হাইকোর্টে সিবিআই, হাসপাতালে মদন

সিবিআইয়ের আইনজীবী মদন মিত্রের জামিন খারিজের আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে এলেন বেলা দশটায়। আর প্রায় সেই সময়েই মন্ত্রী ভর্তি হয়ে গেলেন দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। মঙ্গলবার এই সমাপতনে কিছুটা অবাক আইনজীবী ও চিকিৎসকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:২৭
Share:

অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমে হাসপাতালে ঢুকছেন মদন মিত্র। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

সিবিআইয়ের আইনজীবী মদন মিত্রের জামিন খারিজের আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে এলেন বেলা দশটায়। আর প্রায় সেই সময়েই মন্ত্রী ভর্তি হয়ে গেলেন দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। মঙ্গলবার এই সমাপতনে কিছুটা অবাক আইনজীবী ও চিকিৎসকেরা।

Advertisement

হাইকোর্টে সিবিআই জানাল, আলিপুর আদালত একতরফা শুনানিতে মদন মিত্রকে বেআইনি ভাবে জামিন দিয়েছে। আদালতের নির্দেশে আগামিকাল, বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হবে। আর বেলা সওয়া দশটায় মদনবাবুকে হাসপাতালের একটি স্যুইটে ভর্তি করার পরে চিকিৎসকেরা জানালেন, মন্ত্রীর মূল সমস্যা উদ্বেগজনিত। থেকেই থেকেই তিনি অস্থির হয়ে পড়ছেন। বুকে ধড়ফড়ানিও হচ্ছে।

পরিবহণমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার কথা শুনে বিরোধীদের একাংশের অবশ্য মন্তব্য, ‘‘হাইকোর্টে জামিন ফের বাতিল হতে পারে বুঝেই হাসপাতালে গিয়েছেন তিনি!’’ যদিও মদন-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, ‘‘এসএসকেএম থেকে বলা হয়েছিল, পরিবারের সঙ্গে থাকলে তাঁর মানসিক সমস্যা কমবে। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু সোমবার রাত থেকে ক্রমেই তাঁর শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। বাধ্য হয়েই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।’’

Advertisement

মন্ত্রীর পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, বিচারবিভাগীয় হেফাজতে এসএসকেএমে ভর্তি থাকার সময়েই ‘প্যানিক অ্যাটাক’ এবং ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র (ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস আটকে যাওয়া) সমস্যা ছিল মন্ত্রীর। স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা ফের বেড়েছে। হাসপাতাল এ দিন সকালে জানিয়েছে, মন্ত্রীর বুকের বাঁ দিকে অস্বস্তি রয়েছে। আছে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও। এ ছাড়াও রয়েছে উদ্বেগ এবং অনিয়মিত নিদ্রার সমস্যা। তাঁকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন তাঁর বুকে অস্বস্তি ও ক্রমাগত ঘাম হচ্ছিল। প্রথমে চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল তাঁকে পরীক্ষা করেন। মদনবাবুর ইসিজিতে কিছু সমস্যা থাকায় তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মন্ত্রীর শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্যের সমস্যা রয়েছে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মোটের উপর স্বাভাবিক হলেও ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র জন্য তাঁকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ঘুমের ওষুধের মাত্রা বাড়ানো হলেও তিনি ঘুমোননি। তাঁকে লো-ফ্যাট, লো-প্রোটিন খাবার দেওয়া হয়েছে।

এ দিন সকাল সওয়া আটটা নাগাদ মন্ত্রীর বাড়ির সামনে একটি অ্যাম্বুল্যান্স আসার পরেই জল্পনা শুরু হয়। পৌনে ১০টা নাগাদ মন্ত্রীকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স হাসপাতালের দিকে রওনা হয়। সওয়া ১০টায় হাসপাতালে পৌঁছন মন্ত্রী। প্রাথমিক ভাবে জরুরি বিভাগে দেখার পরে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। তাঁকে একটি স্যুইটে রাখা হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এ দিন মন্ত্রীকে পরীক্ষা করেন পালমোলজিস্ট, নেফ্রোলজিস্ট, ইউরোলজিস্ট এবং সাইকিয়াট্রিস্ট। এর মধ্যেই দুপুরে মদন মিত্রকে হাতে-হাতে হাইকোর্টের নোটিস দিয়ে যান সিবিআইয়ের এক প্রতিনিধি। সিবিআই আবেদন জানানোর পরে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, মামলার প্রতিলিপি মদনবাবুর আইনজীবীর কাছে পৌঁছে দিতে। হাইকোর্ট জানিয়েছে, মামলার শুনানি হবে আগামিকাল, বৃহস্পতিবার।

দশ মাসের বেশি জেল হেফাজতে থাকার পরে ৩১ অক্টোবর আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক পার্থপ্রতিম দাস ২ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেন সারদা কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত মদনবাবুকে। জামিনের অন্য শর্ত হল, মদনবাবুকে তাঁর পাসপোর্টও জমা রাখতে হবে সিবিআইয়ের কাছে। আলিপুর আদালতের জামিনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই এ দিন হাইকোর্টের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছে সিবিআই।

এ দিন সকাল সাড়ে দশটায় বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি ঈশানচন্দ্র দাস এজলাসে বসার পরে সিবিআইয়ের আইনজীবী কে রাঘবচারিলু তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, সারদা-মামলায় অভিযুক্ত রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী মদন মিত্রকে জামিন দিয়েছে আলিপুর আদালত। সিবিআই তাঁর জামিন খারিজের আবেদন জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করতে চায়। আদালত সিবিআইয়ের আবেদন মঞ্জুর করে মামলা করার অনুমতি দিক। পরে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, ভারতের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের মামলাটি শুনানির জন্য গৃহীত হলে হাইকোর্ট বা জেলা ও দায়রা আদালতকে আগাম নোটিস দিতে হবে সরকারি আইনজীবীকে। আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালত সিবিআইয়ের আইনজীবীকে সেই নোটিস দেয়নি। আরও অভিযোগ, সিবিআইয়ের আইনজীবীকে আগে থেকে মামলার কেস ডায়েরি-সহ হাজির থাকার নির্দেশও দেয়নি আলিপুর আদালত। সিবিআইয়ের অভিযোগ, কেস ডায়েরি না দেখে, তাদের তদন্তকারী অফিসার আদালতে উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীর একতরফা সওয়াল শুনে ওই আদালতে জামিন দেওয়া হয়েছে।

সিবিআইয়ের আবেদন শোনার পরে বিচারপতি টন্ডন রাঘবচারিলুর কাছে জানতে চান, অন্য পক্ষের (মদনবাবুর) আইনজীবী কোথায়। মামলা দায়ের করে ওই আইনজীবীকে মামলার প্রতিলিপি দিক সিবিআই। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরে ফের মামলাটি ওঠে। বিচারপতি টন্ডন ও বিচারপতি দাস সিবিআইয়ের দাখিল করা কুড়ি পাতার আবেদনটি খুঁটিয়ে পড়েন। মিনিট দশেক পরে বিচারপতি সিবিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, মামলার প্রতিলিপি মদন মিত্রের আইনজীবীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়ে থাকলে তার প্রমাণ দাখিল করা হোক। সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে জানান, হাসপাতালে মদনবাবুর হাতে মামলার নথি পৌঁছে দিয়ে এসেছেন তদন্তকারী অফিসার।

বিচারপতি টন্ডন তা জেনে সিবিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, প্রতিলিপি পৌঁছনোর নিয়ম মদনবাবুর আইনজীবীর কাছে। কারণ, মামলার সওয়াল করবেন আইনজীবী। এর পরে বিচারপতি টন্ডন সিবিআইয়ের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন, নিয়ম মেনে মদনবাবুর আইনজীবীর হাতেই মামলার নথি দিতে হবে। এ-ও জানান, আগামীকাল, বৃহস্পতিবার অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হবে। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ সিবিআইয়ের তরফে মামলার নথি পৌঁছে দেওয়া হয় মদনবাবুর আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্যের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন