মমতা ঠাকুরকে প্রণাম করছেন সৌরভ প্রসাদ। নিজস্ব চিত্র
হলুদ পাঞ্জাবি। গলায় গামছা। খালি পায়ে ডাঙ্কা বাজাতে বাজাতে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সৌরভ প্রসাদ ঢুকলেন ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে। কামনা সাগরে ডুব দিয়ে স্নান সেরে মতুয়া ধর্মগুরু হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে প্রণাম করলেন। বীণাপাণিদেবীর ঘরে তখন ভক্তদের আশীর্বাদ করছিলেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর। সৌরভ সেখানে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন মমতা ঠাকুরকে।
এক প্রার্থী অন্য প্রার্থীকে প্রণাম করছেন—বুধবার এমন দৃশ্য দেখে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে থাকা অনেকেই অবাক হয়ে যান।
আঠাশ বছর বয়সি ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ বুধবার গিয়েছিলেন মতুয়া ধর্মের পীঠস্থান ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে। সেখানে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে মতুয়া ধর্ম মহামেলা। দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে আসছেন, কামনা সাগরে (পুকুর) পুন্যস্নান করছেন।
রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের ভোটে মতুয়া ভক্তরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকেন। স্বাভাবিক ভাবেই মতুয়াদের মন পেতে কংগ্রেস প্রার্থীও এ দিন গিয়েছিলেন ঠাকুরবাড়িতে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ দিন দুপুরে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে সৌরভ ঠাকুরনগরে পৌঁছন। স্থানীয় চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালের কাছ থেকে মিছিল করে তিনি ঠাকুরবাড়িতে যান। তাঁর সাজটা অনেকটাই মতুয়া ভক্তদের মতোই ছিল। ডাঙ্কা বাজাতে বাজাতে মিছিল করেন। প্রার্থীর সঙ্গে ডাঙ্কা, নিশান, কাঁসি নিয়ে কিছু মতুয়া ভক্তও মিছিলে যোগ দেন। ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে তিনি কামনা সাগরে ডুব দিয়ে পুণ্যস্নান করেন। পুজো দেন মতুয়া ধর্মগুরু হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে। এর পরে তিনি যান সদ্য প্রয়াত বড়মা, বীণাপাণি ঠাকুরের ঘরে। সেখানে তখন বড়মার আবক্ষ মূর্তির পাশে বসে ভক্তদের আশীর্বাদ করছিলেন মমতা। সৌরভ তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ চান। পাশ থেকে কংগ্রেস কর্মীরা বলে দেন, উনি সৌরভ প্রসাদ। কংগ্রেস প্রার্থী। সেখান থেকে বেরিয়ে সৌরভ পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের বাবা, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে। মঞ্জুল তাঁর মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন।
সৌরভ বলেন, ‘‘মমতা ঠাকুর আমার মায়ের মতো। সন্তান তো মায়ের আশীর্বাদ নিতেই পারে। উনি আমাকে আশীর্বাদ করেছেন জয়ী হওয়ার জন্য।’’
কী বলেছেন তৃণমূল প্রার্থী?
মমতা বলেন, ‘‘সৌরভকে আমি চিনতাম না। ভক্তরা এসে প্রণাম করছিলেন। কংগ্রেস প্রার্থীও এসেছিলেন। পাশ থেকে কেউ একজন বললেন উনি কংগ্রেস প্রার্থী। এই পর্যন্তই।’’ তিনি কি তাঁকে জয়ী হওয়ার আশীর্বাদ করেছেন?
মমতা বলেন, ‘‘না তেমন কিছু হয়নি। আমি তো ওকে চিনতেই পারিনি।’’ এ দিন শান্তনু অবশ্য ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাননি। ঠাকুরবাড়িতেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীর সভায় না গেলেও মতুয়া ভক্তদের সভায় যেতে বলেছি। মঙ্গলবার যাঁরা পুণ্যস্নান করেছেন এমন মতুয়াদের ১০০টি গাড়ি করে প্রধানমন্ত্রীর সভায় পাঠিয়েছি। আজকের দিনে আমি মতুয়া ভক্তদের জন্য সময় দিতে পারছি, এটাই আমার কাছে বড় পাওনা।’’