মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
দলের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নেতাদের বেছে নেওয়ার ভার নিজের হাতে নিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বিপদে-আপদে যারা মানুষের পাশে দাঁড়াবে, পয়সা দিয়ে যাদের কেনা যাবে না— এমন ছেলেমেয়েদের মধ্য থেকেই ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি করতে চাই।’’
দলের ছাত্র সংগঠনের মধ্য থেকে কারা আগামী দিনে দলের লড়াইয়ের ‘মুখ’ হয়ে উঠবেন, তা বেছে নিতে আগামী ১৪ ও ১৫ নভেম্বর পরপর দু’দিন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলাদা ভাবে মুখোমুখি কথা বলবেন মমতা। এ জন্য আলাদা তালিকাও তৈরির নির্দেশ দেন তিনি।
বুধবার তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠাদিবসের অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে পরবর্তী নেতৃত্ব তুলে আনব। যাঁরা আমার সঙ্গে কাজ করতে চান, তাঁদের তালিকা তৈরি হবে। সেই তালিকা দেখে প্রত্যেকের সঙ্গে আমি কথা বলব। তাঁদের মতামত শুনব। এমন নেতৃত্ব তৈরি করব, যাতে আগামী ৫-১০ বছর কেন, ৫০ বছরেও বিজেপি বাংলার দিকে ফিরে তাকাবে না।’’
আরও পড়ুন: নারদ-কাণ্ডে তৎপর সিবিআই, তলব শোভন-অপরূপাকে
নেতাজি ইন্ডোরে ওই দু’দিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যের সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি সদস্যদের মধ্য থেকে প্রাথমিক ভাবে ‘যোগ্য’ নেতা বাছাইয়ের কাজটা অবশ্য করার দায়িত্ব মমতা দিয়েছেন একটি কোর কমিটিকে। দলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন টিএমসিপি সভাপতি বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ের কোর কমিটি। কোন নিরিখে প্রাথমিক বাছাই হবে, তা বুঝিয়ে দিতে মমতা বলেন, ‘‘প্রত্যেক জেলা থেকে এমন ছেলেমেয়েদের তালিকা তৈরি করতে হবে। সবুজ পাতায় যোগ্যদের ছবি-সহ নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর আমাকে জমা দেবেন। কোন কোন কাজে যোগ্যদের উৎসাহ রয়েছে, সেটাও লেখা থাকবে ওই তালিকায়।’’
আরও পড়ুন: নারদ-কাণ্ডে এ বার রাজ্যের আরও দুই মন্ত্রীকে ডেকে পাঠাল সিবিআই
সেই তালিকার সদস্যদের সঙ্গে মুখোমুখি বসবেন তৃণমূল নেত্রী। দেশ নিয়ে, বাংলা নিয়ে, তৃণমূল নিয়ে কে কি স্বপ্ন দেখেন, কি ভাবনা রয়েছে, তাও ওই ছেলেমেয়েদের কাছে শুনবেন মমতা।
দলের ছাত্র-যুবদের উপরই যে ২০২১ সালে আগামী বিধানসভা ভোটে তিনি অনেকটা নির্ভর করতে চাইছেন, তা-ও এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। ছাত্রদের কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘ছাত্ররা এই দু’টো বছর দেবেন। বাংলা তা হলে আরও ৫০ বছর দেবে। এই দু’বছর লড়াই করতে করতে দিল্লিটাও বদল করার পথে যাব আমরা।’’ দিল্লির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও ভাবেই নতিস্বীকার করা যাবে না বলে এ দিন ছাত্রদের নির্দেশ দেন মমতা। বিজেপিকে প্রতিহত করতে তাঁর বার্তা, ‘‘বাংলার মেধাকে সহ্য করতে পারে না ওরা। বাংলার নামটার প্রতি অ্যালার্জি আছে। বাংলার মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দিতে চায় ওরা। এ সব ওদের অসৎ উদ্দেশ্য। লড়ে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। থমকালে চলবে না।’’
ছাত্র-যুবদের জন্য আগামী দিনে আরও কর্মসংস্থানের আশ্বাসও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ঘরে ঘরে চাকরির প্রয়োজন আছে। আমরা চেষ্টাও করেছি তা মেটাতে। আমাদের আট বছরে রাজ্যে ৪০% বেকারত্ব কমিয়েছি। আগামী দিনে আরও করা হবে।’’ এর জন্য লেদার হাবে কর্মসংস্থানের সুযোগের পাশাপাশি সরকারি চাকরিতেও নিয়োগ হবে বলে মমতা জানান।