মেয়ের মাধ্যমিকের আগে গোষ্ঠী-সংঘর্ষে খুন ভাঙড়ে

রবিবার দুপুরে ভাঙড়ের বামনঘাটার বগডোবাতে রড-লাঠি নিয়ে দু’পক্ষের ওই সংঘর্ষে নিহত তৃণমূল কর্মীর নাম মনু প্রামাণিক (৩৮)। মারামারিতে জখম হন পাঁচ জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভাঙড় শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩৫
Share:

মনু প্রামাণিক

জমি দখলকে ঘিরে ভাঙড়ে শাসকদলের কাজিয়া দীর্ঘদিনের। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই হুঁশিয়ারি দিন না কেন, সেই কাজিয়া থামেনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে এ বার একটি জলাভূমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে প্রাণ গেল এক জনের।

Advertisement

রবিবার দুপুরে ভাঙড়ের বামনঘাটার বগডোবাতে রড-লাঠি নিয়ে দু’পক্ষের ওই সংঘর্ষে নিহত তৃণমূল কর্মীর নাম মনু প্রামাণিক (৩৮)। মারামারিতে জখম হন পাঁচ জন। তাঁদের নলমুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ যায়। তবে রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মনু প্রামাণিকের মেয়ে সুষমা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। রাত পোহালে পরীক্ষা শুরু। সুষমা বলেন, ‘‘জানি না পরীক্ষা দিতে পারব কি না!’’

কখনও কাইজার আহমেদ বনাম আরাবুল ইসলাম, কখনও আরাবুল বনাম নান্নু হোসেন, কখনও ওহিদুল ইসলাম বনাম আরাবুল, আবার কখনও আরাবুল বনাম রেজ্জাক মোল্লা— গত কয়েক বছরে ভাঙড়ে শাসকদলের গোষ্ঠী-কোন্দল বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু যখন পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন, তখন ফের একবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে আসা এবং তার জেরে প্রাণহানির ঘটনা দলকে অস্বস্তিতে ফেলল বলেই মনে করছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ।

Advertisement

ভাঙড়েরই তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, বগডোবার একটি সরকারি জলাভূমির দখল নিয়ে স্থানীয় নেতা নিত্যগোপাল মণ্ডলের গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রদীপ মণ্ডলের গোষ্ঠীর কাজিয়া চলছিল কয়েক মাস ধরে। নিত্যগোপাল ভাঙড়-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি ওহিদুলের ঘনিষ্ঠ। প্রদীপ ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুলের। ফলে, ওই কাজিয়া কার্যত ওহিদুল বনাম আরাবুলের হয়ে দাঁড়ায়।

এ দিন নিত্যগোপাল দলবল নিয়ে ওই জলাভূমি দখল করতে যান বলে অভিযোগ। প্রদীপ আনুগামীরা বাধা দেন। দু’পক্ষের বচসা থেকে মারামারি বাধে। অভিযোগ, মনুর মাথায় লোহার রড দিয়ে মারা হয়। তিনি লুটিয়ে পড়েন। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে কলকাতার ন্যাশনাল চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মনু প্রদীপ গোষ্ঠীর লোক বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি।

নিত্যগোপাল বা প্রদীপের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি আরাবুল এবং ওহিদুল। আরাবুলের দাবি, ‘‘জমি দখল নিয়ে গন্ডগোল হয়েছে বলে শুনেছি। আমি জড়িত নই। পুলিশকে বলেছি নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে।’’

একই সুরে ওহিদুলেরও দাবি, ‘‘জমি-বিবাদে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। দোষীরা যাতে শাস্তি পায় তার জন্য পুলিশকে বলেছি।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি শক্তি মণ্ডল বলেন, ‘‘ওখানে কী হয়েছে খোঁজ নিচ্ছি। পুলিশ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন