গ্রামের আদর্শে বাছাবাছি চান না মমতা

ঠিক দু’বছর আগে লালকেল্লার সামনে তাঁর প্রথম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ‘সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, প্রত্যেক সাংসদকে একটি গ্রাম বেছে নিয়ে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেই প্রকল্প এখন বিশ বাঁও জলে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০১
Share:

ঠিক দু’বছর আগে লালকেল্লার সামনে তাঁর প্রথম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ‘সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, প্রত্যেক সাংসদকে একটি গ্রাম বেছে নিয়ে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেই প্রকল্প এখন বিশ বাঁও জলে।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। একজন সাংসদ শুধু একটা গ্রামকেই বেছে নেবেন আদর্শ হিসাবে, তা হলে বাকি গ্রামগুলি কি বানের জলে ভেসে যাবে? মমতা একা নন, এই প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন দলের বহু সাংসদের আপত্তি আছে। এমনকী শাসক বিজেপির বেশ কিছু সাংসদ কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে।

নরেন্দ্র মোদীকে বিজেপি-র মধ্যপ্রদেশের সাংসদেরা বলেছেন, তাঁদের পক্ষে গত দু’বছরে এই প্রকল্প কেন রূপায়ণ করা সম্ভব হয়নি। প্রথমত, কেন্দ্রীয় সরকার আলাদা করে এই প্রকল্পের জন্য কোনও অর্থ দিচ্ছে না। এমপিল্যাড সহ বিভিন্ন চালু প্রকল্পের টাকা থেকেই মাছের তেলে মাছ ভাজতে বলা হয়েছে। ফলে অন্য প্রকল্প থেকে টাকা নিয়ে আদর্শ গ্রাম যোজনায় খরচা করতে হবে। দ্বিতীয়ত সাংসদেরা বলছেন, একটা গ্রামকে আদর্শ করায় অন্য গ্রামগুলির ভোটাররা বলতে পারেন, যে আমরা কেন ভোট দেব? যে গ্রামকে আদর্শ গ্রাম করেছ তার সমর্থন নিয়েই ভোট জেতো!

Advertisement

এ-সব প্রশ্ন আও উঠেছিল। কথা ছিল, ২০১৬ সালের মধ্যে প্রথম দফায় প্রতি সাংসদ একটি করে গ্রামকে আদর্শ গ্রাম করে ফেলবেন এবং তার পরে দ্বিতীয় দফায় আর একটি গ্রামকে ‘দত্তক’ নেবেন। বিজেপি সূত্র অনুসারে, প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পে সাড়া দিয়ে খোদ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় হরিয়ানার দুটি গ্রাম দত্তক নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি প্রকল্পের আওতায় পড়েন না, কিন্তু তিনি এই প্রকল্পের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট ৭৯৫ জন সাংসদের মধ্যে ৯৪ জন প্রথম দফাতেই কোনও গ্রাম দত্তক নেননি। এঁদের মধ্যে ৪৬ জনই ছিলেন তৃণমূলের।

এ বার প্রধানমন্ত্রী নতুন করে চিঠি দিয়ে সমস্ত সাংসদকে বলেছেন, দু’বছর হয়ে গিয়েছে, এখন নতুন আর একটি গ্রামকে দত্তক নিন। কিন্তু অধিকাংশ সাংসদ, এমনকী তাঁর নিজের মন্ত্রিসভার অনেক মন্ত্রীও এ-পর্যন্ত হাত গুটিয়ে বসে আছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী গোটা প্রকল্প পর্যালোচনা করতে চলেছেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেছেন, রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকার আদর্শ গ্রাম গঠনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করলে তাঁরা একটি মডেল গ্রাম গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে পারেন, কিন্তু সব গ্রামকেই ধারাবাহিক ভাবে আদর্শ গ্রাম করে গড়ে তুলতে হবে। লালুপ্রসাদের কথায়, এটা মহামূর্খের প্রস্তাব। এটা কি রেলের আদর্শ প্ল্যাটফর্ম বানানো? গোটা দেশের কয়েকটা আদর্শ গ্রাম হবে, বাকি গ্রামগুলি তো তা হলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু করে দেবে। প্রসঙ্গত, ভারতে এখন গ্রামের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছ’লাখ।

আবার যে সব গ্রাম বেছে নেওয়া হয়েছে, তাদের হালও সবক্ষেত্রে যথেষ্ট ভাল হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারাণসী নির্বাচন কেন্দ্রে জোয়াপুর গ্রাম দত্তক নিয়েছিলেন। তারপর দ্বিতীয় দফায় নাগেপুর নামে আর একটি গ্রাম দত্তক নিয়ে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু প্রথম গ্রামের পরিস্থিতি এখনও খুব উৎসাহব্যঞ্জক নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কেন্দ্রে অবস্থাও একই। অন্যদিকে, সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধী নিজের নিজের কেন্দ্রে একটি গ্রাম দত্তক নিয়েছেন। কিন্তু অহমেদ পটেল জানিয়েছেন, তিনি দত্তক নিলেও গুজরাত সরকারেরই সাহায্য মিলছে না।

এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে এক চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি এতগুলি গ্রামের মধ্যে কতিপয় গ্রামকে আলাদা করে সেখানে বেশি বেশি করে গুড় ঢালতে পারবেন না। কারণ এর ফলে গ্রামগুলির মধ্যে একটা অসাম্য তৈরি করা হবে, যাকে বলা যায় ‘হ্যাভ ও হ্যাভ নট-এর সমস্যা’। মমতার বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ৪০ হাজারের বেশি গ্রাম। প্রতিটি গ্রামই আমার গ্রাম। রাজ্য সরকার চায় প্রত্যেকটা গ্রামকেই আদর্শ করতে। একটা গ্রাম আদর্শ আর অন্য একটা গ্রাম অনাদর্শ, এ কেমন কথা?’’

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সুলতান আহমেদ আদর্শ গ্রাম গঠনের কাজ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন, কিন্তু তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব এই কাজটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে সুলতানও তাঁর নির্বাচন কেন্দ্রে এ কাজ আর করছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন