মুকুলের তোপে পিসি-ভাইপো, দ্রুত জবাবও

তৃণমূল ভবনে বসে একের পর এক বিরোধীর হাতে শাসক দলের ঝান্ডা ধরিয়ে যিনি বলতেন, উন্নয়নের যজ্ঞে সকলে সামিল হচ্ছেন, দল বদলে ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে সেই মুকুল রায়ই এ বার বাংলায় ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’ আনার ডাক দিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৮
Share:

জনসভায় মুকুল। শুক্রবার রানি রাসমণি রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ।

তৃণমূল ভবনে বসে একের পর এক বিরোধীর হাতে শাসক দলের ঝান্ডা ধরিয়ে যিনি বলতেন, উন্নয়নের যজ্ঞে সকলে সামিল হচ্ছেন, দল বদলে ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে সেই মুকুল রায়ই এ বার বাংলায় ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’ আনার ডাক দিলেন। তাঁর অভিযোগ, যে সব কথা বলে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, তার কোনওটাই বাস্তবে হয়নি। শিক্ষায় এখনও দলতন্ত্র, শিল্পে এখনও মন্দা চলছে। উল্টে কেউ বিরোধিতা করলেই পুলিশ দিয়ে তাঁদের হয়রান করা হচ্ছে।

Advertisement

বিজেপি-তে যোগদানের পরে মুকুল কেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন না, তা নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। নতুন দলের হয়ে তাঁর প্রথম জনসভায় শুক্রবার মুকুল অবশ্য সরাসরি নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর ঘোষণা, ২০২১-এ রাজ্যে সরকার গড়বে বিজেপি-ই।

রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বিজেপি-র মঞ্চ থেকে মুকুলের তির যে রাজ্যের শাসক পক্ষের গায়ে বিঁধেছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে দ্রুত প্রতিক্রিয়া থেকেই। মুকুল বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরে তৃণমূলের সুচিন্তিত কৌশল ছিল, তাঁকে গুরুত্বহীন প্রমাণ করতে পাল্টা কিছুই না বলা। কিন্তু এ দিন মুকুলকে জবাব দিতে তৃণমূল ভবনে মুখ খুলেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এমনকী, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চ থেকে স্বয়ং মমতা নাম না করে জবাব দিয়েছেন মুকুলের তোপেরই। আবার ‘বিশ্ববাংলা’র সঙ্গে অভিষেকের নাম জড়িয়ে বিতর্কের জবাব দিতে নবান্নে সাংবাদিকদের সামনে পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে। মুকুল ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিষেকের আইনজীবীও।

Advertisement

ঘটনাচক্রে এ দিন ছিল শহরে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন। তার কয়েক ঘণ্টা আগে সমাবেশ থেকে মুকুল বলেন, ‘‘২০০৭-এ মানুষ মারা যাচ্ছিল। আর এক দিকে চলচ্চিত্র উৎসবে ঘণ্টা বাজাতে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ একই দৃশ্য! শুধু মানুষটা পাল্টে গিয়েছে!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ডেঙ্গিতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আর নাচা-গানা-খাওয়া, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!’’

মন্তব্য কানে গিয়ে থাকবে মুখ্যমন্ত্রী মমতারও। নইলে আর উৎসবের মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, কমল হাসনদের বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেন বলবেন, ‘‘অনেকে বলছে, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কেন হবে? বারো মাসে তেরো পার্বণ। বাংলায় নানা উৎসব হবে। হিংসা যারা করে, করতে দিন!’’ আর মুকুলকে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবুর কটাক্ষ, ‘‘তুমি আসলে নেই সে তুমি!’’ প্রাক্তনকে বিঁধতে গিয়ে পার্থবাবু এমনও বলে ফেলেছেন যে, জনপ্রতিনিধি ভাঙিয়ে দল ভারী করতেন মুকুল! অথচ তখন সে কাজে পুরোদস্তুর সিলমোহর ছিল তৃণমূলের।

ডেলোর বাংলোয় সারদা-কর্তার সঙ্গে মমতার বৈঠক, বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় সংস্থার সঙ্গে পার্থবাবুর পৃষ্ঠপোষকতার পুজোর যোগ— নানা অস্ত্রই ব্যবহার করেছেন মুকুল। বলেছেন, ‘‘পুলিশ-গোয়েন্দাদের ব্যবহার করে বিরোধীদের দমনের রাজনীতি সিপিএম আমলেও হয়নি। বাংলার জেলগুলি ভর্তি হয়ে আছে বিরোধীদের দিয়ে। তার মধ্যে তৃণমূলও আছে। গণতন্ত্রে যদি তোমার সরকার চালানোর অধিকার থাকে, তা হলে আইনত বিরোধিতার অধিকারও থাকে।’’ প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতার সপার্ষদ বিদেশ সফর নিয়েও। মুকুলের কটাক্ষ, ‘‘এক জনও পাতে দেওয়ার মতো শিল্পপতি আসেননি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন কৃষি আর শিল্প হচ্ছে হাসি আর খুশি। হাসিও মিলিয়ে গিয়েছে, খুশিও চোখে পড়ছে না!’’

দুবাই হয়ে লন্ডন উড়ে যাওয়ার আগে প্রাক্তন সহকর্মীর এই অভিযোগেরও ব্যাখ্যা দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, আমস্টারডামে ‘কন্যাশ্রী’র জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার না নিতে গেলে বাংলার অসম্মান হতো। তিনি বিদেশ যেতে খুব আগ্রহী না হলেও শিল্পের জন্য মাঝে মাঝে যেতে হয়। আর এ বার ‘বাংলার গর্ব’ সিস্টার নিবেদিতার সার্ধশতবর্ষে তাঁকে হাজির থাকার বিশেষ অনুরোধ জানিয়েই লন্ডনে অনুষ্ঠানের তারিখ বদলে ১২ নভেম্বর করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন