এ ভাবেই ধস নেমেছে রানিগঞ্জ-জামুড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায়।—ফাইল চিত্র
খনির ধারে বাস, চিন্তা বারো মাস! কখন পাতাল প্রবেশ ঘটে ঘরবাড়ি-শুদ্ধ! ইতিমধ্যেই ধসের কবলে পড়া ও এমন আশঙ্কায় ভোগা আসানসোল-দুর্গাপুর খনি এলাকার মানুষদের জন্য তাই আবাসন গড়বে সরকার।
ধসপ্রবণ এই এলাকায় কত মানুষ বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে বাস করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করার নির্দেশ আগেই দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এ বার সেই সব মানুষকে পুর্নবাসন দিতে উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৈরি হবে ৩৮ হাজার ফ্ল্যাট। কোথায় এগুলি তৈরি হবে, কত দ্রুত তা মানুষের হাতে তুলে দেওয়া যাবে— শুক্রবার আসানসোল-জামুরিয়ায় গিয়ে তা সরেজমিন দেখলেন রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এই প্রকল্পে খরচ হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা। তবে প্রাথমিক কাজ শুরুর জন্য ইতিমধ্যেই আবাসন দফতরের হাতে ২০০ কোটি টাকা এসেছে বলে জানিয়েছেন আবাসনমন্ত্রী। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন যে দু’টি এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে, সেখানে প্রায় ১,৭০০টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভব।
এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার আগে বৃহস্পতিবারই শোভনবাবু জানান, আবাসন দফতর শুধু নয়, কলকাতা পুরসভাও ওই আবাসন তৈরির কাজে হাত মেলাবে। আর এ কাজে সহায়তা করবে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (আড্ডা)।
প্রশ্ন উঠছে, দায়িত্ব যদি আবাসন দফতরের হয়, তবে কলকাতা পুরসভা কেন আগ বাড়িয়ে আসানসোল এলাকায় গিয়ে কাজ করবে? এমন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো কি আবাসন দফতরের নেই? মেয়রের মতে, এই প্রশ্ন অমূলক। তাঁর কথায়, ‘‘ওই কাজের দায়িত্ব পেয়েছে আবাসন দফতর। আমি আবাসনমন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়রও। আবাসন দফতরের প্রধান সচিব আবার কলকাতার পুর কমিশনারও। দু’টো দফতরের কাজের সমন্বয় থাকলে দ্রুত কাজ করা সম্ভব হবে।’’
কী ভাবে?
শোভনবাবুর ব্যাখ্যা, কলকাতা পুরসভায় অনেক দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেক্ট রয়েছেন। রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতিও। ধস কবলিতদের দ্রুত পুর্নবাসন দিতে সে কারণেই কলকাতা পুরসভার প্রযুক্তি সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
আবাসনমন্ত্রী শোভনবাবু এবং শ্রম ও আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক এ দিন দুপুরে আবাসন দফতরের প্রধান সচিব খলিল আহমেদ, স্থানীয় বিডিও, আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের সিইও এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রতিনিধিদের নিয়ে জামুরিয়া-সহ একাধিক খনি এলাকা পরিদর্শনে যান।
শোভনবাবু জানান, কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছিল ইসিএল-এর অধীনস্থ যে সব খনি এলাকায় ধস ও ধোঁয়া বেরোনোর মতো ঘটনা ঘটেছে, সেই সব এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যেই এই আবাসন গড়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ১৯টি গ্রাম ধসের কবলে পড়েছে। আতঙ্কে ভুগছেন মানুষ। এই সব গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। একটি বাড়িতে ১৬টি করে ফ্ল্যাট থাকবে।
ইসিএল-র সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, কেন্দ্রীয় সরকার পুনর্বাসন দেওয়ার ঘোষণা করার পরে জমি বাছাই এবং বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া
হয় আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন
পর্ষদ (এডিডিএ)-কে। প্রায় দু’দশক আগেই ৩৩ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের আওতাভুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই সংখ্যাটা এখন বেড়ে গিয়েছে।
আবাসন দফতর সূত্রের খবর, কোন জমিতে ওই ৩৮ হাজার ফ্ল্যাট হবে তার জন্য ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেডের (ইসিএল) কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। মেয়র বলেন, ‘‘যে এলাকায় ওই সব আবাসন গড়ে তোলা হবে, সেখানে ভবিষ্যতে যাতে কয়লা তোলার কাজ শুরু না হয় তা-ও নিশ্চিত করতে হবে ইসিএলকে।’’ এবং সেই মর্মেই খনি কতৃর্পক্ষের কাছে ছাড়পত্র নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। রাজ্যের মুখ্যসচিব আগেই এ সব নিয়ে খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ৫৫০ একর জমির ছাড়পত্র মিলেছে ইসিএল-এর কাছ থেকে। এর মধ্যে ৩০০ একরেরও কিছু বেশি জমি বাড়ি তৈরির জন্য প্রস্তুত আছে। তবে সব জমি এক লপ্তে নয়, ছাড়া ছাড়া। প্রয়োজনীয় বাকি জমি এখনও ইসিএলের ছাড়পত্রের অপেক্ষায়। তবে তারা জানিয়েছে, পুনর্বাসনের কাজে তাদের সহায়তা মিলবে।
এলাকা পরিদর্শনের পর আবাসনমন্ত্রী জানান, দামোদরের তীরে এক লপ্তে প্রায় ৬৫৫ একরেরও বেশি জমি রয়েছে। ওই জমির ছাড়পত্র নিতে হবে ইসিএলের কাছ থেকে। সেই জমি আবাসন তৈরির উপযুক্ত করে তোলার জন্য দরপত্র ডাকা হবে। শোভনবাবু বলেন, ‘‘এত বড় কাজ। দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে এখন থেকেই পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করে দেওয়া হচ্ছে।’’ এক দিকে ছাড়পত্র নেওয়া, অন্য দিকে আবাসনের ভিত খোঁড়ার কাজ চলবে। বাড়ি তৈরির পরে সেখান জল-নিকাশি ইত্যাদির ব্যবস্থা করে তবেই সেগুলি হস্তান্তর করা হবে। পরিকল্পনায় এ সবও ধরা রয়েছে।