Lok Sabha Election 2019

তাঁকে ঘিরেও ঝামেলা, তবে তা দেব-দর্শনের

কালো টিনের এক চালা ঘরের সামনের উঠোনে দাঁড়াল সেই এসইউভি। গাড়ি দেখে কান্নার রোল হল দ্বিগুণ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

কেশপুরে গুলিবিদ্ধ তৃণমূল কর্মী বক্তিয়ার খানের ছেলের সঙ্গে দেব। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

গ্রামের সরু রাস্তা ধুলোর আস্তরণে ঢাকা। ভরদুপুরেই যেন তামাটে সন্ধে নেমেছে! এমার্জেন্সি আলো জ্বেলে তার মধ্যে দিয়েই ছুটছে কালো এসইউভি। পিছনে শ’য়ে শ’য়ে গ্রামবাসী। কারও হাত গলার সঙ্গে ব্যান্ডেজ করা, কারও হাঁটুতে বাঁধা পুরু ব্যান্ডেজ। কেউ আবার মাথা থেকে ঝরতে থাকা রক্ত মুছে নিয়ে বলছেন, ‘‘এই অত্যাচার মানব না। দেবদা এর বিচার করবেন।’’

Advertisement

কালো টিনের এক চালা ঘরের সামনের উঠোনে দাঁড়াল সেই এসইউভি। গাড়ি দেখে কান্নার রোল হল দ্বিগুণ। রবিবার ঘাটালে ষষ্ঠ দফা লোকসভা নির্বাচনে গুলিবিদ্ধ বক্তিয়ার খানের স্বজনেরা ঘিরে ধরল এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ তথা এবারের তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারীকে (দেব)। বক্তিয়ারের বছর তেরোর একমাত্র পুত্র বলল, “বাবাকে গুলি করেছে। কাকু, ওরা এ রকম করল কেন?”

মিনিট কয়েক বক্তিয়ারের গোটা পরিবারকে কখনও বুকে জড়িয়ে ধরে, কখনও তার বাচ্চাদের মাথায় হাত বুলিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন অভিনেতা দেব। সময় বয়ে যাচ্ছে দেখে স্থানীয় বিধায়কের ডাক শুনে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেব এর পর বলেন, “ভোট অনেক হবে। এই পরিবারটাকে এ ভাবে ফেলে যেতে পারবো না।”

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নির্বাচন ঘিরে ঘাটালের বেশ কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোলে গুলি চলার, বোমা পড়ার অভিযোগ উঠেছে এ দিন। মজে যাওয়া শিলাবতী নদীর ধারের আস্তানা থেকে এ দিন সকাল দশটা নাগাদ দেব যখন ভোট দেখতে বেরোচ্ছেন, তত ক্ষণে কার্যত হুলস্থূল বাধিয়ে দিয়েছেন তাঁর প্রতিপক্ষ বিজেপির ভারতী ঘোষ। এ প্রসঙ্গে দেব বলেন, “যিনি এলাকা ধমকে চমকে রাখতেন, তিনি কাঁদছেন!” এরপর তাঁর মন্তব্য, “ভারতীদি তো নিজেই এক সময়ে আইনের রক্ষক ছিলেন। এখন সেই মানুষ আইন ভাঙছেন? প্রতিটা মানুষের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, সব পার্টিকেই বলছি, ভোটটা শান্তিপূর্ণ ভাবে হতে দিন।”

এরপর শান্তির ভোট হচ্ছে কিনা দেখতে ঘাটালের বেশ কিছু বুথে ঘোরেন দেব। সে ভাবে কোনও গণ্ডগোলের সম্মুখীন না হলেও বুথে ঢুকে ভোটার, প্রিসাইডিং অফিসার, নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁর সফরে অশান্তির আঁচ না থাকলেও ‘স্টারডামে’র মেজাজ ছিল মে মাসের রোদের থেকেও চড়া। যেখানেই যাচ্ছেন, তাঁকে ঘিরে ছবি তোলার হিড়িক। হাসিমুখে আবদার মেটাতে থাকা দেবের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভোটের দিনে প্রার্থী এত দেরিতে ময়দানে কেন? উত্তরে দেব ফিরে গেলেন সেই ভারতী ঘোষেই। বললেন, “গত পাঁচ বছর ধরে ময়দানে আছি। ভারতীদি দেরিতে নেমে বুথে ঢুকে ঝামেলা করছেন।”

দেব বুথে ঢুকে ঝামেলা না পাকালেও তাঁকে দেখতে গিয়ে এ দিন বিপত্তি ঘটেছে ঘাটালের এক স্কুল-বুথে। বুথের ভিতরে তখন দেব, তাঁকে দেখার জন্য স্কুলের উপরের অ্যাসবেস্টসে চড়েছিল তিন কিশোর। হঠাৎ সেই অ্যাসবেস্টস হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। এক কিশোরকে টেনে তুলে দেব বলেন, “ওরে! মরবি নাকি? দেবদা আছে তো!’’

দিনভর পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ঘাটাল জুড়ে ছুটে বেড়ানো দেবের সঙ্গেই এক বুথে এ দিন দেখা হয়ে গিয়েছিল এক ভদ্রলোকের। হাত মেলাতে চাওয়া অভিনেতাকে তিনি বলেন, “আমি কিন্তু বিজেপি!” তৃণমূলপ্রার্থীর উত্তর, “তাতে কী?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন