West Bengal Budget 2025

দেবের নির্বাচনে দাঁড়ানোর শর্ত পূরণ করলেন মমতা, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য বাজেট বরাদ্দ ৫০০ কোটি

বুধবার বিধানসভায় বাজেট পেশ করেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে অর্থ বরাদ্দের কথা ঘোষণার পরেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব)।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩৩
Share:

—ফাইল ছবি।

কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতিমতো ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’-এ বিপুল পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ করা হল তাঁর সরকারের বাজেটে। ওই প্রকল্প রূপায়ণে এ বারের বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, ভাঙন রুখতে ‘নদী বন্ধন প্রকল্প’-এও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

Advertisement

বুধবার বিধানসভায় বাজেট পেশ করেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে অর্থ বরাদ্দের কথা ঘোষণার পরেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব)। তিনি বলেন, ‘‘খুব আনন্দ হচ্ছে। স্বপ্নপূরণ হল বলে মনে হচ্ছে। আমি সেই ২০১৪ সাল থেকে এর জন্য লড়াই করে আসছি। ঘাটালের বন্যা নিয়ন্ত্রণ খুব জরুরি ছিল। অনেক রকম প্ল্যান তৈরি হয়েছে, কিন্তু কিছু কাজ হয়নি। তবে দিদি বলেছিলেন, কাজটা রাজ্য সরকার করবে। আজ অর্থ বরাদ্দ ঘোষণা হল। খুব ভাল লাগছে।’’

গত লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে ‘নারাজ’ ছিলেন দেব। নিজেই প্রকাশ্যে সে কথা বলেছিলেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে অসন্তুষ্ট হয়েই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা এবং দলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরেই তিনি মত বদলান। তৃণমূল সূত্রে খবর, মমতা-অভিষেকের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় শুধু গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা নয়, কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়িত না-হওয়া নিয়েও ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেই সময়েই তাঁকে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। পরে ভোটের প্রচারেও মমতা বলেছিলেন, ‘‘দেব আর জুন জিতলে মেদিনীপুরকে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান উপহার দেব।’’ এ-ও বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্র টাকা না-দিলে টাকা দেবে রাজ্য। দিদি ভাইকে তো ফেরাতে পারে না।’’

Advertisement

তা-ই হল। ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের’ জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এ বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যেই ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’-এর শিলান্যাস হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতার ঘোষণার পরেই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্ততি শুরু হয়েছিল। গত বছর থেকেই চলছিল প্রকল্পের চূড়ান্ত ডিপিআর (ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরির কাজ। তার পাশাপাশি, প্রকল্প রূপায়ণে কোথায় কত জমি প্রয়োজন, কতটা সরকারি জমি রয়েছে তার পরিদর্শন শুরু হয়েছিল। জমির মাপজোকের কাজও সারা।

মাস দেড়েক আগেই গঠিত হয়েছে গোটা প্রকল্পের নজরদারির জন্য ‘মনিটরিং কমিটি’। ইতিমধ্যেই ‘পারচেজ কমিটি’ গঠন এবং তার বৈঠকও সেরে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে জমি কেনা নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের লিখিত সম্মতি নেওয়ার পরেই জমি কিনবে প্রশাসন। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন দেব। ওই বৈঠকে মাস্টার প্ল্যান নিয়ে সমস্ত ধরনের আলোচনা হবে। তার পরেই শিলান্যাসের চূড়ান্ত দিনক্ষণ তৈরি হবে বলে খবর জেলা প্রশাসন সূত্রে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

২০১৪ এবং ২০১৯ সালের মতো গত লোকসভা ভোটেও ঘাটালে শাসকদল তৃণমূলের তুরুপের তাস ছিল ‘মাস্টার প্ল্যান।’ সেই ১৯৫৯ সালে মান সিংহ কমিটির রিপোর্টে প্রথম ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা বলা হয়। এই প্রকল্পে সম্মতি দিতে যোজনা কমিশনের ২০ বছর লাগে। তার পর প্রকল্পের সলতে পাকিয়েছিল বামেরা। বাম আমলে টাকা বরাদ্দের পর ঘটা করে প্রকল্পের উদ্বোধনও হয়েছিল। তবে মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে টাকা বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের টালবাহানায় আটকে ছিল গোটা প্রকল্প। এই প্রকল্প নিয়ে এত টানাহ্যাঁচড়া দেখে হতবাক ঘাটালবাসী।

ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘোষণা করেছিলেন, ওই প্রকল্প রাজ্য সরকার একাই কার্যকর করবে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই লোকসভা ভোটের প্রচারের কেন্দ্রে থেকেছে এই মাস্টার প্ল্যান। শাসকদল বিভিন্ন সভা, রোড-শোয়ে মাস্টার প্ল্যানকে প্রচারে টেনে এনেছিল। পিছিয়ে ছিল না বিজেপিও। মাস্টার প্ল্যানের সুফল পেতে তেড়েফুঁড়ে নেমেছিল তারাও। ভোটে জিতলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টাকাতেই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত হবে, এই বলে প্রচার করেছিল বিজেপিও। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। দেবেই ভরসা রেখেছিলেন ঘাটালবাসী।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে দাসপুরে চন্দ্রেশ্বর খালের ছয় কিলোমিটার নতুন করে খনন করে শিলাবতীর সঙ্গে সংযোগ করা হবে। তার পাশাপাশি ঘাটাল শহরে শিলাবতী নদীর পশ্চিম পাড়ে নদীর ভিতর থেকে উঁচু পাঁচিল তৈরি হবে। এর সঙ্গেই ঘাটাল শহরে দু’টি পাম্প হাউস তৈরি হবে। দাসপুর-২ ব্লকে চারটি এবং ঘাটাল শহরে একটি স্লুইস গেট তৈরি হবে। এ ছাড়াও মাস্টার প্ল্যান প্রকল্প এলাকায় একাধিক নদী ও খাল সংস্কারও হবে। একই সঙ্গে চলবে এই সব কাজ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement