মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ মামলায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির তৎপরতার মধ্যেই বিজেপির উদ্দেশে ফের একবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর হুঙ্কার, ‘‘সবাইকে সিবিআই আর ইডি-তে পাঠাবে! দেখব, কত জেল আছে তোমাদের (বিজেপি)।’’
কুস্তিগিরদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বুধবারই পথে নেমেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বৃহস্পতিবার তাকে বিজেপি- বিরোধী সামগ্রিক লড়াইয়ের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কাউকে তো বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে হবে। আমরা রাস্তায় থাকব।’’ সেই প্রসঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ লড়াই ক্রীড়াবিদদের স্বাধীনতার লড়াই। আমাদের স্বাধীনতার লড়াই।’’
এই হুঙ্কারের জবাবে মমতার উদ্দেশে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপিও। রাজ্য দলের প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘‘যেখানে তিনি ওই বক্তৃতা করেছেন, তার পাশেই চাকরিপ্রার্থীরা অবস্থান করছেন। তাঁদের জন্য ওঁর কোনও সহানুভূতি নেই?’’ ইডি-সিবিআই প্রসঙ্গে শমীকের সংযোজন, ‘‘নিয়োগ-সহ নানা দুর্নীতির তদন্ত এখানে হচ্ছে আদালতের নির্দেশে। ইডি, সিবিআই আদালতকে রিপোর্ট দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্তদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন আর বিজেপিকে দোষারোপ করছেন!’’
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। তারপর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থার প্রাক্তন কর্মী সুজয়ের সঙ্গে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বের যোগাযোগের অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। সেই সূত্রেই অভিষেক এবং মমতাকেও নিশানা করেছে তারা। এই প্রেক্ষাপটে এ দিন কুস্তিগিরদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘‘এ ভাবে চলবে না। কাউকে তো প্রতিবাদ করতেই হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বেঁচে আছি। আমরা প্রতিবাদ করব।’’
নিগ্রহের প্রতিবাদে দিল্লিতে আন্দোলনরত কুস্তিগিরদের সমর্থনে এ দিন ধর্মতলায় গোষ্ঠ পালের মূর্তির নীচে প্রতিবাদ সভায় যোগ দেন মমতা। সেখানে রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো নিয়েও তোপ দেগেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখানে কিছু না পেলেও ১৫০টা টিম পাঠিয়ে দিয়েছে। আর বিজেপি রাজ্যে ঘটনা ঘটলে চুপ!’’ তাঁর অভিযোগ, বিজেপি সে সব ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমকেও ‘ধমকে, চমকে’ ভয় দেখিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ওয়ান ল’ ওয়ান নেশনের কথা বলে (বিজেপি)! তা হলে এ ক্ষেত্রে অন্য আইন কেন?’’
পরে গান্ধী-মূর্তি পর্যন্ত পদযাত্রা সেরে মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাচক্রে নিরাপত্তারক্ষীর মোটরবাইকে চড়ে কালীঘাটের বাড়িতে ফিরে যান মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী নেত্রী হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিতে মমতাকে এ ভাবে দেখা গিয়েছে বহু বার। ওই কর্মসূচিতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এক চিত্রসাংবাদিককে তাঁর শুশ্রূষা করে নিজের গাড়িতে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেন মমতা।
কুস্তিগিরদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেফতারের দাবিতে সংযুক্ত কিসান মোর্চা এ দিন সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল। সেই কর্মসূচিতে মৌলালি মোড়ে এ দিন সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের বিক্ষোভ-সভায় ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার প্রমুখ। ব্রিজভূষণের কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে বিক্ষোভে।