চাইলে মিলবে আরও সাহায্য, কাঁকরভিটায় আশ্বাস মমতার

প্রথমে ঠিক ছিল, ভারত নেপাল সীমান্তের মেচি সেতুর পাশের নীল সাদা কাপড়ে মোড়া সরকারি মঞ্চ থেকেই তিনি ত্রাণের গাড়িগুলি সবুজ পতকা নেড়ে ওপারে পাঠাবেন। বক্তব্য রাখবেন। তার পরে ওপারে নেপালে যাবেন। সেই মত সমস্ত প্রশাসনিক প্রস্ততি বেলা দেড়টার মধ্যে শেষও হয়। কনভয়ের রাস্তা থেকে, দুই পাশের ব্যারিকেড করে লোক আটকানো, রাস্তা ফাঁকা করা সবই হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে সবের মধ্যে গেলেনই না। সীমান্ত মুখে গাড়ি থেকে নেমে পুলিশ-প্রশাসনের রাজ্যের শীর্ষ অফিসারদের নিয়ে সোজা হাঁটা শুরু করলেন মেচি সেতু দিয়ে নেপালের দিকে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

কাঁকরভিটা (নেপাল) শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০৩:৪৮
Share:

ভারত নেপাল সীমান্তের মেচি নদীর উপর দিয়ে হেঁটে কাঁকরভিটায় চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

প্রথমে ঠিক ছিল, ভারত নেপাল সীমান্তের মেচি সেতুর পাশের নীল সাদা কাপড়ে মোড়া সরকারি মঞ্চ থেকেই তিনি ত্রাণের গাড়িগুলি সবুজ পতকা নেড়ে ওপারে পাঠাবেন। বক্তব্য রাখবেন। তার পরে ওপারে নেপালে যাবেন। সেই মত সমস্ত প্রশাসনিক প্রস্ততি বেলা দেড়টার মধ্যে শেষও হয়। কনভয়ের রাস্তা থেকে, দুই পাশের ব্যারিকেড করে লোক আটকানো, রাস্তা ফাঁকা করা সবই হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে সবের মধ্যে গেলেনই না। সীমান্ত মুখে গাড়ি থেকে নেমে পুলিশ-প্রশাসনের রাজ্যের শীর্ষ অফিসারদের নিয়ে সোজা হাঁটা শুরু করলেন মেচি সেতু দিয়ে নেপালের দিকে।

Advertisement

বেশ কিছুক্ষণ সেতু ধরে হাঁটার পর ভারতের অংশের মধ্যে দাঁড়িয়েই একর পর এক ত্রাণের ট্রাক পাঠানো শুরু করলেন নেপালে। সেতুতে ভিড়ও সরানোর জন্য হাতও নাড়লেন। ততক্ষণে এ খবর পেয়ে সেখানে হেঁটেই চলে আসেন নেপাল সরকারের নগরান্নয়ন মন্ত্রী নারায়ণ খড়কা, কলকাতার নেপালের কনস্যুলেট জেনারেল চন্দ্রকুমার ঘিমিরে-সহ সে দেশের পুলিশ, সেনা এবং প্রশাসনের অফিসারেরা। এর পরে তাঁদের নিয়েই আবার প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে নেপালের ঝাপা জেলার কাঁকরভিটার প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তুলে দিলেন নেপালের সরকারের প্রতিনিধিদের হাতে। ততক্ষণে অবশ্য ভারতের দিকে থাকা সরকারি মঞ্চ খাঁ খাঁ করছে। লোক বলতে চারপাশে গুটিকয়েক নিরাপত্তারক্ষী।

সোমবার দুপুরে এমনভাবেই এপার থেকে হেঁটে গিয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করে রাজ্যের তরফে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপালের হাতে ত্রাণ তুলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, নেপালের দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থার কথা কামনা করে আগামী দিনে পশুপতি মন্দিরে যাওয়ার কথাও জানিয়ে আসলেন। নেপালের তরফেও খামতি কিছু রাখা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি শিবের একটি মূর্তিও তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। কাঁকরভিটার কম্পোজিট প্রশাসনিক ভবনে ঠাসাঠাসি ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মাইক্রোফোন হাতে নিজে অনুষ্ঠান শেষের ঘোষণাও করে দেন। তার পরে গাড়িতে ওঠে সোজা এ পারে এসে রওনা হয়ে যান শিলিগুড়ির শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যার উদ্দেশ্যে। কাঁকরভিটায় বসে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নেপালের যা ক্ষতি হয়েছে তা ভাবাই যায় না। নেপালের বহু ভাই-বোনদের আমরা হারিয়েছি। আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্ব সব সময় অটুট আছে। আর পশ্চিমবঙ্গ তো একেবারেই প্রতিবেশী। নেপাল সরকার চাইলেই আমরা আবার সাহায্য করতে প্রস্তুত।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখন নেপালের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। আমরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্য রাজ্যগুলিও সাহায্য করছে। আর নেপালের কাঠমান্ডু বা পশুপতি মন্দির আমাদের সবার কাছে বড় আকর্ষণ। নেপাল স্বাভাবিক হলে আমি আবার আসব।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি সে দেশের নগরান্নয়ন মন্ত্রী নারায়ণ খড়কা। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগের যত প্রশংসা করা ভাষায় করা যায় না। উনি যেভাবে নেপালের পাশে দাঁড়ালেন তাতে আমরা অভিভূত। ভারত সরকারও আমাদের সবরকম ভাবে সাহায্য করছে। নেপাল-ভারতের সম্পর্ক এতে আরও অটুট হল।’’ সরকারি সূত্রের খবর, এ দিন রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে ৩৫টি ট্রাকে করে রাজ্যের ব্যানার বেঁধে নেপালে ত্রাণ পাঠানো হয়। মালদহ এবং শিলিগুড়ির বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সবমিলিয়ে ১ লক্ষ ত্রিপল, বেবি ফুড ১ মেট্রিক টন, ৩ লক্ষ মেট্রিক টন দড়ি, ৬ হাজার কম্বল। ৯ মেট্রিক টন চিড়ে এবং ১ মেট্রিক টন গুড় এবং কিছু জলের পাউচ পাঠানো হয়েছে। কাঁকরভিটা হয়ে কাঠমান্ডু পৌঁছবে ত্রাণের ট্রাকগুলি। তার পরে নেপাল সরকার বিলি করবে। সীমান্ত থেকে ট্রাকগুলি নেপাল পুলিশ, সেনা জওয়ানেরাই ওপারে নিয়ে গন্তব্যে রওনা করে দেন।

প্রায় ঘণ্টাখানেক মুখমন্ত্রীর সীমান্ত সফরকে ঘিরে প্রশাসনিক মহলে টানটান উত্তেজনা থাকলেও সকাল থেকে খোলা সীমান্তের দুই পারের বাসিন্দার অবশ্য কিছুটা সমস্যায় পড়েন। সকাল থেকে দুই পাশেই রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাস্তায় ভিড় এাতে পানিট্যাঙ্কি বাজারে সমস্ত দোকান খোলা থাকলেও নিরাপত্তার জন্য রশি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। বেলা ৩টার একটু পর থেকে ঘন্টাখানেক অবশ্য দুই পাশে যাতায়াত বন্ধ ছিল। দুই পাশের বহু বাসিন্দাদের মেচি সেতুর নিচ দিয়ে নদী বরাবর হেঁটেও পার হতে দেখা গিয়েছে। তবে চড়া রোদে রিকশা, ভ্যান ও ভাড়ার গাড়ি না চলায় শিশুদের নিয়ে সমস্যার পড়তেও দেখা গিয়েছে অভিভাবকদের। তাঁদের অনেকেই বলেন, ‘‘দিনভর সমস্যা হয়েছে ঠিকই। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হেঁটে গিয়ে ত্রাণ দিয়ে এলেন। এটা তো দেখার মত!’’

বিকাল সওয়া চারটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী যখন এলাকা ছেড়ে চলে যান, তথন সরকারি মঞ্চটিতে দেখা যায়, পুলিশের একাংশ গরমে ঘামে ভিজে ফ্যানের হাওয়ায় জিরিয়ে নিচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন