ফের হাইকোর্টে সিবিআই

প্রভাবশালীর মন্দিরে পুজো ‘অভাবশালী’র

যারা তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, সেই সিবিআই আবার গেল উচ্চ ন্যায়ালয়ে। আর একই দিনে তিনি গেলেন দেবালয়ে।তিনি, মদন মিত্র মঙ্গলবার মন্দিরে পুজো দিয়ে, প্রার্থনা করে ভরসা রাখলেন ভগবানের উপরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

মদনের প্রার্থনা। মঙ্গলবার ভবানীপুরে বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

যারা তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, সেই সিবিআই আবার গেল উচ্চ ন্যায়ালয়ে। আর একই দিনে তিনি গেলেন দেবালয়ে।

Advertisement

তিনি, মদন মিত্র মঙ্গলবার মন্দিরে পুজো দিয়ে, প্রার্থনা করে ভরসা রাখলেন ভগবানের উপরে। আর সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মদনবাবুর জামিন খারিজের আবেদন জানিয়ে এ দিন কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করল সিবিআই।

আদালতের নির্দেশ যা-ই হোক, মদনবাবু যে এখনও আমজনতার কৌতূহলের কেন্দ্রে, এ দিন তিনি রাস্তায় নামতেই তার প্রমাণ মিলেছে পদে পদে। তাঁকে দেখতে পথচলতি কৌতূহলী মানুষজন তো দাঁড়িয়ে পড়েছেনই। এমনকী সিগন্যালের সবুজ আলো পথ ছেড়ে দেওয়া সত্ত্বেও দাঁড়িয়ে যায় গাড়ির পর গাড়ি। সেই গাড়ির লাইনে দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার দুই সদস্যকেও। সেই সঙ্গে আশপাশের দোকানপাটও প্রায় ফাঁকা হয়ে ভিড় নেমে আসে রাস্তায়। নিম্ন আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পেয়ে মদনবাবু জেল থেকে বেরিয়েছেন শনিবার সকালে। তার পরে টানা তিন দিন হোটেলবন্দি ছিলেন। স্থানীয় একটি মন্দিরে পুজো দেবেন বলে এ দিন দুপুরে হোটেল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই সেখানে পৌঁছে যান। সঙ্গে ছিল তাঁর ‘ট্রেড মার্ক’, জনা চল্লিশ অনুগামী। ভিড়ও চলে সঙ্গে সঙ্গে।

Advertisement

হাতে মোবাইলের বদলে ফুলের মালা। পরনে লাল পাঞ্জাবি। বেলা দেড়টার একটু পরে রাধামাধব আর হনুমান মন্দিরে পৌঁছেই মন্ত্র পড়তে শুরু করেন প্রাক্তন মন্ত্রী। পূজারি তাঁর কপালে কমলা টিকা পরানোর পরেই মুখ খুললেন মদনবাবু। এবং বোঝা গেল, দীর্ঘদিনের আইনি টানাপড়েনে নাস্তানাবুদ হতে হতেও ঈশ্বরে আস্থা টলেনি তাঁর। সর্বোপরি রসবোধ হারাননি এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মন্ত্রী মদনবাবু। এত দিন তাঁর জামিনের অন্যতম প্রধান অন্তরায় ছিল তদন্তকারী সংস্থার একটি বক্তব্য: তিনি বিষম প্রভাবশালী।

প্রকৃত প্রভাবশালী যে ঈশ্বর, সেই পরম বিশ্বাসে স্বভাবসিদ্ধ রসবোধ থেকেই এ দিন নিজেকে ‘অভাবশালী’ বলে উল্লেখ করেন মদনবাবু। মহাকাব্য আর পুরাণকে সাক্ষ্য মেনে তিনি বলেন, ‘‘এক অভাবশালী ব্যক্তি প্রভাবশালীর কাছে এসেছিল। সেই প্রভাবশালীর কাছে, যিনি লঙ্কা শেষ করে দিতে পারেন আবার যিনি কংসকে বধ করতে পারেন। উনিই আমাকে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগাবেন।’’

পুজো দিয়ে মদনবাবু ফিরে যান হোটেলে। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান নাতি আর স্ত্রী। নাতির সঙ্গে দেখা হতেই উপরের দিকে তাকিয়ে মদনবাবুর স্বগতোক্তি, ‘‘প্রভু, এ বার আমি বাড়ি ফিরতে চাই।’’

দু’দফায় প্রায় একুশ মাস জেলে ছিলেন সারদা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত মদনবাবু। এই সময়ের মধ্যে পরিবহণ আর ক্রীড়া, দুই দফতরেরই মন্ত্রিত্ব গিয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনেও হেরেছেন। তবু মদনবাবুর জনপ্রিয়তা যে টাল খায়নি, এ দিন সেটা বোঝা গেল রাস্তায়, মন্দিরে। যে-মন্দিরে তিনি গিয়েছিলেন, সেখানে সংস্কার চলছে। স্বল্প পরিসরেই তাঁকে নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। যাঁকে নিয়ে এত উৎসাহ, সেই ভিড়ের ব্যাপারে অবশ্য নির্বিকারই ছিলেন মদনবাবু। পুজোর আচারে এবং সর্বশক্তিমানের উদ্দেশে প্রার্থনায় তদ্গত দেখিয়েছে তাঁকে।

নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়ে মদনবাবু শনিবার সকালে জেল থেকে বেরোনোর পরেই সিবিআই জানিয়েছিল, ওই রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে যাবে। সেই অনুসারে এ দিন হাইকোর্টে জামিন খারিজের আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বলেছে, মদনবাবু এখন মন্ত্রী বা বিধায়ক না-হলেও রাজ্যের শাসক দলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তা ছাড়া নিম্ন আদালতের নির্দেশে এক বারও উল্লেখ করা হয়নি, কোন কোন যুক্তিতে হাইকোর্ট গত বছর মদনবাবুর জামিন খারিজ করে দিয়েছিল।

এ দিন বিকেলে উচ্চ আদালতে মামলার আবেদনের প্রতিলিপি এলগিন রোডের হোটেলে মদনবাবুর কাছে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন সিবিআইয়ের প্রতিনিধিরা। এই নিয়ে সেখানে টানাপড়েন চলে দু’পক্ষের মধ্যে। মদনবাবুর আইনজীবীরা আবেদনের প্রতিলিপি নিতে অস্বীকার করেন। দু’পক্ষে কথা কাটাকাটি হয়। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আবেদনের প্রতিলিপি না-দিয়েই ফিরে যান সিবিআই অফিসারেরা। আবেদনের প্রতিলিপি গ্রহণ করা হল না কেন?

মদনবাবুর আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্যের বক্তব্য, সিবিআই জামিন খারিজের আর্জি জানিয়েছে হাইকোর্টে। বিষয়টি তো উচ্চ আদালত এখনও গ্রহণই করেনি। ‘‘উচ্চ আদালত বিষয়টি গ্রহণ করে কোনও নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত আমরা সিবিআইয়ের আবেদনের প্রতিলিপি গ্রহণ করব না,’’ বলেন নীলাদ্রিবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন