Lottery Scam

লটারি প্রতারণা: পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে ইডি

ইডি-র সন্দেহ, শিক্ষায় নিয়োগ-দুর্নীতি, কয়লা ও গরু পাচারের মতো এই লটারি কেলেঙ্কারির সঙ্গেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একাংশের যোগ থাকতে পারে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:২৬
Share:

ইডির অভিযোগ, অবিক্রীত টিকিটে লটারি খেলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ফাইল চিত্র।

লটারি কেলেঙ্কারিতেও লালবাজারের দিকে আঙুল তুলছে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

Advertisement

কলকাতা পুলিশ যে-হেতু মাঝপথে মামলা বন্ধ করে দিয়েছে, তাই প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার লটারি প্রতারণা নিয়ে ইডি-র তদন্ত প্রক্রিয়াও কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার অভিযোগ। কারণ হিসেবে ইডি-র তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, কলকাতা পুলিশের রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত মূল মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে অভিযুক্তদের। তাই অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির ক্ষেত্রে আইনি বাধা আসছে। তবে হাল ছাড়েনি ইডি। এই বিষয়ে ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’ বা টাকা পাচার প্রতিরোধ আইনের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

ইডি-র সন্দেহ, শিক্ষায় নিয়োগ-দুর্নীতি, কয়লা ও গরু পাচারের মতো এই লটারি কেলেঙ্কারির সঙ্গেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একাংশের যোগ থাকতে পারে। অভিযোগ, অবিক্রীত টিকিটে লটারি খেলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। সাদা করা হয়েছে অঢিল কালো টাকা। এই দুষ্টচক্রেও যে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত, প্রাথমিক তদন্তে সেটা স্পষ্ট হয়েছে বলে ইডি-র দাবি।

Advertisement

তা হলে কী ভাবে তদন্ত বন্ধ করল পুলিশ? আদালতে ইডি অভিযোগ করেছে, অভিযোগের সত্যতা নেই এবং অভিযোগকারীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, এই জোড়া ‘কারণ’ দেখিয়ে জানুয়ারিতে লটারি প্রতারণার মামলা বন্ধ করে দেয় কলকাতা পুলিশ।

টাকা পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করে তদন্তের পাশাপাশি ইডি অবিক্রীত টিকিটে লটারি খেলে সব পুরস্কার-মূল্য আত্মসাৎ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের লটারি আইনের ধারা ভাঙারও অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, সিকিমের একটি সংস্থার বিরুদ্ধে অবিক্রীত টিকিটে লটারি খেলার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল কলকাতার বেলেঘাটা ও ভবানীপুর থানায়। জানা যায়, পুরস্কার বিজেতারা সকলেই লটারি সংস্থার মালিক। ২০১৯ সালে সিকিমের সেই লটারি সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের করা ওই অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দফতর তদন্ত শুরু করে। আবার কলকাতা পুলিশের মামলার উপরে ভিত্তি করে ২০২১ সালের মে মাসে সমান্তরাল তদন্ত (ইসিআর বা এনফোর্সমেন্ট কেস রেজিস্টার) শুরু করে ইডি। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ওই লটারি সংস্থার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বহু নথিপত্র এবং কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তারা।

ইডি সূত্রের খবর, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মামলার তদন্ত বন্ধ করা হচ্ছে বলে বেলেঘাটা থানার তরফ থেকে শিয়ালদহ আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের এজলাসে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। অভিযোগ, তখনই জানানো হয়, ওই অভিযোগের সত্যতা নেই। এমনকি অভিযোগকারীরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ইডি জানিয়েছে, সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই গত ৫ মার্চ অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেন বিচারক। কলকাতা পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে ভবানীপুর থানার মামলার একই তদন্ত রিপোর্ট আলিপুর আদালতে পেশ করে কলকাতা পুলিশ।

ইডি-র দাবি, তাদের তদন্তের গতিপ্রকৃতি সবিস্তার বিবরণ দিয়ে গত সেপ্টেম্বরে কলকাতা পুলিশের সংশ্লিষ্ট ডেপুটি কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। কলকাতা পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টিও জানানো হয়েছিল সেই চিঠিতে। কিন্তু কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে সেই চিঠির কোনও জবাব আসেনি বলে ইডি সূত্রের অভিযোগ।

অবশেষে বেলেঘাটা থানার মামলার বিষয়ে গত শুক্রবার শিয়ালদহ আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের কাছে আবেদন করা হয়। ইডি-র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র বলেন, ‘‘বিচারক আগামী ২১ জানুয়ারি কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনারকে এই বিষয়ে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছেন।’’ ইডি-র তদন্তকারীদের দাবি, ওই লটারি সংস্থার মালিক সিকিমের বাসিন্দা। পশ্চিমবঙ্গে মূলত বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটর এবং সাব-ডিস্ট্রিবিউটর মারফত টিকিট বিক্রি করা হত। অভিজিৎ বলেন, ‘‘ভবানীপুর থানার মামলার বিষয়েও আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের এজলাসে আবেদন করা হয়েছে। ৭ জানুয়ারি ওই সেই আবেদনের শুনানি হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন