গণ্ডিতেই আটকে মদনের হাজিরা ও ঘরে ফেরা

প্রভাবশালীর মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরে তাঁর প্রার্থনা ছিল, ‘‘প্রভু, এ বার আমি বাড়ি ফিরতে চাই।’’ কিন্তু বৃহস্পতিবার, দ্বিতীয় দফার জামিনের সপ্তম দিনেও বাড়ি ফেরা হল না মদন মিত্রের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩২
Share:

প্রভাবশালীর মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরে তাঁর প্রার্থনা ছিল, ‘‘প্রভু, এ বার আমি বাড়ি ফিরতে চাই।’’

Advertisement

কিন্তু বৃহস্পতিবার, দ্বিতীয় দফার জামিনের সপ্তম দিনেও বাড়ি ফেরা হল না মদন মিত্রের। এ দিনও তাঁকে বাড়ির অদূরে, ভবানীপুর থানা এলাকার একটি হোটেলেই থাকতে হয়। নিজের ঘরে ফেরার জন্য তাঁকে আরও অন্তত এক দিন অপেক্ষা করতে হবে। আজ, শুক্রবার জামিনের শর্তের ব্যাপারে নিম্ন আদালতের নির্দেশ সংশোধনের আবেদন নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা। তার ফলাফলের উপরেই নির্ভর করছে এই সারদা-অভিযুক্তের ঘরে ফেরা।

শুধু যে মদনবাবুর বাড়ি ফেরা বিলম্বিত হচ্ছে তা-ই নয়। আদালতের নির্দেশের জেরে এ দিন সল্টলেকে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরেও হাজিরা দিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। কারণ, নিম্ন আদালতের দেওয়া জামিনের নির্দেশে মদনবাবুর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে ভবানীপুর থানা এলাকার মধ্যে। সেই নির্দেশের ফেরেই নিজের পাড়ায় ফিরেও বাড়ি ফেরা হয়ে উঠছে না এই প্রাক্তন মন্ত্রীর। বাড়ি ফিরতে হলে কিংবা সল্টলেকে তদন্তকারীদের সামনে হাজিরা দিতে হলে ওই বিশেষ থানা এলাকার গণ্ডি ডিঙোতেই হবে। এবং সেটা আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে অর্থাৎ নির্দেশ সংশোধন-সাপেক্ষে।

Advertisement

সমস্যাটা কোথায়?

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মদনবাবুকে ৯ সেপ্টেম্বর জামিন দেয় আলিপুর দায়রা আদালত। জেল থেকে তিনি মুক্তি পান পরের দিন, শনিবার। জামিনে আদালত যে-সব শর্ত দিয়েছে, তার অন্যতম হল, তিনি ভবানীপুর থানা এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না। মদনবাবুর বাড়ি ভবানীপুরে। সম্ভবত সেটা মাথায় রেখেই আদালত প্রাথমিক ভাবে এমন শর্ত আরোপ করেছিল বলে আইনজীবী শিবিরের ধারণা। কিন্তু বাস্তবে তাঁর বাড়ি ভবানীপুরে হলেও সেই বাসস্থানের অবস্থান ভবানীপুর থানা এলাকায় নয়। ওই বাড়ি পড়ে কালীঘাট থানা এলাকায়। দু’টি থানা এলাকাই পাশাপাশি। তবু আদালতের নির্দেশে আটকে গিয়েছে তাঁর বাড়ি ফেরা। আদালতের ওই নির্দেশ নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় জামিনে মুক্ত মদনবাবু বাড়ি না-ফিরে বাধ্য হয়েই ভবানীপুর থানা এলাকার একটি হোটেলে আশ্রয় নিয়েছেন।

এই অবস্থায় মদনবাবুকে বাড়ি ফিরতে হলে বা সিবিআইয়ের সামনে হাজিরা দিতে হলে আদালতের নির্দেশ সংশোধন করতে হবে। বৃহস্পতিবার আলিপুর দায়রা আদালতে তাঁর আইনজীবী পার্থ মুখোপাধ্যায় ও শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বিচারকের কাছে ওই নির্দেশ সংশোধনের আবেদন পেশ করেছেন। কৌঁসুলিরা জানান, ভবানীপুর থানা এলাকার বদলে মদনবাবুকে কালীঘাট থানা এলাকায় থাকতে দেওয়া হোক। একই সঙ্গে আইনজীবীদের বক্তব্য, প্রতি সপ্তাহে এক দিন মদনবাবুকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশ মানতে গেলে ভবানীপুর থানা এলাকায় গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত রাখার শর্ত মানা সম্ভব নয়। কারণ, সল্টলেকের ওই তদন্ত অফিসে হাজিরা দিতে হলে ভবানীপুর থানা এলাকা থেকে বেরিয়ে অন্য বেশ কয়েকটি থানা এলাকার উপর দিয়ে যেতে হবে মদনবাবুকে। এ দিনই তাঁকে সল্টলেকে ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই। দুপুরের পরে তাঁর সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালতে থানা-সীমানা লঙ্ঘন সমস্যার কোনও নিষ্পত্তি না-হওয়ায় তিনি সিবিআই দফতরে যেতে পারেননি।

আইনজীবীদের প্রশ্ন, শুধু একটি থানা এলাকায় গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হলে প্রাক্তন মন্ত্রী কী করে সল্টলেকে যাতায়াত করবেন? তিনি যাতে তদন্তকারীদের ডাকে হাজিরা দিতে পারেন, সেই জন্যও আদালতের নির্দেশ সংশোধন করা হোক। এ দিন মদনবাবুর কৌঁসুলিদের এই আবেদন নিয়ে কোনও শুনানি হয়নি। বার কাউন্সিলের এক সদস্যের মৃত্যুতে আলিপুর আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। শুক্রবার মদনবাবুর ওই আবেদনের শুনানি হতে পারে বলে আলিপুর আদালত সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন