ট্রেনে নিগৃহীত মাদ্রাসা শিক্ষককে ৫০ হাজার টাকা, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

২০ জুন ট্রেনে ক্যানিং থেকে শিয়ালদহের দিকে আসার পথে বালিগঞ্জ ও পার্ক সার্কাসের মধ্যে বছর কুড়ির এক যুবককে তাঁর পোশাক ও ধর্মবিশ্বাসের জন্য কটূক্তি, মারধর এবং পরে ধাক্কা দিয়ে প্ল্যাটফর্মে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০২:২৩
Share:

আক্রান্ত যুবক শাহরুফ হালদার।

ক্যানিং-শিয়ালদহ শাখার ট্রেনে নিগৃহীত মাদ্রাসা শিক্ষকের সঙ্গে বুধবার ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই শিক্ষক এবং তাঁর সঙ্গে থাকা আরও দুই ট্রেনযাত্রীকে রাজ্য সরকার ৫০ হাজার টাকা করে দেবে বলে জানান তিনি।

Advertisement

২০ জুন ট্রেনে ক্যানিং থেকে শিয়ালদহের দিকে আসার পথে বালিগঞ্জ ও পার্ক সার্কাসের মধ্যে বছর কুড়ির এক যুবককে তাঁর পোশাক ও ধর্মবিশ্বাসের জন্য কটূক্তি, মারধর এবং পরে ধাক্কা দিয়ে প্ল্যাটফর্মে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বালিগঞ্জ জিআরপিতে অভিযোগ দায়ের হলেও পুলিশ অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশি সূত্রের খবর, আক্রান্ত যুবকের নাম শাহরুক হালদার। তাঁর বাড়ি বাসন্তী থানার চুনাখালি গ্রামে। তিনি হুগলিতে একটি বেসরকারি মাদ্রাসায় পড়ান। এ দিন বিধানসভার অধিবেশনের পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজের ঘরে বলেন, ‘‘মাদ্রাসা শিক্ষকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। ওই ঘটনায় তিন জনের প্রত্যেককে সরকার ৫০ হাজার টাকা দেবে।’’

শাহরুক জানান, সে-দিন অন্যদের সঙ্গে তিনি ট্রেনের সামনের দিকের একটি কামরায় উঠে দেখেন, একটি ধর্মীয় সংগঠনের কয়েকশো সদস্য আগেই সেখানে উঠেছেন। ট্রেন ছাড়ার পরে বিভিন্ন স্টেশনে ওই সংগঠনের আরও কিছু সদস্য ওঠেন। তাঁরা কিছু ক্ষণের মধ্যে স্লোগান শুরু করেন। অনেকে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিও দিতে থাকেন। কিছু পরে শাহরুক ট্রেন থেকে নামার সুবিধের জন্য দরজার কাছাকাছি চলে আসেন। বালিগঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছলে পিছনের কামরায় তীব্র হট্টগোলের শব্দ শুনতে পান তিনি। পরে তাঁর কামরাতেও ওই সংগঠনের বেশ কিছু সদস্য ওঠেন।

Advertisement

অভিযোগ, ওই যাত্রীদের একাংশ কামরার অন্য কিছু যাত্রীর ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কটূক্তি শুরু করেন। শাহরুককে তাঁর ধর্মীয় পোশাক এবং দাড়ি নিয়ে কটূক্তি করা হয়। তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করানোর হুমকিও দেওয়া হয় বলে শাহরুকের অভিযোগ। তিনি জানান, কটূক্তির প্রতিবাদ করায় ওই সংগঠনের এক সদস্য তাঁর গলা চেপে ধরেন। বচসার মধ্যে এক জন তাঁর ডান চোখে ঘুষি মারেন। তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে বলা হয়। তিনি কামরায় পড়ে যান। কয়েক জন যাত্রী তাঁকে ঠেলে দরজার কাছে এনে পার্ক সার্কাস স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেন বলে অভিযোগ।

পরে স্থানীয় কিছু যাত্রী শাহরুরকে তুলে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে কড়েয়া থানায় অভিযোগ জানাতে নিয়ে যান। সেখান থেকেই বিষয়টি জানানো হয় বালিগঞ্জ জিআরপি-কে। পুলিশের সাহায্যে সেখানে গিয়ে তিনি অভিযোগ জানান। তার আগে পার্ক সার্কাসে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে পুলিশ। জিআরপি-র কাছে অভিযোগে ঘটনার কথা লিখলেও ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি বলে জানান ওই শিক্ষক। রাতে তাঁর বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে পুলিশ।

শাহরুক এ দিন বলেন, ‘‘শুধু আমার সঙ্গে নয়, ওই দিন আরও কিছু যাত্রীর একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। বিপন্ন বোধ করছি। তবে এই নিয়ে আর সংবাদমাধ্যমে হইচই চাই না। আমি দ্রুত কাজে ফিরতে চাই।’’

পুলিশি সূত্রের খবর, এই নিয়ে বালিগঞ্জ ও সোনারপুর থানায় দু’টি অভিযোগ হয়েছে। কেউ গ্রেফতার হয়নি। আক্রান্ত যুবককেও আর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জিআরপি মন্তব্য করেনি। এ দিন এক বিবৃতিতে ধর্মীয় বিশ্বাস ও পোশাকের জন্য ওই যুবকের নিগ্রহের প্রতিবাদ জানান এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন