বাপন সাহাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে এক যুবকের শরীরে। এ-দিক ও-দিক ছুটেও চলেছেন তিনি। রাস্তায় লোকজন তাঁকে দেখে ভয়ে আঁতকে উঠছেন। এক সময় তাঁকে সোজা ছুটে আসতে দেখা গেল নবান্নর দিকে।
শুক্রবার বিকেলে ওই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার নবান্নর সামনে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডে। পুলিশ জানায়, ওই যুবকের নাম বাপন সাহা (৪১)। তাঁর বাড়ি হাওড়ার সালকিয়ায় ত্রিপুরা রায় লেনে। এ দিন অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় প্রথমে আন্দুল রোডের একটি হাসপাতালে, পরে এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়। পুলিশ জানায় তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘মঙ্গলবার থেকে বাপনবাবু নিখোঁজ ছিলেন। গোলাবাড়ি থানায় নিখোঁজের ডায়েরি রয়েছে। কী ভাবে ঘটল তার তদন্ত হচ্ছে। বাপনবাবুর বাবার বক্তব্য নথিভুক্ত করা হয়েছে।’’ তবে, পুলিশের অন্য একটি সূত্র জানায়, এর পিছনে অন্য কারণ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাপনবাবুর ১০ মাসের একটি শিশুপুত্র রয়েছে। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও বাবা।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে আসেননি। তবে এই ঘটনায় হতবাক নবান্নের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার ও কর্মীরা। রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই ঘটনা ঘটে যাওয়ায় কলকাতা পুলিশ এবং হাওড়া সিটি পুলিশও উদ্বিগ্ন। ঘটনার সময় নবান্নে ছিলেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার। নবান্নের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ কর্মীরাই এ দিন যুবকের গায়ে দূর থেকে জল ঢেলে আগুন নেভাতে শুরু করেন। দায়িত্বে থাকা দমকলের কর্মীরাও চলে আসেন। তত ক্ষণে ওই যুবক মাটিতে পড়ে গিয়েছেন। তিনি ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকারও করতে থাকেন। আগুন নিভিয়ে পুলিশের একটি অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের তলায় একটি সবুজ প্লাস্টিকের জ্যারিকেন পড়ে রয়েছে। অ্যাপ্রোচ রোডে রাখা আছে দেশলাই বাক্স। কয়েকটি দেশলাই কাঠি সেতুর ফুটপাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘‘যুবকের গায়ে আগুন জ্বলছে দেখে ভয় পেয়ে যাই। তাঁকে ধরতেও পারছিলাম না। জল ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলাম। তাঁর গা থেকে কেরোসিনের গন্ধ ছড়াচ্ছিল।’’
পুলিশ জানায়, গুরুগ্রামে একটি জুতোর সংস্থায় কাজ করতেন বাপন। সম্প্রতি তাঁর মাতৃবিয়োগ হয়। তিন চার মাস আগে পরিবার নিয়ে তিনি হাওড়ায় ফিরে আসেন। এ দিন বাপনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, পাড়ার লোকজন বাড়ির সামনের রাস্তায় জড়ো হয়েছেন। পাড়ারই এক যুবক জানান, বাপনবাবুর বাড়ির সামনে একটি বহুতলের নির্মাণ কাজ চলছে। বহুতলের নীচে একটি কারখানা করতে চান সংশ্লিষ্ট প্রোমোটার। বাপনবাবু তাতে বাধা দেন। কাজ বন্ধ রয়েছে। পুলিশের খবর, এর মধ্যে ওই প্রোমোটার বহুতলের সীমানা প্রাচীরে দরজা করতে চান। তাতেও বাধা দেন বাপনবাবু। কারণ, গলির বসিন্দারাই গলিটি ব্যবহার করেন। বাপনবাবুর যুক্তি গলিটি বহুতলের বাসিন্দারা আইনত ব্যবহার করতে পারেন না। গত সোমবার এক দল ছেলে এসে বাপনবাবুকে হেনস্থা করে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওই দিনই গলির মধ্যে নিজের গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেন বাপনবাবু। স্থানীয় বাসিন্দারা ধরে ফেলায় সে যাত্রায় তিনি বেঁচে যান।
বাপনবাবুর স্ত্রী শর্মিষ্ঠা সাহা এ দিন বলেন, ‘‘তিন চার মাস কাজ না থাকায় উনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু আমাদের কোনও অভাব ছিল না। শ্বশুরমশাই সংসার চালাতেন। কেন যে এমন হল বুঝতে পারছি না।’’