পাহাড়ে সরকারি দফতরগুলোর খোলনলচে বদলে ফেলতে চাইছে রাজ্য সরকার। পাহাড়ে কর্মরত অফিসারদের কলকাতা বা তার কাছাকাছি জেলাগুলিতে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। পাহাড়ে তাঁদের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে সমতলের অফিসারদের।
প্রশাসন মনে করছে, দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা পাহাড়ে সরকারি দফতরে চাকরি করেছেন, তাঁদের একটা বড় অংশের মধ্যে জিটিএ-র প্রতি আনুগত্য তৈরি হয়েছে। তাই সেখানকার প্রশাসনিক কাজকর্মের ঠিক ছবি নবান্নে পৌঁছচ্ছে না। জিটিএ-তে বিশেষ অডিটের প্রাথমিক কিছু তথ্য জানার পরে সরকারের এই বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা। সূত্রের খবর, কাজের বরাত দেওয়া নিয়ে অডিটে বেশ কিছু গরমিলও ধরা পড়েছে। ই-টেন্ডার তো দূরের কথা, অনেক ক্ষেত্রে একক দরপত্রেই পছন্দের ঠিকাদারদের লক্ষাধিক টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে। এমনকী, বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে টাকা খরচের কথা বলা হলেও উপভোক্তাদের কোনও তথ্য মেলেনি।
সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, পাহাড়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করেছেন এমন অফিসাররা যাতে কোনও ভাবেই অডিট দলের উপরে প্রভাব ফেলতে না পারেন, সে জন্যই তাঁদের উত্তরবঙ্গ থেকেই সরিয়ে কলকাতার কাছাকাছি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে।
তবে দার্জিলিঙে মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিন মোর্চার তাণ্ডবের পরে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভও এই রদবদলের একটি কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। সে দিন মোর্চা যে এতটাই গণ্ডগোল করতে পারে, তা পুলিশ প্রশাসন আগে থেকে আঁচ করতে পারেনি। তার পরপরই প্রশাসনের সবোর্চ্চ স্তরের নির্দেশে জিটিএ-র চিফ এগজিকিউটিভ, এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর কিংবা জয়েন্ট এগজিকিউটিভ ডিরেক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ অফিসারদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলি করে দেওয়া হয়।
পাহাড়ে কর্মরত পূর্ত, খাদ্য, বিদ্যুৎ, জনস্বাস্থ্য-সহ নানা দফতরের আধিকারিকদের বদলির তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরি করতে বলেছে নবান্ন। জিটিএ-র পাশাপাশি দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াং পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসারকেও বদলি করা হয়েছে। সূত্র বলছে, জিটিএ-র পরে মোর্চার দখলে থাকা ওই তিন পুরসভাতেও বিশেষ অডিট শুরু হবে বলেই নবান্নের এই পদক্ষেপ।
পুলিশেও আরও বেশি করে সমতলের অফিসারদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাহাড়ে গোয়েন্দা বিভাগও ঢেলে সাজতে উদ্যোগী হয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। কলকাতার মতো পাহাড়েও গোয়েন্দা বিভাগের মাথায় এডিজি পদ মর্যাদার অফিসার বসাতে চাইছে নবান্ন।