Mamata Banerjee

গরিব-বড়লোক নির্বিশেষে রাজ্যের সব মেয়েই এখন কন্যাশ্রীর আওতায়

এখন থেকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকছে না। সকলেই কন্যাশ্রী পাবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ১৪:৩৯
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

পরিবারিক আয় কত, এটা দিয়ে আর কন্যাশ্রীর যোগ্যতা বিচার হবে না। আয়ের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার ঘোষণা করে দিলেন, ধনী-গরিব-মধ্যবিত্ত পরিবার নির্বিশেষে রাজ্যের সব কন্যাই এখন থেকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায়।

Advertisement

শুধু তাই নয়— কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা এবং কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করে মেয়েদের চাকরির ব্যবস্থাও পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় স্বভাবতই খুশির হাসি আরও খানিকটা চওড়া হল ছাত্রীমহলে। গড়ে দৈনিক ৪১০ টাকার বেশি (বছরে দেড় লাখের বেশি) পারিবারিক আয় হলে, এত দিন কন্যাশ্রীর সুবিধা মিলত না। এ বার এই বাঁধ ভেঙে দিলেন মমতা।

সামনের বছর লোকসভা এবং তার দু’বছর পর এ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে রাজ্যে জমি বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। তার ফলও মিলছে। এ অবস্থায় বিজেপি-কে ঠেকাতে শুধু যে এনআরসি-গোরক্ষা-ডিমনিটাইজেশন নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুললেই হবে না, তা বিলক্ষণ জানেন মমতা। সরকারের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচিকে বাড়াতেও হবে। সে দিক থেকে মমতার এ দিনের ঘোষণাকে গুরুত্বপূর্ণ মাস্টারস্ট্রোক বলেই মনে করছেন অনেকে।

Advertisement

মঙ্গলবার কন্যাশ্রী দিবস উপলক্ষে নেতাজি ইন্ডোরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল থেকে ছাত্রীরা এসেছিল। মমতা তাদের সামনেই ঘোষণা করেন, এখন থেকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকছে না। সকলেই কন্যাশ্রী পাবে। সরকারি হিসাব মতো এই মুহূর্তে প্রায় ৫০ লাখ ছাত্রী কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রীর পারিবারিক আয় বছরে দেড় লাখ টাকার বেশি হলে হতো না। সেই ঊর্ধ্বসীমাই এ বার তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর ফলে আরও ৩ লাখ ছাত্রী কন্যাশ্রীর আওতায় আসবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মমতার দাবি, কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু হওয়ার পর স্কুলছুট ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ কমেছে।

আরও খবর: অশান্তি অতীত, বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের কাজ শুরু হয়ে গেল ভাঙড়ে

নেতাজি ইন্ডোরের মঞ্চ থেকে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এই কন্যাশ্রীর মেয়েরা রাজ্যের গর্ব। দেশের গর্ব। বিশ্বের গর্ব। এরা সব কিছু জয় করতে পারে। এবং আরও জয় করবে।’’ এই প্রসঙ্গে তিনি মহিলা সংরক্ষণ বিলের কথাও তুলে ধরেন। মমতা বলেন, ‘‘মেয়েদের আমরা গুরুত্ব দিই। ভোট এলে মাঝেমাঝে ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণের কথা ওঠে। কিন্তু, কোনও আইন পাশ হওয়ার আগেই সংসদে আমাদের তৃণমূলের সাংসদদের মধ্যে কত শতাংশ মহিলা জানেন? ৩৫.২৯ শতাংশ। গোটা দেশে এক নম্বর। বিশ্বেও। সরকার, সংসদ নিয়ম করার আগেই আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। সারা ভারতে হিসাবটা ১২.২ শতাংশ হবে।’’

দেখুন ভিডিয়ো:

এর পরেই মমতা কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় করতে চাই। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর মেয়েদের কোনও চিন্তা করতে হবে না। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে কন্যাশ্রী মেয়েদের ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।’’ এর পরেই তিনি অনুষ্ঠানে হাজির শিক্ষা দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দেন, কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন মেয়েদের ভর্তি হতে কোনও সমস্যা না হয়। শুধু তাই নয়, কারগরি শিক্ষা দফতরকেও তাঁর নির্দেশ, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের যেন ভাল করে বিভিন্ন কাজের ট্রেনিং দেওয়া হয়। যাতে পাশ করার পর মেয়েদের আর বসে থাকতে না হয়। যেন, চাকরি নিশ্চিত হয়। তাঁর কথায়, ‘‘এই মেয়েদের ট্রেনিং দিন। ওরা নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কারও দরজায় ঘুরবে না। এটাই ওদের স্বপ্নের ভোর হবে। আমার ছোট ছোট বোনদের ভবিষ্যৎ গড়ে উঠুক। ওরাই রাজ্য গড়বে।’’

মমতা এ দিন কন্যাশ্রী প্রকল্পের পাশাপাশি রূপশ্রী-র কথাও বলেন। তিনি বলেন, ‘‘১৮ বছর পড়াশোনা করলে কন্যাশ্রীরা এককালীন ২৫ হাজার টাকা পায়। আবার গরিব বাবা-মা মেয়ের বিয়ে দিতে না পারলে আমরা বিয়ের জন্য ২৫ হাজার টাকা দিই। সেটা রূপশ্রী। এ ছাড়া ছেলেমেয়েদের জন্য সবুজসাথীর সাইকেল প্রকল্প তো রয়েইছে।’’

আরও পড়ুন: হুঁশিয়ারি সার! অটো প্রত্যাখানের প্রতিবাদ করায় তরুণীকে চড়, গ্রেফতার চালক

কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় থাকা মেয়েদের তিনি ভাল করে পড়াশোনা করতে বলেন। খেলাধুলোর পাশাপাশি সংস্কৃতির চর্চা এবং নাটক করার কতাও বলেন তিনি। মেয়েদের তিনি বিলেন, ‘‘বিভেদ-দাঙ্গা তোমাদের রুখতে হবে। কন্যাশ্রী ভাগ্য তৈরি করে। আমরা বড়রা কাজ করতে করতে চলে যাব। তোমরা ছোটরা থাকবে।’’ সংসার করার পাশাপাশি যে মেয়েরা বাইরের কাজও করতে পারে, সে কতাও অ দিন বলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। তোমরা লড়বে। তোমরা জিতবে। কেউ তোমাদের নিয়ে ঠাট্টা করলে বলবে, লড়তে পারলে লড়ো, না হলে মানে মানে সরে পড়ো। গ্রাম বাংলায় একটা কথা আছে। সেটাও বলতে পারো। লড়তে পারলে লড়ো, না হলে কঞ্চি আছে, দড়ি আছে, জলে ডুবে মরো।’’

আরও পড়ুন: তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিজেপির হারই দেখছে সমীক্ষা

মুখ্যমন্ত্রীর এই কথার পর হাততালিতে ফেটে পড়ে গোটা নেতাজি ইন্ডোর। খুশিতে আপ্লুত হতে দেখা যায়, নিশা খাতুন, মমতাজ শামীম, সোনিয়া দাস, অঙ্গনা দাসদের। অনুষ্ঠানে হাজির অন্যদের মতো ওরাও কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পায়। জানাল, মুখ্যমন্ত্রীর মুখে বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাকরির প্রতিশ্রুতির কথা শুনে ভবিষ্যতের স্বপ্ন নতুন করে বুনতে শুরু করছে।

বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন