মাছ, ডিমের ঝোল খেলেন মুখ্যমন্ত্রী

 চার দিনের বাঁকুড়া জেলা সফর সেরে শুক্রবার দুপুরে কলকাতায় রওনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি মুকুটমণিপুরে তিন দিন থাকায়, জেলা ও পড়শি জেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভিড়ে হোটেল, লজ থেকে দোকানে জমিয়ে ব্যবসা হলো।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

মুকুটমনিপুর শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫২
Share:

ফেরা: মুকুটমণিপুর ছাড়লেন মমতা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

চার দিনের বাঁকুড়া জেলা সফর সেরে শুক্রবার দুপুরে কলকাতায় রওনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি মুকুটমণিপুরে তিন দিন থাকায়, জেলা ও পড়শি জেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভিড়ে হোটেল, লজ থেকে দোকানে জমিয়ে ব্যবসা হলো। তাতেই ঠান্ডা মুখ ঘোরালেও লক্ষ্মীলাভ আটকালো না মুকুটমণিপুরের ব্যবসায়ীদের। তাঁদের কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর সফর আমাদের ব্যবসায় অক্সিজেন জুগিয়ে দিল।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী চলে গেলেও তাঁর সফর ঘিরে এমন নানা টুকরো ঘটনার রেশ রয়ে গেল লোকজনের মধ্যে।

চপারে বিলম্ব

Advertisement

কথা ছিল দুপুর দু’টো নাগাদ মুকুটমনিপুরের স্থায়ী হেলিপ্যাড থেকে চপারে চড়ে রওনা দেবেন মমতা। নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছুক্ষণ আগেই অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী হেলিপ্যাডে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তারপরেও কম বেশি মিনিট কুড়ি চপার ওড়েনি। দেরি হচ্ছে দেখে তাঁর নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। কেউ দাবি করলেন, মনে হয়, তেল ভরতে দেরি হচ্ছে। কেউ আবার ঘাড় নেড়ে সেই ওই তত্ত্ব নসাৎ করে দিলেন। আলোচনার মধ্যেই কানে এল চপারের পাখা ঘুরতে শুরু করেছে। কী কারণে দেরি? পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়ের কিছুটা আগেই মুখ্যমন্ত্রী এসে পড়েছিলেন। তাই আকাশে ওড়ার জন্য দরকারি ছাড়পত্র পাওয়া যাচ্ছিল না। তাতেই দেরি।

অতিথি যখন মুখ্যমন্ত্রী

মুকুটমণিপুরের সেচ বাংলোয় উঠেছিলেন মমতা। তবে তাঁর খাবার-দাবারের বরাত পেয়েছিলেন বেসরকারি একটি হোটেল। প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী খাবার খান খুব মেপে। পছন্দ করেন একেবারে ঘরোয়া রান্না। কিছু শাক-সব্জি, মাছ বা ডিমের ঝোলের মতো সাধারণ বাঙালি খাবারের বাইরে তিনি তেমন কিছু খান না। তবে যাই হোক, অতিথি যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী, তখন সেরা স্বাদ তুলে আনাটাই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বরাত প্রাপক মুকুটমণিপুর হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাপস মণ্ডলের কাছে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে আমাদের জঙ্গলমহলের এত উন্নতি হচ্ছে, তাই তাঁকে খাবার খাওয়ানোর সুযোগ পাওয়াটাই আমাদের কাছে বড় পাওনা। রান্না-বান্না মুখ্যমন্ত্রীর খুব ভাল লেগেছে। এতেই আমরা খুশি।”

বাড়ল বেচাকেনা

নভেম্বরের শেষে হাড়ে কামড় বসিয়েও মাঝ ডিসেম্বরে হঠাৎই গায়েব শীত। শীতবস্ত্র কার্যত দূরে সরিয়ে রাখছেন মানুষজন। উল্টে ভরদুপুরে রোদে বেরোলে কপালে ঘামের বিন্দু জমছে। এই পরিস্থিতিতে পর্যটন মরসুম ঝিমিয়ে পড়েছে বলে আক্ষেপ করছিলেন মুকুটমণিপুরের ব্যবসায়ীরা। তবে মুখ্যমন্ত্রীর আগমনে পরিস্থিতি বদলেছে অনেকটাই। বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত মুকুটমণিপুরে পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মী, আধিকারিকদের ভিড়ে গমগম করছিল মুকুটমণিপুর। শাসকদলের নেতা-কর্মীও কম আসেননি। হোটেলগুলিতে তো ঠাঁই নেই অবস্থা চলছিল। দোকানে কেনাকাটিও চলছে ভরপুর। সেই সুবাদে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিক্রিবাটাও কিছুটা বেড়েছে। মুকুটমণিপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা বিপুল সাহু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মী থেকে বহু প্রশাসনিক কর্তাই হস্তশিল্পের সামগ্রী কিনতে ভিড় জমিয়েছিলেন দোকানে। বেচাকেনাও অনেকটাই বেড়েছে।”

বাড়তি পাওনা

প্রকৃতির টানে মুকুটমণিপুর বেড়াতে আসা অনেকেরই আবার মুখ্যমন্ত্রী-দর্শনও হয়ে গেল। বুধবার বিকেলে ইঁদপুরের বাগডিহায় সভা সেরেই মুকুটমণিপুরে যান মমতা। ওই দিন সন্ধ্যাতেই পায়ে হেঁটে কংসাবতী জলাধার পরিদর্শন করেন তিনি। সেই সময় অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেদুয়া মোড়ে মুখ্যমন্ত্রী সভা করতে যাওয়ার পথে তাঁকে দেখতে রাস্তার পাশে জড়ো হয়েছিলেন অনেকেই। শুক্রবার সকাল থেকেই জলাধার দেখার পাশাপাশি সেচ বাংলোর দরজাতেও চোখ রাখছিলেন পর্যটকেরা। যদি একবার তাঁকে দেখা যায়। দুপুর দেড়টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী যখন কলকাতা রওনা দেন, তখনও সেচ বাংলোর দরজার সামনে ছিল জমাটি ভিড়। আরামবাগ থেকে মুকুটমণিপুরে বেড়াতে আসা নবদম্পতি শ্রীজাত দত্ত ও রানুদেবী বলেন, “এতো দ্বিগুণ প্রাপ্তি হয়ে গেল। জলাধারও দেখলাম, আবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরও দেখা পেলাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন