মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
আদিবাসী ক্ষোভ সামলে জঙ্গলমহলের শান্তিরক্ষায় উন্নয়নই যে তাঁর হাতিয়ার, তা ফের স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক বৈঠকে আমলা-মন্ত্রীদের ধমক, দায়িত্বে রদবদলের পরদিনই প্রশাসনিক জনসভায় মমতা বুঝিয়ে দিলেন, জঙ্গলমহল জুড়ে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ আগামী দিনেও চলবে। আর জঙ্গলমহলবাসীর কাছে তাঁর আবেদন, “জঙ্গলমহলের শান্তি রক্ষা করতে হবে। আমি আপনাদের পাশে বন্ধু হিসেবে থাকব।”
বুধবার ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ মাঠে ছিল মমতার প্রশাসনিক জনসভা। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঝাড়গ্রামে ১৭তম এই প্রশাসনিক জনসভায় আদিবাসীদের জন্য তাঁর সরকার কত কাজ করেছে, নানা খতিয়ানে তা তুলে ধরেন তিনি। জনসভা থেকে ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ২০৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ২৯৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার ২৬৫টি প্রকল্পের শিলান্যাস করে তিনি জানান, আদিবাসী, মূলবাসী-সহ জঙ্গলমহলের সব মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে নানা পরিষেবা দিয়ে সাধ্যমতো উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছে তাঁর সরকার। বিজেপি-র নাম না করেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা আদিবাসী-দলিত ভাগাভাগি করি না। গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যে দলিতদের পিটিয়ে মারা হয়। আর আমরা বাংলায় আদিবাসী-দলিত-সংখ্যালঘুদের বুকে আগলে রাখি।”
পরে অবশ্য বিজেপি-র নাম করেই কটাক্ষ করেছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, দিল্লির গেরুয়া সরকার সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে, ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে, জঙ্গলমহলে তাঁর সরকার আদিবাসীদের উপাসনাস্থল জাহের থানের পাট্টা দিচ্ছে, আদিবাসী ভাষায় পঠনপাঠন ও উচ্চশিক্ষার প্রসারে কাজ করছে। আগামী পাঁচ বছরে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়স্তরে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার আশ্বাসও দেন মুখ্যমন্ত্রী। আর ঝাড়গ্রামকে তাঁর পুজোর উপহার— আগামী দিনে জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার ঘোষণা।
স্থানীয় একটি স্কুল নিয়ে আদিবাসী সমাজের নালিশ থেকে হুল দিবসের অনুষ্ঠান বয়কট, কুড়মালি সমাজের অবরোধ-সহ জঙ্গলমহলে আদিবাসী ক্ষোভ-বিক্ষোভের নানা ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। এই অবস্থায় নতুন জেলা ঝাড়গ্রামের প্রথম প্রশাসনিক বৈঠকে মঙ্গলবার বারবার মেজাজ হারিয়েছিলেন মমতা। স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, মানুষের মন বুঝতে স্থানীয় প্রশাসন ও তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রীরা ব্যর্থ। তারপর কড়া সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকের মাথায় তিনি বসিয়ে দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসককে। পাশাপাশি অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোকে বিস্তর ধমকে তৃণমূল জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
সেই সূত্রেই ভিড়ে ঠাসা জনসভায় এ দিন মমতা মনে করিয়ে দেন, ঝাড়গ্রামে মাওবাদী নাশকতার পুরনো কথা। সে প্রসঙ্গে বহু দিন বাদে ঝাড়গ্রামের জনসভায় মাওবাদী শব্দটিও উচ্চারণ করেন তিনি। ঝাড়খণ্ড সীমানায় মাওবাদীদের তত্পরতা এখন বাড়ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। আদিবাসীদের ক্ষোভ উস্কে জঙ্গলমহলে অশান্তির ছক কষা হচ্ছে বলেও আশঙ্কা প্রশাসনের।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিন সাফ জানিয়ে দেন, উস্কানি দিয়ে জঙ্গলমহলে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা হলে তাঁর সরকার কড়া হাতে দমন করবে। তারপর সাঁওতালিতে জঙ্গলমহলবাসীর কাছে তাঁর আবেদন, “আপে সানামকগে নাপায় তাঁহেন পে, শান্তিতে তাঁহেন পে। জঙ্গলমহল জিত্কার।” (আপনারা সবাই ভাল থাকুন, শান্তিতে থাকুন। জঙ্গলমহল জিন্দাবাদ।)