ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে বনগাঁর দুই প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর ও মমতাবালা ঠাকুর (দু’জনেই চিহ্নিত)। ছবি: সুজিত দুয়ারি
সম্পর্কে তাঁরা জেঠিমা-দেওরপো। থাকেনও একই ঠাকুরবাড়ি চত্বরে। ঘটনাচক্রে, সোমবার পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা ভোটও দিলেন প্রায় একই সময়ে। তবু ওই ঘটনাচক্রেই তাঁদের মধ্যে শত যোজন দূরত্ব। আড়চোখে চোখা-চোখি হলেও কথা হল না। ভোটদান পর্ব মিটিয়ে বনগাঁয় তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর তাঁর দেওরপুত্র, বিজেপির প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরকে নিয়ে বললেন, “সর্বক্ষণ নাটক। নাটক করতেই আমার সময়ে ভোট দিতে গিয়েছিল।”
মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক এবং সেই ভোটব্যাঙ্ক ঠাকুরবাড়ির কোন প্রার্থী সবচেয়ে বেশি দখলে রাখতে পারবে তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ ছিলই। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সেই উত্তাপকে আরও কয়েক ধাপ বাড়িয়ে শান্তনু এ দিনও ভোটদানের লাইনে দাঁড়িয়ে বললেন, “গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আমায় খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে। বনগাঁর মানুষ, বড়মাকে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁরা এর জবাব দেবেন।”
গত পরশু প্রচারে যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েন শান্তনু। এর পরেই তাঁর এবং বিজেপির বড় অংশের তরফেই একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ তুলেছেন। শান্তনু নিজেও এক রাত হাসপাতালে কাটিয়ে ভোটের আগের রাতে বনগাঁয় চলে এসেছেন। মাথায় ব্যান্ডেজ লাগানো গলায় ‘নেক-গার্ড’ বাঁধা শান্তনু এ দিন সকাল সকাল পৌঁছে যান পাড়ার স্কুলে ভোট দিতে। সেখানে পাশেই মহিলাদের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর জেঠিমা, তাঁর প্রতিপক্ষ তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ মমতাবালা। প্রার্থীর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় তো নয়ই, শান্তনু বরং বিতর্কে জড়ালেন বিজেপি’র নির্বাচনী প্রতীক ছাপা উত্তরীয় গলায় ঝুলিয়ে ভোট দিতে ঢুকে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই শান্তনু বললেন, “আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। ওটা একটা গেরুয়া কাপড় ভেবে পরে নিয়েছিলাম। অসুস্থ শরীরে মাথার ঠিক ছিল না।” অসুস্থতার লক্ষণ অবশ্য এ দিন তাঁর মধ্যে বিশেষ দেখা যায়নি। বিভিন্ন বুথে ছুটে বেড়ানোর পাশাপাশি বেচাল করার অভিযোগ তুলে প্রিসাইডিং অফিসারদের ধমকাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। যা দেখে তাঁর প্রতিপক্ষ মমতাবালা বলছেন, “নাটক করে। নাটক করে ভোট পেতে চায়। নিজের দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করে ও প্রমাণ করে দিয়েছে যে ওর মাথা খারাপ।”
নিজের ভোট দিয়ে এসে মমতাবালা এ দিন ভোটপ্রক্রিয়া দেখতে বেরোন বেলা ১০টা নাগাদ। হরিণঘাটার বিভিন্ন বুথ ঘুরে দেখেন তিনি। সেখান থেকে যান কল্যাণী। বুথে ঘোরার সময়ে বহু কর্মী তাঁকে অভিযোগ করেন, “বিজেপি আমাদের লোককে বসতে দিচ্ছে না। দিদি আপনি কিছু করুন।” একটি বুথে মার খাওয়া তৃণমূল কর্মীর পিঠের আঘাত পরখ করে দেখেন মমতাবালা। আর এক বুথে তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, সিপিএম বাড়ি বাড়ি থেকে লোক ডেকে এনে ভোট করাচ্ছে। বনগাঁর বামপ্রার্থী অলকেশ দাস অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, “রাজ্য জুড়ে কারা সন্ত্রাস চালাচ্ছে, তা সকলেই জানে। মানুষ বুঝেছে পরিবার নয়, নীতির কথা বুঝে ভোট দেওয়া উচিত।’’ কংগ্রেসপ্রার্থী সৌরভ প্রসাদ বলেন, “নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ। তৃণমূলের এ দিনের সন্ত্রাসের বহু ভিডিয়ো আমার কাছে আছে।” এর মধ্যেই বেশ কিছু কেন্দ্র থেকে গন্ডগোলের খবর আসতে শুরু করে। বোমায় আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে বনগাঁয়। দিনভর কর্মীদের শান্ত করতে মমতাবালাকে বলতে শোনা যায়, “এখন তো কিছু করার নেই। পরে বোঝা যাবে। তোমরা অভিযোগ করো।” সঙ্গে মমতাবালা বলেন, “শান্তনু কী আমি জানি। তিরিশ বছর ধরে ওর অপকীর্তি চলছে।”