ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
লক্ষ্য বিধানসভা নির্বাচন। তাই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সফরে এসেই দলের নেতাদের বাড়তি দায়িত্ব দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের জেলা ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকে ফের জানিয়ে দিলেন, কোনও ‘গোষ্ঠীবাজি’ চলবে না। দলে প্রত্যেকের সমান অধিকার। এ দিন দলের কয়েকটি পদে রদ বদলেরও ইঙ্গিত দেন নেত্রী। সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরারও নির্দেশ দেন তিনি।
দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতির পদ থেকে রমাপ্রসাদ গিরিকে সরিয়ে তাঁকে জেলা যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক করার কথা বলেছিলেন মমতা। পরে অবশ্য মত বদলান নেত্রী। রমাপ্রসাদকে টিএমসিপি-র জেলা সভাপতির পদে রেখে দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। জেলা যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি লোকেশ করকে জেলা যুব সাধারণ সম্পাদক করা হল।
মঙ্গলবার বাঁকুড়া থেকে সড়ক পথে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে মমতা যখন পৌঁছন তখন ঘড়িতে সন্ধে সওয়া ছ’টা। রাজবাড়িতে ঢোকার আগে কনভয় থামিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, ‘আজ কোনও দলীয় বৈঠক নেই।’ যদিও মমতা রাজবাড়িতে পৌঁছনোর আগেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়-সহ জেলার সমস্ত নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা রাজবাড়িতে ভিড় করেন। রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে ঢুকে অতিথিশালায় তাঁর নির্দিষ্ট ভিআইপি স্যুইটে না গিয়ে সামিয়ানা ঘেরা প্রাঙ্গণে দলের নেতা-নেত্রীদের নিয়ে এক ঘন্টা ঘরোয়া বৈঠক করেন মমতা।
ঝাড়গ্রাম শহরে দলের গোষ্ঠী রাজনীতির অবস্থান বোঝার জন্য ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান তথা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক দুর্গেশ মল্লদেবের কাছে মমতা জানতে চান, দলের ঝাড়গ্রাম শহর সভাপতি প্রশান্ত রায়ের সঙ্গে কাজ করতে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি-না। দুর্গেশবাবু জানিয়ে দেন, কোনও সমস্যা নেই। দলের অন্দরে পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতাদের উদ্দেশে এ দিন মমতার বার্তা, “নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে ফেলুন। সবাই মিলে একসঙ্গে দলের কাজ করুন। বিধানসভায় ১৯টি আসনে এখন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ুন।” এরপরই মমতা ওই বৈঠকে দলের নেতাদের বিধানসভা ভিত্তিক দায়িত্ব বন্টন করে দেন। দলীয় সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম মহকুমার ঝাড়গ্রাম, বিনপুর, গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রাম এই চারটি বিধানসভার সার্বিক দায়িত্বে থাকছেন আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক দুর্গেশ মল্লদেব, গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো ও নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু। নয়াগ্রাম ব্লক তৃণমূলের সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত’কে গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সাংগঠনিক কাজ করার নির্দেশ দেন নেত্রী। জেলা পরিষদের দলনেতা অজিত মাইতিকে সবং, পিংলা ও খড়্গপুর গ্রামীণ বিধানসভার সংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষকে নারায়ণগড়, দাঁতন ও কেশিয়াড়ির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা তৃণমূলের অন্যতম কার্যকরী সভাপতি হয়েছেন শ্যাম পাত্র। শ্যামবাবু দেখবেন ঘাটাল ও দাসপুর। ১৯টি বিধানসভার মধ্যে ১৮টির দায়িত্ব বন্টন করে দিলেও খড়্গপুরের দায়িত্ব অবশ্য কাউকে দেননি মমতা।
মমতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলায় দলের আইনি সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখবেন জেলার আর এক কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ। পাশাপাশি, ঘাটাল মহকুমার সাংগঠনিক দায়িত্বও সামলাবেন প্রদ্যোত্বাবু। জেলার আর এক কার্যকরী সভাপতি আশিস চক্রবর্তীকে চন্দ্রকোনা, গড়বেতা ও কেশপুরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দুই বিধায়ক মৃগেন মাইতি ও রাধাকান্ত মাইতিকে শালবনি ও ডেবরার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুর শহরের দলীয় সাংগঠন যৌথ ভাবে দেখবেন মৃগেনবাবু ও মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু।