে থাকার লোক নন তাঁর স্বামী। 

Advertisement

সুস্মিত হালদার  

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২৪
Share:

স্ত্রীর সঙ্গে অর্ণব রায়। ছবি: সংগৃহীত

চাপে পড়লেই তিনি উধাও হয়ে যান বলে যে ‘রটনা’ হয়েছে, তা কার্যত উড়িয়ে দিলেন নদিয়া থেকে নিখোঁজ অফিসার অর্ণব রায়ের স্ত্রী। বরং তাঁর দাবি, কেউ আটকে না রাখলে কোনও ভাবেই এত দিন বেপাত্তা হয়ে থাকার লোক নন তাঁর স্বামী।

Advertisement

ছ’দিন হয়ে গেল কৃষ্ণনগর থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া অর্ণবের খোঁজ নেই। নদিয়া জেলার নির্বাচনে ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট যন্ত্রের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। সে দিনই জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা দাবি করেছিলেন, এর আগে অন্তত দু’বার— কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ে আশানুরূপ না হওয়ায় এবং এক বার বীরভূমের নলহাটিতে চাকরি করার সময়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন অর্ণব।

মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরের বাড়িতে বসেই অর্ণবের স্ত্রী তথা সহকর্মী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অনীশা যশ দাবি করেন, এই সব কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ছাত্রাবস্থায় উধাও হওয়ার কোনও ঘটনা তাঁর জানা নেই। তাঁর দাবি, “এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। আমাদের পরিবারের কেউ বা আত্মীয়স্বজন অন্তত এমন কোনও ঘটনার কথা জানেন না। কে কোথা থেকে এই ধরনের তথ্য পাচ্ছে, কে জানে!” নলহাটি থেকে অর্ণবের উধাও হওয়া প্রসঙ্গে অনীশা বলেন, “তখন ওর প্রথম চাকরি। বয়স অল্প, তত দায়িত্বও ছিল না। বারবার আবেদন করেও টানা চার মাস ছুটি পায়নি। সেই কারণেই ৩১ ডিসেম্বর কাউকে কিছু না বলে কলকাতায় চলে গিয়েছিল। মেসে ছিল বন্ধুদের সঙ্গে। পরের দিন ভোরে মাকে ফোন করে জানায়। ওই দিনই আবার কর্মক্ষেত্রে ফিরেছিল। এর ভিতরে অন্য কোনও গল্প নেই।”

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, অন্তর্ধান হওয়ার দিন দুই আগে ভোটের কাজের গতি নিয়ে জেলাশাসক তাঁকে বকাঝকা করেছিলেন। এমনকি তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতিও তৈরি হয়। পুলিশ দাবি করে, অর্ণবের যেহেতু চাপে পড়লে উধাও হয়ে যাওয়ার ‘স্বভাব’ আছে, এ ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। যদিও জেলাশাসক ও অনীশা দু’জনেরই বক্তব্য ছিল, তিরস্কারের কারণে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে অর্ণব কর্মক্ষেত্র ছেড়ে চলে যাননি। এর দিন দুই পরে অনীশা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ করে অর্ণবকে কেউ আটকে রেখেছে। কে, কেন তাঁকে আটকে রাখবে, তা অনীশা বলতে পারেননি। তবে তিনি দাবি করেন, ‘‘ও কোনও দিনই কাজের চাপকে ভয় পেত না। বরং উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরে বিডিও থাকার সময়ে উপনির্বাচন, পঞ্চায়েত ভোট ও বিধানসভা ভোট সামলেছে। সে এখন এমনটা করবে কেন?”

গত কয়েক দিনে অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন অনীশা। রাতদিন কেঁদে চলেছেন। একের পর এক দিন চলে যাচ্ছে, অথচ সামান্যতম সূত্রও পাচ্ছে না পুলিশ। অনীশা নিশ্চিত, “এর পিছনে গভীর কোনও রহস্য আছে। কী সেই রহস্য, জানা নেই। কিন্তু এ টুকু বলতে পারি যে কাজ ফেলে, পরিবার ফেলে এত দিন আত্মগোপন করে থাকার লোক উনি নন।” ঘটনাচক্রে, অর্ণবেরই দফতরে তাঁর সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন অনীশা। তিনি বলেন, “অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে ও কাজটা তোলার চেষ্টা করছিল। বাড়িতে ফাইল নিয়ে এসে রাত ৩টে পর্যন্ত আমরা কাজ করেছি। সেই লোক এ ভাবে সব ফেলে বসে থাকতে পারে না।”

এগিয়ে আসা ভোট এবং ভিআইপি-দের আনাগোনা নিয়ে ব্যস্ত নদিয়া জেলা পুলিশ অর্ণবের তদন্তে কতটা সময় দিতে পারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার অবশ্য দাবি করছেন, “সিনিয়র পুলিশ অফিসারেরা তদন্ত করছেন। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন