তৃণমূল নেতাদের ‘খোঁজ’ নিতে রাজ্যে ৭ কেন্দ্রীয় সংস্থা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী সরকারের কোনও কাজের প্রতিবাদ করলেই ‘এজেন্সি’ লেলিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে দিল্লি। সেই অভিযোগের সত্যাসত্য প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু সূত্রের খবর, এটা ঠিক যে ইদানীং অন্তত সাতটি কেন্দ্রীয় সংস্থা এ রাজ্যে সক্রিয় হয়েছে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৭ ০৪:৩০
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী সরকারের কোনও কাজের প্রতিবাদ করলেই ‘এজেন্সি’ লেলিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে দিল্লি। সেই অভিযোগের সত্যাসত্য প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু সূত্রের খবর, এটা ঠিক যে ইদানীং অন্তত সাতটি কেন্দ্রীয় সংস্থা এ রাজ্যে সক্রিয় হয়েছে। শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কদের নানা কারবার সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছে তারা। সিবিআই, ইডি, আয়কর, বা এনআইএ-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির এহেন সক্রিয়তায় তৃণমূলের অন্দরে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

Advertisement

২০১৩-এর এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত সিবিআই এবং ইডি অন্তত ২৪ জন তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীকে হয় গ্রেফতার করেছে, নয় জেরা করেছে, না হয় এফআইআর করেছে। অন্য সংস্থাগুলির আতসকাচের তলায় রয়েছেন আরও বেশ কয়েক জন নেতা-মন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রের দাবি, যে ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি এ রাজ্যে তদন্তের জাল বিছিয়েছে, তেমন অভিযোগ গুজরাত, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যেও উঠেছে। কিন্তু শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি ‘অতিসক্রিয়’।

মাস কয়েক আগে রাজ্যের চার মন্ত্রী এবং এক বিধায়কের কাছে নোটিস পাঠিয়েছিল আয়কর দফতর। সে সবের জবাব দিয়েছেন মন্ত্রীরা। কালো টাকা ঘোষণার প্রকল্পে শাসক দলের কয়েক জন বেশ কিছু সম্পত্তির কথা ঘোষণা করেছেন। করও মিটিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও আয়কর দফতর বেশ কিছু নেতার রিটার্নের উপর বিশেষ তদন্ত শুরু করছে। বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রীর বেনামি সম্পত্তি রয়েছে এই সন্দেহে কলকাতায় কয়েকটি সংস্থায় তল্লাশিও চালিয়েছে আয়কর দফতর।

Advertisement

আরও পড়ুন:শুভেচ্ছা সফরেও মানা

সক্রিয় হয়েছে অর্থ মন্ত্রকের অধীন ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (এফআইউ)। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর, শিলিগুড়ি ও কলকাতার বেশ কিছু সমবায় ব্যাঙ্ক, ট্রাস্ট, সোসাইটি বা ব্যক্তি মালিকানার প্রতিষ্ঠানে সন্দেহজনক লেনদেন খতিয়ে দেখছে তারা।

নেতা-মন্ত্রীদের গতিবিধির উপরে নজর রাখছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। গরু, কয়লা, সোনা বা মাদক পাচারের অভিযোগ রয়েছে যে সব নেতাদের বিরুদ্ধে, তাঁদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন গোয়েন্দারা। গ্রেফতার হওয়া ব্যবসায়ী পরশমল লোঢা কলকাতার বেশ কিছু নেতার টাকা মালয়েশিয়ায় পাচারের ছক কষেছিলেন বলে ইডি-কে তথ্য দিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

বেশ কিছু ইসলামিক সংস্থার সঙ্গে শাসক দলের কয়েক জন সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তির যোগাযোগ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সেই আঁচ পেয়ে ওই নেতা-মন্ত্রীরা টেলিফোনে কথা বলাই কার্যত বন্ধ করে দিয়েছেন।

দিল্লি অবশ্য, এই সব ঘটনার মধ্যে ‘প্রতিহিংসা’র কিছু দেখছে না। তাদের দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র অভিযোগ, ‘‘প্রতিহিংসার রাজনীতি মমতাদিদিই করছেন। উনিই আমাদের জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন।’’ তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘সরকারি সংস্থাকে ব্যবহার করে আর এক দলের পিছনে লাগার ইতিহাস বাংলায় ছিল না। এটা গণতন্ত্রের উপরে কালো মেঘ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement