বুধবার গাঁধী-মূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের সভায়। সভার আগে মিছিলে প্রদীপ আদকের তোলা ছবি।
তৃণমূলের আয়-ব্যয়ের হিসেব চেয়ে ফের মমতার আক্রমণের নিশানায় সিবিআই।
বুধবার বিকেলে মৌলালি মোড় থেকে গাঁধীমূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত মিছিল করেন মমতা। মিছিলের শেষে সভায় সিবিআই এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধোনা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার কাছে হিসেব চাইছে! তুই চোরেদের ঠাকুরদাদা, আমার কাছে জবাব চাইছে? এটা কি ওদের (সিবিআই) এক্তিয়ারে পড়ে?’’
মমতার এ দিনের এই বিস্ফোরণ কেন, তা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেই একাধিক মত রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, আয়কর দফতর এবং নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া দলের আয়-ব্যয়ের হিসেবে যে বিস্তর গলদ রয়েছে, সেটা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। এর জেরে দলের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে তা নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। পুরভোটে যাতে এই সংশয়ের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে জন্যই এ দিন সিবিআই-কে আক্রমণ করে দলকে সাহস জোগাতে চেয়েছেন মমতা। দলের অন্য অংশের আবার বক্তব্য, হিসেবে কোনও গলদই নেই। তাই এর আগে মমতা স্পষ্ট বলেছেন, সিবিআই চাইলে তাঁকে ডেকে পাঠাক, তিনি সব প্রশ্নের জবাব দেবেন। এ দিন সেই প্রত্যয়টাই ফের দলীয় কর্মীদের তো বটেই, বিরোধীদেরও শুনিয়ে রাখলেন তিনি।
আমার কাছে হিসেব চাইছে! তুই চোরেদের ঠাকুরদাদা, আমার
কাছে জবাব চাইছে? এটা কি ওদের (সিবিআই) এক্তিয়ারে পড়ে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সিবিআইয়ের প্রতি অবশ্য এর আগেও খড়্গহস্ত হয়েছেন মমতা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তভার নেওয়ার পর থেকেই তাদের প্রতি বিষোদ্গার করতে শুরু করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর নির্দেশে কলকাতায় সিবিআইয়ের দফতরের সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছে দল। তাতে সামিল হয়েছেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুরসভার চেয়ারপার্সন। তৃণমূলের অনেকেই তখন বলেছিলেন, তদন্তের জল কোন দিকে গড়াবে, এই আতঙ্ক থেকেই সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মমতা।
তার পর সিবিআইয়ের হাতে একের পর এক গ্রেফতার হন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ। আক্রমণের ঝাঁঝও বাড়তে থাকে মমতার। কিন্তু সম্প্রতি সিবিআই তদন্তে যেন কিছুটা ঢিলে পড়েছিল। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ৯ মাস পরে মমতা আচমকা দিল্লি গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জেরেই এমন ঘটনা কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। সিবিআই সূত্র থেকে অবশ্য দাবি করা হয়, তদন্ত চলছে নিজের মতোই। এবং গত সোমবার সিবিআই তৃণমূলের নবনিযুক্ত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীকে চিঠি পাঠিয়ে চার দিনের মধ্যে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসেব জমা দিতে বলে। সেই নোটিস এবং দলের অডিট রিপোর্ট নিয়ে ওঠা প্রশ্ন ফের তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের মনে ভয় ধরিয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি। তাঁরা মমতার এ দিনের প্রতিক্রিয়াকেতার প্রতিফলন হিসেবেই দেখছেন। বিজেপি নেতা তথাগত রায় যেমন বলেছেন, ‘‘সিবিআই হিসেব দেখতে চাইলে অসুবিধার কী আছে? আসলে ভয় পেয়ে গিয়ে আর্তনাদ করছেন মমতা।’’
সারদা নিয়ে সিবিআইয়ের নড়াচড়া ফের শুরু হতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধেও নতুন করে তোপ দাগা শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রী। মাঝে কিছু দিন যা বন্ধ ছিল। সংসদেও কৌশলগত ভাবে মোদী সরকারের সুবিধা করে দিচ্ছিল তৃণমূল। খনি বিলে তৃণমূলের সমর্থন পেয়েই রাজ্যসভার বাধা পেরিয়ে যায় মোদী সরকার। তৃণমূল কিন্তু এখন আবার জমি বিল নিয়ে নতুন করে সরব হয়েছে। এ দিন তৃণমূলের মিছিলের ঘোষিত উদ্দেশ্যই ছিল জমি বিলের বিরোধিতা করা।
তার পর জনসভায় মমতা অভিযোগ করেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললেই কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হচ্ছে। সিবিআই, আয়কর, ইডি, ছাড়াও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। দিল্লির বিধানসভা ভোটে কত খরচ হয়েছিল? আর এখন আমার কাছে হিসেব চাইছে!’’ সিবিআইয়ের পাঠানো নোটিসের জবাব যে তৃণমূল দেবে না, তার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভোট এলেই ওরা নোটিস পাঠাবে। সব নোটিস দিস্তা করে দিল্লিতে প্যাক করে ফেরত পাঠিয়ে দেব। আয়-ব্যয়ের রিপোর্টে কী দরকার? তোমার যদি দরকার
হয়, তবে আয়কর দফতর থেকে নিয়ে নাও। আমরা তো রিপোর্ট জমা দিয়ে দিয়েছি।’’