টেমসের তীরে প্রাতর্ভ্রমণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র
কলকাতাকে লন্ডন বানাতে তাঁর ‘আকাঙ্ক্ষা’ প্রায় প্রবাদবাক্যে পরিণত। কলকাতার গঙ্গাকে লন্ডনের টেমস নদীর ধাঁচে সাজাতে চান তিনি। লন্ডনে এসে টেমসের পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে দুই নদীর তুলনা টানলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী রকম?
আজ সকালেও গত কালের মতো হোটেল থেকে হাঁটতে বেরিয়ে মমতা সোজা চলে যান টেমস নদীর পাড়ে। হাঁটতে হাঁটতেই ইতস্তত নানা প্রতিক্রিয়া। যেমন, ‘‘আমাদের গঙ্গা এর থেকে অনেক চওড়া। আমরা যে ভাবে গঙ্গার পাড়কে সাজিয়ে তুলছি সেটা এখানকার থেকে কিছুমাত্র কম যায় না।’’ এবং সর্বোপরি, ‘‘এখানেও তো দেখছি এ দিক-ও দিক জঞ্জাল পড়ে আছে। আমাদের হলেই দোষ।’’ লন্ডন-আই দেখে তিনি বলেন, ‘‘আমরাও এ রকম করতে চেয়েছি কলকাতায়। কিন্তু আদালতের নির্দেশে সেই কাজ বন্ধ আছে।’ ’
গত কালই লন্ডনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মুখ্যমন্ত্রীর মনে হয়েছিল, এখানে দারিদ্র কম, লোকসংখ্যা কম, ধোঁয়াধুলো প্রায় নেই। তাই এ সব জায়গার সঙ্গে কলকাতার তুলনা টানা অযৌক্তিক হবে। আজও ঘুরেফিরে তেমনই মত প্রকাশ করলেন তিনি। কলকাতাকে লন্ডন বানানোর ক্ষেত্রে যাঁর ভূমিকা বেশি থাকার কথা, কলকাতার মেয়র সেই শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য তাঁর নেত্রীর সঙ্গে হাঁটা শুরু করেও শেষ করেননি। টেমস পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই মাঝপথে তিনি ফিরে যান।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের মৃত্যুতে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডনের ডায়েরিতেও কিছুটা বদল হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, তা হল না। অনুষ্ঠান হতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে বিস্তর আলোচনার পরে ভারতীয় হাইকমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী গানবাজনা, ভোজসভা, সবই বন্ধ করে দেওয়া হয়। ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়মে বিপুল অর্থব্যয়ে বিশাল আয়োজন আক্ষরিক অর্থেই বিফলে যায়।
তবে, মুখ্যমন্ত্রীর দিন অবশ্য একবারে নিষ্ফলা যায়নি। দুপুরে লর্ড স্বরাজ পল সেন্ট জেম’স কোর্ট হোটেলে মুখ্যমন্ত্রীর অ্যাপার্টমেন্টে এসে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। মমতার কাছে লর্ডের প্রথম কথা: ‘‘বলুন, পশ্চিমবঙ্গের জন্য আমি কী করতে পারি?’’ মুখ্যমন্ত্রী উত্তরে বলেন, ‘‘আপনি কী ধরনের কাজে আগ্রহী সেটা আমাকে জানান।’’ আলোচনা শুরু হয়। পরে অর্থ তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, আপাতত পাঁচটি ক্ষেত্রে লর্ড স্বরাজ পল সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তার মধ্যে আছে ই-রিকশা, বায়ো টয়লেট, কম্পোজিট হাউজিং (তৈরি বাড়িকে প্রয়োজনমতো অন্যত্র বসানো যাবে), লন্ডন চিড়িয়াখানার মতোই কলকাতার চিড়িয়াখানার উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা দান, স্বরাজ পল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সেই ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনস্টার-এর সঙ্গে রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা ইত্যাদি। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য চান, কলকাতা বা যাদবপুরের মধ্যে কোনও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ওই সমঝোতা হোক।
পশ্চিমবঙ্গের জন্য কিছু করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন ডাচেস অব ইয়র্ক সারা-ও। গত কাল ডিউক অব ইয়র্ক, রাজকুমার অ্যান্ড্রুর আমন্ত্রণে বাকিংহাম প্যালেসে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে মমতাকে অবাক করে অ্যান্ড্রুর প্রাক্তন স্ত্রী সারা তাঁর হাতে তুলে দেন অর্কিডের একটি তোড়া আর নিজের হাতে লেখা চিঠি। এক পাতার সেই চিঠিতে সারা লিখেছেন, ‘‘আপনি এক জন বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।... আমাদের নিজেদের বাগানের ফুল আপনাকে দিলাম।’’ চিঠিতে সারা আরও লিখেছেন, ‘‘আমি পশ্চিমবঙ্গের জন্য কাজ করতে চাই।’’ অপ্রত্যাশিত এই সৌজন্য এবং প্রস্তাবে স্বাভাবিক ভাবেই আপ্লুত মমতা।
এ দিন স্বরাজ পলের সঙ্গে বৈঠকের পরেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন ম্যাটিক্স সার প্রকল্পের অন্যতম কর্ণধার নিশান্ত কানোরিয়া। পানাগড়ে ইতিমধ্যেই সার প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘‘আপনারা পশ্চিমবঙ্গে ফার্টিলাইজার হাব গড়ে তুলুন।’’ তিনি সম্মতিও জানান।
বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী পার্লামেন্ট স্কোয়ারে গাঁধীমূর্তিতে এবং ট্যাভিস্টক স্কোয়ারে রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন।