বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত।
ধুন্ধুমার ঘটে গিয়েছে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শোয়ে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে চাপানউতোর তুঙ্গে। বিজেপিকে তীব্র ধিক্কার জানিয়ে আক্রমণ শিখরে তুলে নিয়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা তির ছুড়েছেন অমিত শাহও। কিন্তু এ বার আরও বড় অভিযোগ আনলেন রাজ্যসভার সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত। বিজেপির এই তাত্ত্বিক নেতা কী বললেন আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে? দেখে নিন:
প্রশ্ন: অমিত শাহের রোড শো-কে কেন্দ্র করে যা ঘটল, সেটা কি আপনাদের দলের ক্ষতি করে দিল না?
স্বপন: দেখুন রোড শো কোনও নতুন বিষয় নয়। সারা ভারতে সব রাজ্যে হয়, সব দল রোড শো করে। দিদিও করেন, এ রাজ্যেই করেন। তাই পশ্চিমবঙ্গে রোড শো প্রথম বার হল, এমন তো নয়। নতুন বিষয়টা হল এই গোলমালটা। আর কোনও রাজ্যে বিজেপির রোড শো ঘিরে সমস্যা হল না, এখানে হল কেন? এই প্রশ্নটা তো সবাই তুলছেন। ক্ষতি আমাদের হল, নাকি তৃণমূলের? ভেবে দেখুন।
প্রশ্ন: লাভ-ক্ষতি যা-ই হোক, যা ঘটল তা তো অভিপ্রেত ছিল না। এ রকমটা ঘটল কেন?
স্বপন: কেন ঘটল, তার জবাবটা তো তৃণমূলের কাছেই চাওয়া উচিত। একটা রোড শো হচ্ছে, তার জন্য উপযুক্ত অনুমতি নেওয়া রয়েছে, নির্বাচন কমিশন অনুমতি দিয়েছে। সেই রোড শোয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ‘ধিক্কার’ জানানোর কর্মসূচি অন্য কোনও দল কী ভাবে নিতে পারে? নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে ওই কর্মসূচির অনুমতি নিয়েছিল তৃণমূল? নেয়নি তো, কোনও অনুমতি ছিল না। পুলিশ কেন ওঁদের সরিয়ে দিল না? তার মানে গোলমালটা তৈরি করা হল, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন, কেন্দ্রের প্রকল্পকে রাজ্যের বলে চালাচ্ছেন ‘স্টিকার দিদি’, মথুরাপুরে মোদীর নিশানায় মমতা
প্রশ্ন: পুলিশি ব্যর্থতা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠছেই। কিন্তু কোনও যুক্তিতেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাটা সমর্থন করা যায়?
স্বপন: কে সমর্থন করছে! ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাকে সমর্থন কেউ করবেন কী ভাবে? কেউ সমর্থন করতে পারবেন না। কিন্তু প্রশ্নটা হল, মূর্তিটা ভাঙল কারা? খুঁজে বার করা হোক। যেখানে মূর্তি রাখা ছিল, সেই জায়গাটা তো সিসিটিভি ক্যামেরার নজরবন্দি। আমরা বলছি, সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হোক, তা হলেই বোঝা যাবে, কারা মূর্তি ভাঙল। কিন্তু এখন বলছে, সিসিটিভি কাজ করছে না।
প্রশ্ন: কারা ভাঙল মূর্তি? আপনি কী বলতে চান?
স্বপন: আমার মতে, বাংলায় তৃণমূলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জার তো বিজেপি। সেই বিজেপিকে ঠেকানোর কোনও রাস্তা ওঁরা পাচ্ছেন না। তাই বাঙালি ভাবাবেগকে বিজেপির বিরুদ্ধে উস্কে দিতে চাইছেন। বিজেপি-কে ওঁরা ‘বহিরাগত’ বলে চিহ্নিত করতে চাইছেন অনেক দিন ধরেই। এখন নিজেরাই মূর্তি ভেঙে বিজেপির ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন, বিজেপি জিতলেও মুখ্যমন্ত্রী বাঙালিই হবেন, ‘বহিরাগত’ বলবেন না, বিদ্বৎ বৈঠকে বার্তা শাহের
প্রশ্ন: তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, আপনার তত্ত্বই ঠিক, তা হলেও কি বাংলার মানুষ সে তত্ত্বে বিশ্বাস রাখবেন?
স্বপন: বিশ্বাস রাখবেন কি না দেখা যাক। আমি তো বলছি, এটা খুব চতুর চাল। দুটো লক্ষ্য নিয়ে এই ঘটনা তৃণমূল ঘটাল। প্রথমত, বাঙালি ভাবাবেগকে বিজেপির বিরুদ্ধে উস্কে দিতে চাইল। দ্বিতীয়ত, ডায়মন্ড হারবার আর বসিরহাটে যে ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে রাজ্যের মানুষ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যে ধরনের ঘটনার খবর ওই দুই এলাকা থেকে আসছে, তা খুবই খারাপ। সে দিক থেকে নজরটা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হল।