মুখোমুখি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার রাজভবনে। ছবি: পিটিআই।
সাত সকাল থেকে গোটা কলকাতা প্রতিবাদে উত্তাল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে প্রতিবাদীরা অবরুদ্ধে করে রেখেছেন ধর্মতলা চত্বর। তারই মধ্যে শনিবার বিকালে রাজভবনে একান্ত আলোচনায় মুখোমুখি হলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা তিনি ‘অতিথি’ প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েও এসেছেন।
দমদম বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রেসকোর্সে নেমে প্রধানমন্ত্রী এ দিন বিকালে রাজভবনে ঢোকেন দক্ষিণ দিকের ফটক দিয়ে। তার সামান্য পরেই পশ্চিম ফটক দিয়ে রাজভবনে প্রবেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তর ফটকের আশেপাশে বিক্ষোভের বাতাবরণের মধ্যেই ওই দুই ফটকের চত্বরে কোনও জমায়েত করতে দেয়নি পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে আগেই বেরিয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ধর্না-মঞ্চে চলে যান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে প্রধানমন্ত্রী পরে বেরিয়ে ওল্ড কারেন্সি বিল্ডিং-এ কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অনুষ্ঠানে যান। তারও পরে মিলেনিয়াম পার্কের অনুষ্ঠানে আবার একমঞ্চে দেখা গিয়েছে মোদী ও মমতাকে।
সিএএ এবং এনআরসি-বিরোধী বিক্ষোভের আবহে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতার এই বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ ছিলই। সে কারণেই বৈঠক সেরে বেরিয়ে এ দিন মমতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো আমার সাংবিধানিক দায়িত্ব। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী এলে আমি আসি।’’ বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের কাছে আমার ৩৮ হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে। এ ছাড়াও, ‘বুলবুলে’র জন্যে ৭ হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে। আমি সেই টাকার কথা বলতে এসেছি।’’
আরও পড়ুন: ‘গো ব্যাক মোদী, গো ব্যাক মমতা’, স্লোগান মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও
আরও পড়ুন: ‘বাংলায় কাটাব, তবু একটা শূন্যতা থাকবে’ টুইটে আত্মস্থানন্দকে স্মরণ মোদীর
রাজ্যের দাবিদাওয়ার বিষয় ছাড়া সিএএ বা এনআরসি নিয়ে কি কথা হয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওঁকে (প্রধানমন্ত্রী) বলেছি, আপনি এখানে এসেছেন, আমার বলা উচিত কি না জানি না। এনআরসি-ক্যা-এনপিআরের বিরোধী আমরা। মানুষে মানুষে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা। কোনও মানুষের উপরে যেন অত্যাচার না হয়, সেটা দেখা উচিত। আমি চাই ক্যা, এনপিআর, এনআরসি প্রত্যাহার করা হোক, আপনারা বিষয়টা বিবেচনা করুন।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, দিল্লি আসুন। তখন এই নিয়ে কথা হবে। রাজভবনে মোদীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময়ে সিএএ-বিরোধী ব্যাজ পরেই ছিলেন মমতা।
বিরোধী বাম ও কংগ্রেস অবশ্য মোদী-মমতার একান্ত বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন তোলা অব্যাহত রেখেছেন। ধর্মতলায় অবস্থানে বসেই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কটাক্ষ, ‘‘আগে ছিল ক্যা-ক্যা-ছি-ছি। এখন হয়ে গেল কাছাকাছি! দু’জনেই ভাল অভিনয় জানেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমরাও সরকারে ছিলাম। দাবি-দাওয়া নিয়ে বৈঠক করতে গেলে সরকারি আধিকারিক, কাগজপত্র লাগে। এই ধরনের বৈঠকে ওই আলোচনা হয় না। আর মুখ্যমন্ত্রী চাইলে আগে থেকে বলেই দিতে পারতেন, তিনি সিএএ নিয়ে আলোচনা চান। তার জন্য দিল্লি যেতে হবে কেন?’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের বক্তব্য, ‘‘মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর একান্ত বৈঠকে তাঁর এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনের সত্যতা নিয়ে আন্দোলনকারীদের মনে প্রশ্ন উঠে গেল। মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলে যাঁরা হাটলেন, তাঁদের সঙ্গেও উনি তঞ্চকতা করলেন।’’ তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস ভবিষ্যতে দেশের সরকার গড়লে এই ‘কালা কানুন’ প্রত্যাহার করবে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য ‘সেটিং-তত্ত্ব’ উড়িয়ে দিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘‘বাম-কংগ্রেস এই গান গাইতে গাইতে বিসর্জনে চলে গিয়েছে! কে ওদের গুরুত্ব দেয়? সব শক্তি লাগিয়ে আজ কলকাতায় যানজট করার চেষ্টা কররেছিলেন। কালো পতাকা, বেলুন, কালো মুখ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু একটা ধর্মঘট বা যানজট কোনওটা করারই ক্ষমতা নেই!’’ যদিও যানজটে বিরক্ত হয়ে রাজভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরে ওল্ড কারেন্সি-র অনুষ্ঠানে না গিয়ে বাড়ি ফিরে যান দিলীপবাবু নিজেই।