ভুলের ‘শাস্তি’ পদ্ম-পতাকায় নতমস্তকে প্রণাম

সুভাষকে মুচলেকা লিখিয়ে তার সর্বসমক্ষে পড়তে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দ্রকোনা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৩:০৭
Share:

পতাকায় গড় করছেন সুভাষ।

নমোর শপথের ২৪ ঘণ্টা আগে জোর করে নমস্কার। সঙ্গে জয় শ্রীরাম ধ্বনিও।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় গেরুয়া শিবিরের জুলুমের সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে দেরি হয়নি।

বুধবার বিকেল। চন্দ্রকোনার সনপুর বুথের সক্রিয় তৃণমূল কর্মী সুভাষ পালকে ঘিরে ছোটখাট একটা জটলা। রয়েছেন বিজেপির স্থানীয় নেতা হৃদয় হাজরা, সুশীল চৌধুরীরা। ভিডিয়োয় (আনন্দবাজার তার সত্যতা যাচাই করেনি) দেখা যাচ্ছে, বিজেপি নেতাদের নির্দেশ মতো খুঁটিতে পদ্ম-পতাকা বেঁধেতে মাটিতে ভাল করে পুঁতছেন ওই তৃণমূল কর্মী। তারপর জুতো জোড়া খুলে, পতাকার মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে নমস্কার করছেন, জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছেন। এখানেই শেষ নয়, সুভাষকে মুচলেকা লিখিয়ে তার সর্বসমক্ষে পড়তে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। তাতে বিজেপির পতাকা ছেঁড়ার ভুল কবুল করেছেন ওই তৃণমূল কর্মী।

Advertisement

ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে পুলিশ খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। যদিও কিছু বলতে চাইছেন না সুভাষ। বৃহস্পতিবার ফোনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “যা বলার পরে বলব।” তবে ইতিমধ্যে আলোড়ন পড়েছে গোটা জেলায়। ক’দিন আগে গড়বেতা কলেজে এবিভিপি-র এক দল ছেলে ঘরে ঢুকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কপালে গেরুয়া তিলক এঁকে মিষ্টি খাইয়েছিল। তারপর এই ঘটনা। চা-পানের গুমটি দোকানের মালিক, সাধারণ এক তৃণমূল কর্মীকে এমন হেনস্থা সমর্থন করছেন না অনেকেই। বলছেন, রাজনীতিতে এই সংস্কৃতি সমর্থনযোগ্য নয়। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতম ভট্টাচার্যের কথায়, “একটু ভোট পেতেই বিজেপির স্বরূপ প্রকাশ পাচ্ছে। মানুষ এটা ভাল ভাবে নেবে না।”

তবে যাঁরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন, বিজেপির সেই নেতারা এতে কোনও দোষ দেখছেন না। ঘটনাস্থলে হাজির বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য হৃদয় হাজরা বলেন, “পতাকার সম্মান সম্পর্কে ওই তৃণমূল কর্মীর কোনও ধারণা ছিল না। সেটা বোঝাতেই এমনটা করা হয়েছে। এতে কোনও অন্যায় দেখছি না।” ভিডিয়োয় যাঁকে নির্দেশ দিতে শোনা যাচ্ছে, সেই সুশীল চৌধুরী বিজেপির রামজীবনপুর মণ্ডল কমিটির সদস্য। তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘সুভাষ যে অন্যায় করেছে, এই শাস্তি তো তার তুলনায় কম।’’ বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি তরুণ দে-র অবশ্য বক্তব্য, “ভোটের আগে ওই তৃণমূল কর্মীর আচরণে মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। সেই ক্ষোভ থেকেই এমন ঘটনা ঘটেছে।”

চন্দ্রকোনা বিধানসভায় এ বার ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। এই লিডের জোরেই আরামবাগ লোকসভায় ১১৪২ ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার। তবে যে জায়গায় এই পতাকা প্রণামের ঘটনাটি ঘটেছে, সেই সনপুর বুথে ৪০ ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তারপরেই এই ঘটনায় এলাকাবাসী বিরক্ত। অনেকেই বলছেন, ‘‘পার্টি অফিস দখল, মারধর, হুমকি, জরিমানার এই ট্র্যাডিশন কবে বন্ধ হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন