বিয়ের ফাঁদ পেতে প্রতারণা, ধৃত ইঞ্জিনিয়ার

পুলিশের বক্তব্য, ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটের জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের অসতর্কতা। বিয়ের কথাবার্তা এগোনোর আগে অনেকেই অপর পক্ষ সম্পর্কে ঠিকমতো খোঁজখবর নেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

পাত্রী এবং পাত্র, দু’জনেই ইঞ্জিনিয়ার। ম্যাট্রিমোনিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ। তার পরে ঘনিষ্ঠতা। বিয়ে নিয়েও একপ্রস্ত আলোচনা হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ গল্পের মধ্যে আগমন ঘটে পাত্রের বোনের। পাত্রীকে বলা হয়, সেই বোন অন্তঃসত্ত্বা। স্বামীর সঙ্গে সিঙ্গাপুরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর চিকিৎসার নাম করে কয়েক দফায় ওই পাত্রীর কাছ থেকে মোট ১০ লক্ষ ২১ হাজার টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তার পর থেকেই পাত্রের তরফে যোগাযোগ বন্ধ।

Advertisement

সিনেমার চিত্রনাট্য নয়। বিয়ের ফাঁদ পেতে এ ভাবেই এক তরুণীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনার তদন্তে নেমে শুক্রবার রাতে খড়দহ থেকে সেই অভিযুক্ত ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। ধৃতের নাম সুনীত মুখোপাধ্যায়। ৩১ বছরের ওই যুবকের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে তিনটি মোবাইল ফোন, প্যান কার্ড ও আধার কার্ড।

পুলিশের বক্তব্য, ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটের জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের অসতর্কতা। বিয়ের কথাবার্তা এগোনোর আগে অনেকেই অপর পক্ষ সম্পর্কে ঠিকমতো খোঁজখবর নেন না। যার জেরে এই ধরনের প্রতারণার ঘটনাও দিনদিন বেড়ে চলেছে। এ ক্ষেত্রে যেমন উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা ওই তরুণী ইঞ্জিনিয়ার।

Advertisement

তাঁর কর্মক্ষেত্র সল্টলেকে। তাই বিধাননগর সাইবার থানাতেই প্রতারণার অভিযোগটি দায়ের করেছিলেন ওই তরুণী। তাঁর দাবি, তিনি একটি ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে নিজের প্রোফাইল খুলেছিলেন। একই ভাবে সেই সাইটে প্রোফাইল খুলেছিলেন বেঙ্গালুরুতে কর্মরত ও ইঞ্জিনিয়ারও। দু’জনেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা।

তরুণী তাঁর অভিযোগে পুলিশকে জানিয়েছেন, ২০১৭-র এপ্রিল মাস থেকে তাঁদের যোগাযোগ। রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত দেখাসাক্ষাতের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ হয় সম্পর্ক। বিয়ে নিয়েও আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে। কিন্তু এর পরেই ঘটনা অন্য দিকে বাঁক নেয়। অভিযোগ, সুনীত ওই তরুণীকে জানান, সিঙ্গাপুরে একটি ট্যুরে গিয়েছেন তাঁর বোন ও ভগ্নীপতি। বোন অন্তঃসত্ত্বা। সেখানে গিয়েই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেক টাকার প্রয়োজন।

ওই তরুণীকে সেই ‘বোনের’ সঙ্গে কথাও বলিয়ে দেন সুনীত। ফলে সুনীতের কথায় তাঁর আর সন্দেহ হয়নি। তার পরেই ২০১৭-র এপ্রিল থেকে দফায় দফায় ওই তরুণী সুনীতকে ১০ লক্ষ ২১ হাজার টাকা দেন বলে অভিযোগ। সেই টাকা পাওয়ার কিছু দিন পরেই তরুণীকে সুনীত জানান, বোনের মৃত্যু হয়েছে। তার পর থেকেই দু’জনের যোগাযোগ কমতে থাকে। সুনীত মোবাইল বন্ধ করে দেন। দিনের পর দিন চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি ওই তরুণী।

এর পরেই চলতি মাসের ১৮ তারিখ বিধাননগরের সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সুনীতের কোনও বোনই নেই। পুরোটাই সাজানো গল্প। শনিবার বিধাননগর আদালতে তোলা হয় সুনীতকে। তদন্তকারীদের একাংশের কথায়, এই প্রতারণার ঘটনায় আরও কেউ কেউ জড়িত রয়েছে। তাঁদের খোঁজা হচ্ছে।

সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, আবেদনকারীদের তথ্য যাচাইয়ের পরেই ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে রেজিস্ট্রেশনের অনুমতি দেওয়া উচিত। তা না হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন