রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। ছবি: প্রদীপ আদক।
বিবেকানন্দের আদর্শ মেনে পূর্ণাঙ্গ বেদগ্রন্থ প্রকাশের জন্য গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারকে দেড় কোটি টাকা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বামীজির শিকাগো-বক্তৃতার ১২২ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা করা হয়।
ঠিক এক দিন আগেই দিল্লিতে সংস্কৃত চর্চা ও রামায়ণ, মহাভারতের মতো প্রাচীন গ্রন্থচর্চায় কেন্দ্র জোর দেবে বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মা। মমতা এ দিন বলেন, ‘‘রামায়ণ, মহাভারত, বাইবেল, কোরান— সব আমরা ছোট থেকেই পড়ে আসছি।’’ মিশনের অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ ভাবে মনে করিয়ে দিয়েছেন, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ চর্চায় কিছু করার জন্য নানা ভাবনা সব সময়েই তাঁর মাথায় ঘুরপাক খায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেই নতুন একটি ‘মানুষ গড়া’র প্রতিষ্ঠানে হাত দিয়েছেন মিশন কর্তৃপক্ষ। মমতাই নিউ টাউন ইকো-পার্কের পাশে সেই প্রতিষ্ঠানের জমি কার্যত বিনামূল্যে মিশনকে অর্পণ করেন। প্রতিষ্ঠানটির জন্য মিশন কর্তৃপক্ষকে এ দিন আরও পাঁচ কোটি টাকা তুলে দেন মমতা। নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে এ টাকা দেওয়া হয়।
ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতিতে এখনও কোনও সরকারই যথেষ্ট কিছু করে উঠতে পারেনি বলে অভিমান করেছিলেন গোলপার্কের ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মহারাজ স্বামী সুপর্ণানন্দ। নিবেদিতার নামে রাজ্য সরকার সদ্য একটি কলেজ করে দিলেও তা যথেষ্ট নয় বলেই তিনি মন্তব্য করেন। বাগবাজারের ১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনে নিবেদিতার স্মৃতিবিজড়িত একটি বাড়ি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে দিয়েছে। কিন্তু ১৭ নম্বরের বাড়িটি পাওয়া যায়নি এখনও। এই নিয়ে অনুযোগ শোনার পরে থমথমে মুখে বসেছিলেন মমতা।
পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওই বাড়িটি এখনও হেরিটেজ কমিশনের স্বীকৃতি পায়নি। সেটা পেলে মিশনের কাজ আমরা ফেলে রাখব না।’’ লন্ডনে নিবেদিতার স্মৃতিজড়ানো বাড়িটির জন্যও কিছু করতে মমতা আগ্রহী বলে এ দিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ। বহু বাধা সরিয়ে দার্জিলিংয়ে নিবেদিতার বাসভবনটি মিশনের জন্য অধিগ্রহণ ও নিউ টাউনে মিশনের প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ৭০ কোটি টাকার জমি দেওয়ার কথাও এ দিন সবিস্তার শোনান মমতা।
প্রতিষ্ঠানটি শিকাগোর সভাকক্ষের আদলে সাজাতে চান মিশন কর্তৃপক্ষ। মিশনের পরিকল্পনা, বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গাঁটছ়ড়ায় নিউ টাউনের প্রতিষ্ঠানটিতে মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া হবে। সাধারণ সাফাইকর্মী থেকে শীর্ষস্তরের আমলা, বিচারপতিদের শিক্ষাও সেখানে পূর্ণতা পাবে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার সময়ে কোনও এক শ্রোতার গোলমালে এক বার তাল কেটেছিল। চেঁচামেচিতে কিছুক্ষণ বক্তৃতা থামান মমতা। সকলেরই নিজের কথা বলার অধিকার আছে বলে ফের বক্তৃতা শুরু করেন তিনি। বিবেকানন্দের পথ ধরে সকলকে ইতিবাচক হতে বলেন তিনি।