কাঞ্চনজঙ্ঘাকে হাসতে দিন, বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

উত্তরবঙ্গের পুলিশের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভিড় ছিল। মমতা এবং বিনয়ের বক্তব্যের মধ্যে ছিল জনতার উল্লাসও। মুখ্যমন্ত্রী যখন পাহাড়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার কথা ঘোষণা করেন, তখন হাততালিও পড়েছে বিস্তর।

Advertisement

কিশোর সাহা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৬
Share:

পথে: দার্জিলিঙের রাস্তায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

আট মাস পরে দার্জিলিঙে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা পথ জুড়ে তাঁকে স্বাগত জানাতে ভিড় হয়েছে। এমনকী, বুধবার দার্জিলিঙের অনুষ্ঠানে তিনি যখন মঞ্চে, তখনও ম্যাল ভর্তি মানুষ। এত কিছুর পরেও কিন্তু পাহাড়ে স্থায়ী শান্তির জন্য আবেদন করলেন মমতা। বললেন, ‘‘যা চাইছেন তাই দেব, শুধু শান্তি বজায় রাখতে হবে!’’

Advertisement

এ বারের আন্দোলনে টানা ১০৪ দিন বন্‌ধ ছিল পাহাড়ে। যার ফলে পর্যটন থেকে শুরু করে যাবতীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামে। সাধারণ মানুষের হাতে না ছিল টাকা, না ছিল খাবার। বন্‌ধ উঠে গেলে নতুন করে উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করতে বিনয় তামাঙ্গকে কেয়ারটেকার চেয়ারম্যান করে জিটিএ-র অস্থায়ী বোর্ড গঠন করা হয়। তার পরে আপাত ভাবে সবই স্বাভাবিক লাগলেও বিমল গুরুঙ্গের সমর্থক কট্টরপন্থীদের নিয়ে অস্বস্তির চোরাস্রোত ছিলই। এ দিন ম্যালের অনুষ্ঠানের পরে প্রশ্ন উঠল, তা হলে কি মুখ্যমন্ত্রী সেই অস্বস্তির কথাই মনে পড়িয়ে দিলেন?

অথচ উত্তরবঙ্গের পুলিশের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভিড় ছিল। মমতা এবং বিনয়ের বক্তব্যের মধ্যে ছিল জনতার উল্লাসও। মুখ্যমন্ত্রী যখন পাহাড়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার কথা ঘোষণা করেন, তখন হাততালিও পড়েছে বিস্তর। এ দিন সকালে হাঁটতে হাঁটতে গুরুঙ্গের খাসতালুক সিংমারি ফাঁড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। এই সিংমারিতেই পোস্টেড ছিলেন এসআই অমিতাভ মালিক, গুরুঙ্গ-পাকড়াও অভিযানে গিয়ে যিনি প্রাণ হারান।

Advertisement

আরও পড়ুন: দুমড়ে গেল গাড়ি, আহত মোদীর স্ত্রী

এত কিছুর পরেও কিন্তু অস্বস্তিটা অস্বীকার করতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন অনুষ্ঠান-মঞ্চেই বিনয় তামাঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীকে আর্জি জানান গ্লোবাল বিজনেস সামিটের ঢঙে দার্জিলিঙেও শিল্পপতিদের ডেকে সভা হোক। পাহাড়ে তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের পরিবেশ রয়েছে। তার প্রসারের আর্জিও জানান। সেই আর্জি মেনে নিয়েও মমতা জানান, শিল্পপতিরা পাহাড়ে আসতে দ্বিধাগ্রস্ত। বলেন, ‘‘শিল্পপতিরা বিনিয়োগ করতে উদ্বিগ্ন। এক দিকে শিল্প হবে, আর এক দিকে হঠাৎ করে বন্‌ধ হবে, সব জ্বালিয়ে দেওয়া হবে— তা তো হতে পারে না। আগে শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘আপনাদের সব দাবি বিবেচনা করা হবে। কিন্তু পাহাড়ে যেন আর বন্‌ধ না হয়।’’ বললেন, ‘‘সবাই মিলেমিশে থাকবেন। শান্তি রাখবেন। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে হাসতে দিন।’’

মঞ্চে কোনও বক্তব্য না রাখলেও অনুষ্ঠানের শেষে জিএনএলএফের সভাপতি মন ঘিসিঙ্গও শান্তি বজায় রাখার কথাই বলেছেন। মন বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষকে নিজেদের ঘর রক্ষা করতেই হবে। শান্ত পাহাড়েই উন্নয়ন সম্ভব। অশান্তিতে কিছুই আদায় হয় না।’’

পাহাড়ের লোকজনেরা মনে করছেন, এ দিন গুরুঙ্গপন্থীদের বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গোর্খাল্যান্ডের নামে হিংসাত্মক আন্দোলন করলে আখেরে যে পাহাড়ের মানুষের আর্থিক ক্ষতি বাড়বে, সেটাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই বার্তা আম পাহাড়বাসীর কাছে কতটা পৌঁছবে? ম্যালের চা বিক্রেতা শ্রাবণ শর্মা থেকে বাদামের ফেরিওয়ালা সবিতা লামার মতো অনেকেই বললেন, ‘‘জুন মাস থেকে টানা গোলমাল। সেই বন্‌ধের ধকল এখনও পুরো কাটেনি। টাকা শুধু জিটিএ-কে দিলে হবে না, তা যাতে গরিব-মধ্যবিত্ত অবধি পৌঁছয়, সেটাও দেখতে হবে।’’ পাহাড়ের মানুষ মনে করছেন, একমাত্র তা হলেই উন্নয়নও হবে, পাহাড়ও হাসতে পারে।

এ দিন সরকারি মঞ্চ থেকে বিজেপির নাম করেই খোঁচা দিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি গোর্খাল্যান্ডের কথা বলে এখানকার সাংসদ আসন নিয়ে বসে আছে। আমি কিন্তু এখানে ভোট নিতে আসি না। দার্জিলিং কেমন আছে দেখতে আসি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন