টাকা ছড়িয়ে দাঙ্গা বাধায় বিজেপি-ই: মমতা

দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই অঞ্চলে গত কয়েকমাসে বার বার গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘরছাড়া হয়েছেন অনেকেই। পুড়েছে বাড়িঘর। কোথাও কোথাও তার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের কারও কারও নাম।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক গোসাবা

গোসাবা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৫
Share:

সস্নেহে: গোসাবার সভায় মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

রাজ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ বিষিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি। সে জন্য তারা ‘গো-মাংস’ রাজনীতি থেকে দাঙ্গা বাধানোর ছকও কষছে বলে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায় অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি সুন্দরবনের সীমান্তে এসে সাধারণ মানুষকে জঙ্গি অনুপ্রবেশ নিয়েও সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়,‘‘অচেনা-অজানাদের নিয়ে সাবধান থাকুন। এরা বন্ধু সেজে আসে। তারপর সর্বনাশ করে যায়।’’

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই অঞ্চলে গত কয়েকমাসে বার বার গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঘরছাড়া হয়েছেন অনেকেই। পুড়েছে বাড়িঘর। কোথাও কোথাও তার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের কারও কারও নাম। ঘটনার দায় এক গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা অন্যদের নামে চাপিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছিলেন বলেও সরকারের কাছে খবর রয়েছে। সেই সূত্রেই এ দিনের সভায় তৃণমূল নেতাদেরও সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের এক হয়ে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মমতা বলেন,‘‘আমি একদম ঝগড়াঝাটি পছন্দ করি না। নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি করবেন না, বরং প্রতিযোগিতা করুন।’’ পরক্ষণেই তিনি বলেন, ‘‘গোবিন্দ নস্কর, জয়ন্ত নস্কর, সওকত মোল্লা ঝগড়া ছাড়ুন। ঝগড়ায় ‘মাথার ব্রেন’ কাজ করে না। ব্রেনকে পজিটিভ কাজ করাতে হবে। এটাই আমার নির্দেশ। আমার কাজ উন্নয়ন করা।’’

আরও পড়ুন: মুকুল-বাবুলের তিরে ফের অভিষেক, পাল্টা হুমকি মামলার

Advertisement

কী ভাবে তিনি উন্নয়ন করছেন তাও বিস্তারিত জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়,‘‘জন্ম থেকে মৃত্যু জীবনের সব স্তরের জন্য প্রকল্প তৈরি করে দিয়েছি। ছ’বছরে ৮১ লক্ষ মানুষকে চাকরি দিয়েছি।’’ সম্প্রতি আর্থ-সামাজিক সমীক্ষায় রাজ্যে আড়াই লক্ষ মানুষের বার্ধক্য ও পরিবার সহায়তা ভাতা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার জন্য বছরে ২৬৮ কোটি টাকা প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী গোসাবায় ঘোষণা করেন,‘‘কেন্দ্র সব বন্ধ করে দিচ্ছে। দরকার নেই দিল্লির, রাজ্যই ২৬৮ কোটি টাকা দিয়ে দেবে। একজনেরও ভাতা বন্ধ হবে না।’’

ভাতা বন্ধ না করলেও দাঙ্গা বা উগ্রপন্থা বন্ধে বাংলাদেশ সীমান্তে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী। সরকারের কাছে খবর এসেছে, দুই ২৪ পরগনার সীমান্তে ভিন রাজ্য থেকে বহু লোক ঢুকেছে। তারা টাকা ছড়াচ্ছে। কখনও মাংস খাইয়ে কখনওবা প্ররোচনা দিয়ে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা হচ্ছে। মমতা বলেন,‘‘বিজেপি টাকা ছড়িয়ে ষড়যন্ত্র করে দাঙ্গা লাগানোর চক্রান্ত করছে। ওদের ফাঁদে পা দেবেন না। আপনার ঘরে অশান্তির আগুন ধরিয়ে দেবে। ওরা মিষ্টি দেবে এক ঝুড়ি, কিন্তু নিয়ে যাবে ভূরি ভূরি।’’

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য তাঁর সরকারের ভূরি ভূরি দেওয়ার কথাই বলেছেন। উন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকার যখন ব্যাঙ্কের সঞ্চয়ের, ফিক্সড ডিপোজিটের সুদ কমাচ্ছে, গরিব মানুষের পেটে লাথি মারছে তখন রাজ্য সরকারই একমাত্র গরিবের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। যা শুনে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা বলেন,‘‘আমরা কোথাও দাঙ্গায় মদত দিই না। মুখ্যমন্ত্রী তোষণের যে রাজনীতি করছেন তার ফলেই গ্রামে গ্রামে দাঙ্গা হচ্ছে। আর নরেন্দ্র মোদী সরকারই হল প্রকৃত গরিব-বন্ধু সরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন