অতীত: সাংবাদিক বৈঠকে গুরুঙ্গ ও বিনয় তামাঙ্গ। —ফাইল চিত্র।
বিস্ফোরণ কাণ্ডে তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা হয়েছে। তার পর থেকে বেশ কয়েক দিন প্রকাশ্যে দেখা যায়নি তাঁকে। বৃহস্পতিবার সামনে এল তাঁর লেখা একটি চিঠি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা সেই চিঠিতে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ অনুরোধ জানিয়েছেন, গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে যেন দ্রুত আলোচনা শুরু করে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, গুরুঙ্গের চিঠি তিনি পাননি। বরং মোর্চার তরফে বিনয় তামাঙ্গের চিঠি পেয়েছেন।
দু’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের সব দলকে আলোচনায় ডেকেছেন। ২৯ অগস্ট নবান্নে সেই বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে গুরুঙ্গের এই চিঠি সামনে আসায় প্রশ্ন উঠেছে, যে গুরুঙ্গ এ বারের আন্দোলনের শুরুতে জানিয়ে দেন, রাজ্যের সঙ্গে কোনও কথা নয়, তিনি হঠাৎ কেন চিঠি দিতে গেলেন?
প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, বন্ধ তোলার জন্য এর মধ্যেই চাপ বাড়ছে পাহাড়ে। তার উপরে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনায় আন্দোলনে থাকা পাহাড়বাসীও আতঙ্কিত। তাই নমনীয় না হয়ে উপায় ছিল না গুরুঙ্গের পক্ষে। তাই পুরনো অবস্থান থেকে সরে তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আলোচনার আর্জি জানিয়েছেন।
মোর্চার একটি অংশ বলছে, এ বারে পথে নেমে আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে শুরু করে সম্প্রতি রাজ্যকে বৈঠকের জন্য চিঠি দিয়ে বিনয় তামাঙ্গ যে ভাবে সামনে চলে এসেছেন, তাতেও গুরুঙ্গের শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এমনিতেই বন্ধ ও আন্দোলন নিয়ে দলের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তার উপরে গোটা আন্দোলনে কখনওই গুরুঙ্গ পথে নামেননি। তাই গুরুঙ্গের পক্ষে চিঠি দিয়ে আবার গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গ উস্কে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
গুরুঙ্গের এই চিঠি প্রসঙ্গেও তাঁর আশঙ্কা বাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা এ দিন বলেন, ‘‘বিনয় তামাঙ্গের চিঠি পেয়েছি। ওঁরা আসছেন। বিমল গুরুঙ্গের কোনও চিঠি পাইনি।’’
স্বরাজ থাপার মতো মোর্চা নেতারা অবশ্য বলছেন, চিঠি ই-মেলে পাঠানো হয়েছে। না পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু সে কথায় রাজ্য আমল দিচ্ছে না।
গুরুঙ্গকে কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না রাজ্য? প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রথমত, মোর্চার চিফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে বিনয়ের চিঠি এসে গিয়েছে। সেটাকেই ‘অফিসিয়াল’ বলে ধরা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা রয়েছে। তাই তাঁর সঙ্গে আলোচনার কোনও প্রশ্ন নেই এখন। বরং তিনি কলকাতায় এলে গ্রেফতারও হতে পারেন। সর্বোপরি, প্রশাসনের শীর্ষ সূত্রে মনে করা হচ্ছে, গুরুঙ্গের এই চিঠির পিছনে কারও ইন্ধন থাকতে পারে।
কেন্দ্র অবশ্য চাইছে, এই নমনীয় গুরুঙ্গের সঙ্গে আলোচনা করুক রাজ্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনও ইঙ্গিত নেই।