অচেনা কাউকে দেখলেই জানাতে নির্দেশ পুলিশকর্তার

দুপুর ১টা। মহদিপুর সীমান্তে এসে পৌঁছলেন উত্তরবঙ্গের এডিজি (উত্তরবঙ্গ) এন রমেশবাবু। এগিয়ে গেলেন কাঁটাতারের বেড়ার দিকে। সঙ্গে জেলার পুলিশ অফিসারেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৪
Share:

সীমান্তের বাসিন্দাদের সঙ্গে এডিজি (উত্তরবঙ্গ) এন রমেশ বাবু (বাঁ দিকে)। — নিজস্ব চিত্র

দুপুর ১টা। মহদিপুর সীমান্তে এসে পৌঁছলেন উত্তরবঙ্গের এডিজি (উত্তরবঙ্গ) এন রমেশবাবু। এগিয়ে গেলেন কাঁটাতারের বেড়ার দিকে। সঙ্গে জেলার পুলিশ অফিসারেরা।

Advertisement

কাঁটাতারের বেড়ার কাছে টহলদারিতে থাকা বিএসএফ জওয়ানদের ডেকে এডিজি প্রশ্ন করলেন, ‘‘ইংরেজবাজার থানার আইসিকে আপনারা চেনেন? আগে কখনও দেখেছেন।’’

প্রশ্ন শুনে জওয়ানদের চোখেমুখে বিস্ময়ের ছাপ। এক জওয়ান উত্তর দেন, ‘‘হ্যাঁ, স্যার। আইসিকে চিনি।’’

Advertisement

আইজি-র সঙ্গেই ছিলেন আইসি বিপুল বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তাঁর দিকে ফিরে রমেশবাবু প্রশ্ন করেন, ‘‘শেষ কবে সীমান্তে এসেছেন।’’

আইসি জানালেন, সপ্তাহখানেক আগে। উত্তর শুনে আইজি-র নির্দেশ ‘‘নিয়মিত সীমান্ত পরিদর্শন করবেন।’’

তারপরেই গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসা করেন, পুলিশের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ কেমন? কেউ বললেন, পুলিশকে কিছু জানাতে গেলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এডিজি এন রমেশবাবু সে কথা শুনে গ্রামবাসীদের আশ্বাস দেন, পুলিশ তাঁদের পাশেই থাকবে। গ্রামবাসীদের তিনি বলেন, ‘‘অচেনা লোক দেখলেই পুলিশকে জানাবেন। নম্বর নিয়ে নিন।’’

সীমান্তের দায়িত্ব যাকা বিএসএফের ২৪ ব্যাটালিয়নের অ্যাসিট্যান্ট কমান্ড্যান্ট এস পি ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করেন এডিজি। নজরদারিতে বিএসএফকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি।

ঢাকায় জঙ্গিহানার পরে রাজ্য পুলিশকেও সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর থেকেই মহদিপুর সীমান্তে শুরু হয়েছে পুলিশের সক্রিয়তা। এ দিন দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদীকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্ত এলাকাবর্তী গ্রামগুলি পরিদর্শনে যান এডিজি। মহদিপুর সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কালিয়াচকের চৌরি অনন্তপুরের দুইশত বিঘি গ্রামে যান তিনি। চৌরি অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে দেদার জালনোট, মাদক পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, সীমান্তের ওপার থেকে এ দিকে মাদক কিংবা জালনোট ছুড়ে দেওয়া হয়। এ দিন সেই এলাকায় পরিদর্শন করেন এডিজি। ওই গ্রামে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে শতাধিক পরিবারের বসবাস করেন। তাঁদের দিনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাঁটাতার বেড়া পারাপারের ছাড়পত্র দেন বিএসএফ জওয়ানেরা। এন রমেশবাবু ওই এলাকায় গিয়ে কথা বলতে চান গ্রামবাসীদের সঙ্গে। কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানেরা গেটের তালা খুলে দেন। বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীকে কথা বলার জন্য ডেকে নেন তিনি। এডিজি এ দিন কথা বলেছেন সেরাজুল ইসলাম, মিয়াজুল মিঞার সঙ্গে। তাঁদের এডিজি প্রশ্ন করেন, ‘‘রাতের দিকে বহিরাগতেরা কি যাতায়াত করেন।’’

সেরাজুল, মিয়াজুলেরা জানান, ‘‘আমরা তেমন কাউকে দেখতে পাইনি।’’ তখনই অজ্ঞাতপরিচয় কাউকে দেখলেই পুলিশ কিংবা বিএসএফকে জানানোর পরামর্শ দেন তিনি। পুলিশের বড় কর্তাকে কাছে পেয়ে নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন গ্রামবাসীরাও। কাঁটাতারের এ পারের বাসিন্দা পেশায় চাষি আজাহার মিঞা, ইনজামাম হোসেনেরা বলেন, ‘‘সাহেব আমরা যেন জেলখানায় বাস করছি। সময় মতো গেট পারাপার করতে না পারলে আটকে থাকতে হয় আমাদের।’’ অভিযোগ শুনে হতবাক হয়ে যান এডিজি এন রমেশ বাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন