মমতা আজ ভুটানে, জোর পর্যটন ব্যবসায়

পর্যটন থেকে পরিকা‌ঠামো, শিল্প বা পরিবেশ-সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা এবং দুই তরফের সম্পর্ক মজবুত করতে আজ, সোমবার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০২:০২
Share:

পর্যটন থেকে পরিকা‌ঠামো, শিল্প বা পরিবেশ-সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা এবং দুই তরফের সম্পর্ক মজবুত করতে আজ, সোমবার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সকালের বিমানে কলকাতা থেকে রাজ্যের ১৯ জনের প্রতিনিধি দলটি ভুটানে পৌঁছবে। মুখ্যমন্ত্রীর আগামী ৯ অক্টোবর অবধি ভুটানে থাকার কথা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব-সহ বিভিন্ন দফতরের সরকারি আধিকারিকেরাও।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, পর্যটন, শিল্প, সড়ক যোগাযোগের মতো বিষয়গুলিকে নিয়ে আলোচনায় দুই তরফে বিশেষ জোর দেওয়া হবে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ভুটান, নেপাল বা সিকিমের মতো এলাকা জুড়ে সার্কিট তৈরির বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। ইতিমধ্যে ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের (এতোয়া) ১৪ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল ফুন্টশেলিং হয়ে রবিবার থিম্পুতে পৌঁছে গিয়েছে। এদিন রাতে সে দেশের বিভিন্ন পর্যটন, হোটেল সংগঠন ছাড়াও সরকারি অফিসারদের নিয়ে এক দফায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও হয়েছে।

মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ভুটান আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র। নেপালের মতোই ভুটানের সঙ্গে এ রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে পর্যটন, পরিকাঠামোর উপর দুই দেশের সমঝোতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের রাজ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ মন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ওই দেশের সরকারের প্রধানমন্ত্রী, রাজা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি পর্যায়ে বৈঠক রয়েছে। তাঁদের আশা, মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর রাজ্যের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।

Advertisement

রাজ্যের মধ্যে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপালের সীমান্ত রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তো বটেই, রাজ্য সরকার বরাবরই দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। ইতিমধ্যে ২০০৩ সালে ভুটানে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার কাজে সেনা বাহিনীর সঙ্গে রাজ্য পুলিশ বড় ভূমিকা নিয়েছিল। তেমনই, চলতি বছরে নেপালের টানা ভূমিকম্পের পর খোদ মুখ্যমন্ত্রী নেপালে পৌঁছে কয়েক দফায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন।

‘ল্যান্ড অব থান্ডার ড্রাগনে’র দেশ বলে পরিচিত ভুটান গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যের বাসিন্দাদের কাছেও অত্যন্ত আকর্ষণীয় পযর্টনস্থল হিসাবেও উঠে এসেছে। রাজধানী থিম্পু ছাড়াও পারো, পুনাখা, হা, গাসা, বুমথাং, গেলেফু, সামদ্রুপ ঝঙ্কারের মতো বহু এলাকায় এখন পর্যটকদের মুখে মুখে ঘুরছে। বিশেষ করে ভুটান, দার্জিলিং, ডুয়ার্স, সিকিম সফরের একগুচ্ছ প্যাকেজও তৈরি হয়েছে পর্যটন মহলে। আবার অনেকে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে ভুটান, নেপালে ঘুরতে আসেন। এর মধ্যে বিদেশি পর্য়টকদের সংখ্যা অনেক বেশি। সেই দিক থেকে রাজ্যের সঙ্গে ভুটানের একটি পর্যটন সার্কিট গড়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের পর তাতে আর গতি আসবে বলে মনে করেন এতোয়ার কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যালও।

সম্রাটবাবু জানান, আগামী ৫ এবং ৬ অক্টোবর ভুটানে সরকারি পর্যায়ে নানা বৈঠকে যোগ দেবেন। সেখানে ভুটানের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজ্যের প্রতিনিধিদের বৈঠক হচ্ছে। সরকারি অফিসারেরাও আছেন। তিনি বলেন, ‘‘পর্যটন ক্ষেত্রে আমরা তেমন‌ই একটি ‘কমন মেমোরান্ডাম’ তৈরি করছি। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের পরে আমাদের আশা, পর্যটনের ক্ষেত্রে ভুটানের সঙ্গে রাজ্যের আরও যোগাযোগ বাড়বে।’’

সরকারি পর্যায়ে ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঘিরে রাজ্য সরকার বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ অনেক আগে থেকেই নিয়েছিল। এর মধ্যে শিলিগুড়ি থেকে ভুটানের সঙ্গে বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যতম। শিলিগুড়ি থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) বাস ভুটানে চলাচল করত। সে দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকাকে ঘিরে ট্যুরিজম প্যাকেজও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু নানা প্রশাসনিক কারণে এক সময় তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী সেই বিষয়ে আবার উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, নেপালের বাস চালুর সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। ভুটানের থিম্পু অবধি বাস চালানোর আলোচনা চলছে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে এশিয়ান হাইওয়ের রাস্তাটি নেপাল থেকে শিলিগুড়ি হয়ে ভুটানে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেই কাজ এখন প্রাথমিক পর্যায়ে চলছে।

আবার পরিকাঠামোর পাশাপাশি ভুটানের ডলেমাইট উত্তোলনের জেরে উত্তরবঙ্গের পরিবেশের ভারসাম্যের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়া জরুরি বলে মনে করেন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু। তিনি জানান, ভুটানের কেন্দ্রগুলি থেকে ডলেমাইট নদীতে এসে আলিপুদুয়ার এবং জলপাইগুড়ির জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় জমি, জঙ্গল, চা বাগানের ক্ষতি করছে। বন্যপ্রাণী পাচার রোধ এবং সংরক্ষণ এ নিয়ে দুই তরফে কোনও সিদ্ধান্ত হওয়া দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন