Mamata Banerjee

ক্ষোভ কমাতে উদ্যোগী মমতা ফোন করলেন গৌতম দেবকে

গৌতমের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, দলনেত্রীকে গৌতম জানিয়েছেন, তিনি কখনওই দল বা সরকার বিরোধী কথা বলেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:৪১
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও গৌতম দেব।

বিক্ষোভ এবং অনুযোগ সামলাতে ময়দানে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। ১০০টি চিঠি দেওয়ার পরেও তাঁর বিধানসভা এলাকায় রাস্তা মেরামতের কাজ না হওয়াতেই ওই ক্ষোভের বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক। তাঁর ক্ষোভ প্রশমনে উদ্যোগী হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সকালে মমতা স্বয়ং ফোন করেন গৌতমকে। তাঁর ক্ষোভের কারণ জানতে চান। দলনেত্রীকে ক্ষোভের কথা জানানোর পাশাপাশি দার্জিলিং তথা উত্তরবঙ্গের রাজনীতি নিয়েও গৌতমের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা হয় মমতার।

Advertisement

গৌতমের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, দলনেত্রীকে গৌতম জানিয়েছেন, তিনি কখনওই দল বা সরকার বিরোধী কথা বলেননি। তাঁর মন্তব্যের ‘অপব্যাখ্যা’ করেছে সংবাদমাধ্যম। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের ধারণা ছিল, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ‘গাফিলতি’র কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতেই প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন গৌতম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় গৌতম কারও সঙ্গে কোনও অভ্যন্তরীণ বিবাদের কথা বলেননি। শনিবার পর্যটনমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার একটি মন্তব্যকে সংবাদমাধ্যম একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে। আমার দলের প্রতি ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই। আমি দলের প্রথম দিনের সৈনিক। যতদিন রাজনীতিতে থাকব, ততদিন একই প্ল্যাটফর্মে থেকে কাজ করার চেষ্টা করব। সকালে দিদির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। অহেতুক জল্পনা-কল্পনা তৈরি হচ্ছে। যেগুলোর কোনও ভিত্তি নেই।’’

মমতার আগে গৌতমকে ফোন করেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তাঁর সঙ্গেও গৌতমের দীর্ঘক্ষণ কথা হয় বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, শতাব্দী রায়ের ক্ষোভ প্রশমনের পর অন্য নেতা-নেত্রীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভে রাশ টানতে তৎপরতা বাড়িয়েছে তৃণমূল।

Advertisement

শুধু গৌতমই নন, শতাব্দীর মতো দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হাওড়ার তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষালের ক্ষোভ মেটাতেও তৎপরতা দেখিয়েছেন তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব। শুক্রবার প্রসূন অভিমানের সুরে বলেছিলেন, ‘‘আমাকে তো একটা এসএমএস করেও জানাতে পারে যে, হাওড়া জেলায় অমুক এই পদে বসছেন! পার্টির কর্মী আমাকে সে খবর দিচ্ছেন। দল থেকে সে খবর পাচ্ছি না। এটুকুই দুঃখ।’’ প্রসঙ্গত, ১৩ জানুয়ারি হাওড়া ময়দানের একটি সভা থেকে প্রসূনের নামোল্লেখ না করে বিজেপি যুবমোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ দাবি করেছিলেন, ‘‘হাওড়ার এক প্রাক্তন ফুটবলার তথা সাংসদ বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন।’’ এর পরেই প্রসূনকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। তবে শুক্রবার সে জল্পনা উড়িয়ে প্রসূনের দাবি, ‘‘আমি পার্টি ছেড়ে পালাব না। সৌমিত্র খাঁ তো এমন সব সময়েই বলে। ও বাচ্চা ছেলে। তবে এই বালখিল্যতাটা না করলেই পারে। আমার তো একটা সম্মান রয়েছে!’’

সাংসদ মুখে যা-ই বলুন, শাসকদল কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। শনিবার সকালে প্রসূনের সঙ্গে কথা বলেন প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, সৌগত সতীর্থ প্রসূনকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তাঁর অভিমানের কথা দলের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রসূন তার পর থেকেই আর ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলে দেখেও জবাব দেননি। কিন্তু সৌগত বলেছেন, ‘‘আমার সঙ্গে ওর কথা হয়েছে। প্রসূনের ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে। কিন্তু ও পার্টিতেই ছিল। পার্টিতেই আছে। পুরোপুরি মমতার সঙ্গে আছে। ক্ষোভের কথা বলেছে বলেই তো আর পার্টি ছাড়বে বলেনি!’’

উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীরের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে উদ্যোগ শুরু হয়েছে তাঁকেও শান্ত করার। প্রবীরকে শনিবার ফোন করেছেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। দলের তরফে ফোন পাওয়ার কথা স্বীকার করে প্রবীর বলেছেন, ‘‘সম্প্রতি আমি আমার বিধানসভা এলাকার একটি রাস্তা ঠিক না হওয়া নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলাম। সেই বিষয়টি জানতে চেয়ে আমায় ফোন করেছিলেন পূর্তমন্ত্রী। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, জানুয়ারি মাসের মধ্যেই রাস্তাটি ঠিকঠাক হয়ে যাবে।’’ তবে শুধু রাস্তাঘাটই নয়, দল পরিচালনা নিয়েও ইদানীং প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন প্রবীর। সেই প্রসঙ্গে কি মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে? জবাবে প্রবীর বলেছেন, ‘‘আমি এবং অরূপ দুজনেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাই ফোনালাপে রাজনীতি-সহ নানা বিষয়ে কথা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে সব কথা সংবাদমাধ্যমে বলব না।’’

আরও পড়ুন: বঙ্গ বিজেপি-র ‘ফাটল’ নাপসন্দ, ঐক্য প্রদর্শনের নির্দেশ অমিতের

আরও পড়ুন: জেলায় জেলায় বিভিন্ন কেন্দ্রে চলছে টিকাকরণের কাজ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন