কুণাল-কটাক্ষে একই আসনে মমতা ও সুদীপ্ত

আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। এ বার আদালতের বাইরে তির্যক মন্তব্য করে তৃণমূলের উত্থানের মূল কান্ডারি হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে একাসনে বসিয়ে দিলেন কুণাল ঘোষ! সুদীপ্ত কলকাতা ছেড়ে পালানোর পরে তাঁর মিডিয়া ব্যবসা চালানোর টাকা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বিলি হত বলে কুণাল আগেই জানান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৩:২৯
Share:

বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে কুণাল ঘোষ। — নিজস্ব চিত্র।

আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন।

Advertisement

এ বার আদালতের বাইরে তির্যক মন্তব্য করে তৃণমূলের উত্থানের মূল কান্ডারি হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে একাসনে বসিয়ে দিলেন কুণাল ঘোষ!

সুদীপ্ত কলকাতা ছেড়ে পালানোর পরে তাঁর মিডিয়া ব্যবসা চালানোর টাকা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বিলি হত বলে কুণাল আগেই জানান।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস মামলার শুনানির পরে বেরোনোর পথে কুণালের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যে তৃণমূলের ভিত গড়ার কান্ডারি ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুদীপ্ত সেন। তৃণমূলের ক্ষমতায় গৃহপ্রবেশের পূজারি ছিলেন সুদীপ্ত।’’

এই তির্যক মন্তব্য শুনে অনেকে বলছেন, ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই যে তৃণমূলের সঙ্গে সারদার ঘনিষ্ঠতা ছিল, সেই ইঙ্গিতই এ দিন দিয়েছেন তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া রাজ্যসভার সদস্য কুণাল।

কুণালের এ দিনের কটাক্ষ বিঁধেছে পুরভোটে শাসক দলের বিপুল জয়কেও। তৃণমূলের জয়ে তিনি খুশি, এই দাবি করে ধৃত সাংসদের মন্তব্য, ‘‘২০১১ সালে মা-মাটি-মানুষের সরকারের ভিত আরও গভীর ছিল!’’ কুণালের ওই মন্তব্যের পরে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি অবশ্য এর কোনও উত্তর দেননি।

আদালতের বাইরে তো বটেই, ভিতরেও এ দিন নানা অভিযোগ করেছেন কুণাল। ধর্মঘটের জন্য বৃহস্পতিবার নগর দায়রা আদালতে কোনও আইনজীবী হাজির ছিলেন
না। তাই নিজেই আদালতে সওয়াল করার জন্য লিখিত আবেদন জানান কুণাল। কোনও আইনজীবী না-থাকায় এ দিন সারদা-প্রধান সুদীপ্ত সেন এবং ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের হয়ে কেউ সওয়াল করেননি।

মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই অবশ্য কুণালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী হাজির হন। শেষ পর্যন্ত তিনিই কুণালের হয়ে সওয়াল করেন। অয়নবাবু বলেন, সিবিআই এখনও তদন্ত শেষ করেনি। অথচ চার্জ গঠনের আর্জি জানাচ্ছে। সিবিআই তদন্ত শেষ না-করে কেন চার্জ গঠনের জন্য তড়িঘড়ি করছে, সেই প্রশ্ন তোলেন কুণালের আইনজীবী। সারদা সংবাদমাধ্যমের ছ’টি চ্যানেল ও সংবাদপত্রের সিইও ছিলেন কুণাল। কিন্তু তা ছাড়াও আরও বেশ কিছু পত্রিকা, চ্যানেল ও সংবাদপত্রের কর্তারা ছিলেন। তাঁদের কেন জেরা বা গ্রেফতার করা হল না, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। অয়নবাবুর বক্তব্য, কুণাল সিবিআই-কে এ ব্যাপারে সব তথ্য দিয়েছিলেন। কিন্তু সিবিআই সেগুলো নিয়ে কিছুই করেনি। কুণাল বলেন, ‘‘আমি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে সারদায় যোগ দিই। তার আগেও তো কেউ সারদার সংবাদমাধ্যমের শীর্ষ কর্তা ছিলেন। তাঁকে কেন ধরা হল না?’’

নিজের শারীরিক অসুস্থতার প্রসঙ্গ তুলে কুণাল জানান, হাজিরার দিনগুলিতে তাঁকে একটু দেরিতে আদালতে আনলে সুবিধে হয়। কারণ হিসেবে ওই অভিযুক্তের বক্তব্য, তাঁর স্নায়ুর সমস্যা এবং হাড়ের ব্যথা রয়েছে। সাধারণ ভাবে সারদা মামলার শুনানি বেলা দেড়টার পরে শুরু হয়। অথচ তাঁকে জেল থেকে আদালতে আনা হয় বেলা ১১টা নাগাদ। দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকার ফলে তাঁর শারীরিক সমস্যা হয়। বিচারকের কাছে কুণালের আবেদন, যাতে অত ক্ষণ বসে থাকতে না-হয়, সেই জন্য তাঁকে কিছু দেরিতে আদালতে আনার নির্দেশ দেওয়া হোক। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘গত কাল (বুধবার) হাড়ের ব্যথার জন্য এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে এক জন অস্থিরোগ-বিশেষজ্ঞকে ডাকতে বলেছিলাম। কিন্তু পাঠানো হল মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে!’’ তবে চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়ে কোনও অভিযোগ জানাননি ওই সাংসদ।

সিবিআইয়ের আইনজীবী রামস্বরূপ ঝা জানান, প্রাথমিক তদন্তে কুণালদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি মেনে সেই চার্জশিটের ভিত্তিতে চার্জ গঠন করা যাবে কি না, সেটা আদালত ঠিক করবে। তদন্ত এখনও চলছে। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ হতে পারে।

নগর দায়রা আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র এ দিন সিবিআই-কে নির্দেশ দেন, সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস মামলায় দ্রুত চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ করতে হবে। তবে কুণালের জামিন এবং জেল থেকে দেরিতে আদালতে আনার আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। কুণাল, সুদীপ্ত ও দেবযানীকে ফের জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৪ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন এই মামলার চার্জ গঠনও হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন