মান্নানের চিঠির জবাবে সাদা কাগজ মানসের

প্রশ্নটা ছিল একেবারেই সাদামাটা। দলীয় তরফে তাঁকে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আপনি কংগ্রেসেই রয়েছেন, নাকি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন? দিন সাতেক পর তার ‘জবাব’-ও এল মুখ বন্ধ করা সাদা খামে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২৮
Share:

প্রশ্নটা ছিল একেবারেই সাদামাটা। দলীয় তরফে তাঁকে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আপনি কংগ্রেসেই রয়েছেন, নাকি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন? দিন সাতেক পর তার ‘জবাব’-ও এল মুখ বন্ধ করা সাদা খামে! কিন্তু একি! খাম খুলে দেখা গেল, এক খানি সাদা কাগজ। কালির আঁচড় পর্যন্তও নেই সেটিতে!

Advertisement

তৃণমূল ভবনে গিয়ে সদ্য শাসক দলে যোগ দিয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। তার পরই তাঁকে চিঠি লিখে এই প্রশ্ন করেছিলেন কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা আবদুল মান্নান। তারই এমন অভিনব ‘জবাব’ দিলেন মানস।

রাজনীতিতে এমন চিঠির দৃষ্টান্ত বিরল। শাসক দলের কেউ কেউ এর মধ্যে মানসের ‘দুষ্টু বুদ্ধিও’ দেখছেন। তবে পর্যবেক্ষদের মতে, আসলে প্রশ্নের জবাব এড়াতে চাইছেন মানস। তিনি যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন সেকথা কংগ্রেস পরিষদীয় দলকে লিখিত ভাবে জানালে তার ভিত্তিতেই তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের জন্য স্পিকারকে চিঠি দিতে পারেন মান্নানরা। আবার মানস এখনও কংগ্রেসেই রয়েছেন বলে উত্তর দিলেও রাজনৈতিক ভাবে বেইজ্জতি হওয়ার সম্ভাবনা ষোল আনা। তাই সাদা পৃষ্ঠা পাঠিয়েই পরিস্থিতি এড়াতে চাইছেন এই পোড় খাওয়া রাজনীতিক।

Advertisement

প্রশ্ন হল, কতদিন এভাবে এড়াতে পারবেন মানস? এমনিতেই মানস ভুঁইয়ার ওপর প্রদেশ কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতার ক্ষোভ রয়েছে। তার ওপর মানসের এমন চিঠি পেয়ে সোমবার তেলেবেগুণে চটেছেন আবদুল মান্নান। সেই সঙ্গে এও জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক ভাবে দলত্যাগ করেও কংগ্রেসের বিধায়ক পদ ধরে রাখার জন্য মানস ভুঁইয়াদের এই কৌশলের বিরুদ্ধে এ বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।

বিধানসভা ভোটের পর গত চার মাসে কংগ্রেসের পাঁচ জন বিধায়ক এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে শাসক দলে যোগ দিয়েছেন। সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন আরও একজন বিধায়ক। কিন্তু এঁরা কেউই পুরনো দলের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি। পরিষদীয় দলের তরফে তাঁদের চিঠি দেওয়া হলে কেউ জবাবে বলছেন, কংগ্রেসেই রয়েছি। কেউ বা চিঠির জবাবই দিচ্ছেন না। আর মানস ভুঁইয়া জবাবে সাদা কাগজ পাঠিয়েছেন। আবার দলত্যাগী এই বিধায়কদের নিয়ে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েও কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা গত পক্ষকাল ধরেই বলছেন বিরোধীরা।

তাই এই প্রশ্নও উঠেছে, আইনি পথ নিতেই বা কেন দেরি করছে কংগ্রেস, সিপিএম? জবাবে এ দিন আবদুল মান্নান বলেন,‘‘আমরা আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছি। সময় মতোই মামলা করা হবে। আপাতত স্পিকারের উত্তরের অপেক্ষায় আছি।’’ কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, স্পিকারকে উত্তর দেওয়ার জন্য কিছুটা সময় দেওয়ার আগেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করলে, আদালত বলতেই পারে স্পিকার কী মতামত দিচ্ছেন তা আগে দেখা হোক। আদালতে একবার মামলা খারিজ হয়ে গেলে পুনরায় আবেদন করতে সমস্যা হতে পারে। তাই আটঘাট বেঁধেই মামলা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন