Euthanasia

ভুল চিকিৎসায় দৃষ্টিহীন জন্ম প্রতিবন্ধী, অনটনে জেরবার, স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি

কেশপুরের আমুড়িয়া এলাকার লাঙ্গডিহিতে বাড়ি ৩১ বছরের আরিফুল মল্লিকের। বৃদ্ধ বাবা ফজলুল, মা আরেফা, স্ত্রী এবং দুই নাবালক সন্তান নিয়ে আরিফুলের ছ’জনের পরিবার। বাড়ি বলতে এক টুকরো জমির উপর দরমা ঘেরা দুটো ঘর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:০৭
Share:

বাড়ির সামনে সপরিবারে আরিফুল মল্লিক। কেশপুরে। ছবি- সংগৃহীত।

পোলিও আক্রান্ত দু’টি পা। জন্ম থেকে সেই পঙ্গুত্বকে হারিয়ে স্নাতক হয়েছিলেন। চাকরি না পেলেও টিউশন করেই কোনও মতে পরিবার চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই ভুল চিকিৎসায় হারিয়েছেন একটি চোখের দৃষ্টি। হারিয়েছেন গৃহশিক্ষকতার কাজ। গত এক বছর ধরে কার্যত অর্ধাহারে এবং অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। প্রশাসনের কোনও দরজা বাকি রাখেননি কড়া নাড়তে। গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও। তার পরও কোনও সুরাহা হয়নি। শেষ পর্যন্ত নবান্নের সামনে বসে স্বেচ্ছামৃত্যুর পরিকল্পনা করছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এই সংখ্যালঘু পরিবার।

Advertisement

কেশপুরের আমুড়িয়া এলাকার লাঙ্গডিহিতে বাড়ি ৩১ বছরের আরিফুল মল্লিকের। বৃদ্ধ বাবা ফজলুল, মা আরেফা, স্ত্রী এবং দুই নাবালক সন্তান নিয়ে আরিফুলের ছ’জনের পরিবার। বাড়ি বলতে এক টুকরো জমির উপর দরমা ঘেরা দুটো ঘর।

জন্ম থেকে পঙ্গু হলেও, গ্রামে টিউশন দিয়ে প্রায় ১২-১৫ হাজার টাকা রোজগার হত তাঁর। মঙ্গলবার ফোনে আরিফুল বলেন,“এর পাশাপাশি গ্রামের শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষকতা করে মাসে আরও হাজার পাঁচেক টাকা আসে। যদিও সেই টাকাটা অনিয়মিত। তাই টিউশনই আমার একমাত্র রোজগার ছিল।” আরিফুলের শ্যালক ওয়াইদুর বলেন,“গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎজামাইবাবুর চোখে সমস্যা শুরু হয়। দাসপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে দেখাতে যান। সেখানে অক্ষয় দাশ নামে এক চিকিৎসক তাঁর চোখের চিকিৎসা করেন।”

Advertisement

বাড়ির সামনে আরিফুল মল্লিক। কেশপুরে। ছবি- সংগৃহীত।

আরিফুলের অভিযোগ, প্রায় এক মাস চিকিৎসা করিয়ে উন্নতি হওয়ার বদলে আবস্থার অবনতি হতে থাকে। তারপর ওই চিকিৎসক নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে রেফার করে দেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা দেখে বলেন আগাগোড়া ভুল চিকিৎসা হয়েছে। ততদিনে ডানচোখের কর্ণিয়াতে আলসার হয়ে দৃষ্টি হারিয়েছেন আরিফুল। গোটা বিষয়টি লিখিত ভাবে জানানো হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিককে। তিনি তদন্তের নির্দেশ দেন। জানা যায় চোখের চিকিৎসক তো ননই, তিনি আদতে একজন হাতুড়ে। পুলিশ গ্রেফতার করে ওই চিকিৎসককে।

আরও পড়ুন- ফিরল ভাগাড় আতঙ্ক, ফের রাতের অন্ধকারে হোটেল, রেস্তরাঁয় পৌঁছে যাচ্ছে মরা পশুর মাংস​

আরও পড়ুন- ইলেকট্রিক শক, যৌনাঙ্গে যন্ত্র ঢুকিয়ে অত্যাচার, কান্নায় ভেঙে পড়লেন মিহিরগুল​

আরিফুল বলেন, “অক্ষয় দাশ তো গ্রেফতার হল। কিন্ত ততদিনে আমি এক চোখে অন্ধ। টিউশন বন্ধ। আমি পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষ। একমাত্র সম্বল শিশু শিক্ষা কেন্দ্রর পাঁচহাজার টাকা। মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা,যাতায়াতের খরচ, ওষুধ কেনার পর চাল কেনার পয়সা নেই। আর চাল কিনলে চিকিৎসা বন্ধ রাখতে হবে।”

ওয়াইদুর বলেন,“এ ভাবে বেশ কয়েকমাস কার্যত অনাহার অর্ধাহারে কাটার পর আমি জামাইবাবুকে নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে শুরু করে বিধায়ক, জেলাশাসক সবার কাছে সাহায্যের আবেদন জানাতে যাই। কোনও জায়গা থেকে কোনও ফল না পেয়ে জুলাই মাসে যাই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে। সেখানে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়ে আসেন আরিফুল।” অভিযোগ, তার পরেও কোনও সুরাহা হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ এই সংখ্যালঘু পরিবারটিকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। তাই এবার পরিবারের সবাইকে নিয়ে নবান্নের সামনেই স্বেচ্ছামৃত্যু চান আরিফুল। বিধায়ক শিউলি সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,“ওই পরিবার আমার কাছে এসেছিল। আমি ব্লক স্তরে বলেছিলাম সাহায্য করতে। আমি যত দূর জানি ব্লক স্তর থেকে ওই পরিবারকে সাহায্য করা হয়েছে। তবে পাকাপাকি কোনও সুরাহা করতে একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী পারেন। আমি ওই পরিবারের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সুপারিশও করেছিলাম।”

কেশপুরের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুভ্রা সেনগুপ্তকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,“হ্যাঁ। ঘটনাটি আমি শুনেছি। খুব দুঃখজনক। শুনেছি অঞ্চল স্তর থেকে কিছু সাহায্য করা হয়েছে।” কী সাহায্য পেয়েছেন? জানতে চাইলে ওয়াইদুর বলেন, “সাহায্য পরে। আগে ওঁদের প্রশ্ন করুন এখন পর্যন্ত কেউ এসেছিলেন আরিফুলের কাছে?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন