কথা ছিল শুক্রবার বিধানসভায় আলোচনা হবে পঞ্চায়েত দফতরের বাজেট নিয়ে। সেই মতো আলোচ্যসূচির কাগজও বিলি হয়ে গিয়েছিল বিধায়কদের মধ্যে। কিন্তু সেই দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় আসতে চান। তাঁর ইচ্ছা, ওই দিনই তাঁর হাতে-থাকা পুলিশ দফতরের বাজেট নিয়ে আলোচনা সেরে ফেলা হোক!
বিধানসভায় এই মর্মে তোড়জোড় শুরু হতেই আপত্তি তুলতে শুরু করেছে বিরোধী শিবির। তাদের প্রশ্ন, যখন যেমন ইচ্ছা বিধানসভার সূচি পাল্টানোর প্রবণতা বন্ধ হবে কবে?
বিধানসভায় আজ, বুধবার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকেই শুক্রবারের আলোচ্য বাজেটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর ইচ্ছার কথা পরিষদীয় দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবারই। ঠিক ছিল, আজই বিধানসভায় নিজের ঘরে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন মমতা। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঠিক হয়েছে, যে হেতু শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় আসবেন, তাই কংগ্রেসের সঙ্গে বৈঠক হবে সে দিনই। প্রসঙ্গত, বিধানসভায় শুক্রবার দিনটিই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট।
মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাঁর হাতে-থাকা গুরুত্বপূর্ণ দফতরের বাজেট আলোচনা হবে, এতে বিরোধীদের আপত্তির কিছু নেই। তাদের প্রশ্ন অন্য জায়গায়। এ বার দফাওয়াড়ি বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে সর্বদল বৈঠকে বিরোধীরা স্পিকারের কাছে দাবি জানিয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীকে অধিবেশনের নির্ধারিত সূচি মেনেই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে, বাজেট বিতর্কে উত্তর দিতে হবে। খেয়াল-খুশিমতো সূচি পাল্টে নেওয়া চলবে না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটাই হওয়ার ইঙ্গিত মিলতেই বেঁকে বসছে বিরোধীরা। কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকের আগে এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তবে বাম শিবিরের এক বর্ষীয়ান বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘শুক্রবার পঞ্চায়েত বাজেট হবে বলে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তখন হঠাৎ পুলিশ বাজেট চাপিয়ে দিলে অসুবিধা তো হবেই! রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে। তার জন্য প্রস্তুতির সময় কেন দেওয়া হবে না বিধায়কদের?’’
আলিমুদ্দিনে আজ সিপিএমের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক। তার পরে বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাজ্য কমিটির বৈঠক। সেই কারণে ওই কয়েক দিন বিধানসভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন সূর্যবাবু। তাঁর জমা দেওয়া প্রশ্ন গৃহীত হলে তা পরের সপ্তাহে পিছিয়ে দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও সরকার পক্ষ পুলিশ বাজেট হঠাৎ শুক্রবারই স্থির করতে চাওয়ায় ক্ষুব্ধ বাম শিবির। এক সিপিএম বিধায়কের কথায়, ‘‘শেষ পর্যন্ত পুলিশ বাজেট এগিয়ে এলে বুঝতে হবে, বিরোধী দলনেতা সভায় থাকবেন না জেনেই সুযোগ নেওয়া হচ্ছে!’’
সূচি ভেঙে বাজেটের দিন রদবদলে আপত্তি আছে কংগ্রেসেরও। তাদেরও প্রশ্ন, সাংবিধানিক রীতিনীতিকে মান্যতা দেওয়ার রেওয়াজ কি উঠেই গেল? কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব বা বর্যীয়ান বিধায়ক মানস ভুঁইয়া অবশ্য এ নিয়ে এ দিন প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তাঁদের বক্তব্য, কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে কী হয় দেখে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
রাজ্যে গত দু’মাসে আত্মঘাতী ১৯ জন আলুচাষির পাশে রাজ্য সরকার কেন দাঁড়াচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলে এ দিন মুলতবি প্রস্তাব এনেছিল কংগ্রেস। আলোচনার প্রস্তাব খারিজ হওয়ায় ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়ে কক্ষত্যাগ করেন কংগ্রেস বিধায়কেরা। পরে মানসবাবু বলেন, ‘‘এখানে বিষমদে মারা গেলে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ মেলে। কিন্তু আত্মঘাতী ১৯ জন আলুচাষির পরিবারের জন্য রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করল না!’’ ধান-সহ কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য দাবি করে মুলতবি প্রস্তাব খারিজ হওয়ায় কক্ষত্যাগ করেন বাম বিধায়কেরাও।