একশো দিনের কাজে আম-চাষও

বাঁকুড়া-রানিবাঁধের সেই ভালুকআদুরি বা পুরুলিয়ার কেন্দা ব্লকে শিমুলটাঁড়ের সেই সব জমিতে এখন আমের ভারে নুয়ে পড়ছে গাছ। দিব্যি ফলছে আম্রপালী, মল্লিকা, ল্যাংড়া। সৌজন্য একশো দিনের কাজের প্রকল্প।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ১৫:০০
Share:

সেচের অভাবে বিঘের পর বিঘে লাল, রুক্ষ জমি পতিত পড়ে থাকত। বাঁকুড়া-রানিবাঁধের সেই ভালুকআদুরি বা পুরুলিয়ার কেন্দা ব্লকে শিমুলটাঁড়ের সেই সব জমিতে এখন আমের ভারে নুয়ে পড়ছে গাছ। দিব্যি ফলছে আম্রপালী, মল্লিকা, ল্যাংড়া। সৌজন্য একশো দিনের কাজের প্রকল্প। এবং সৌজন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বাঁকুড়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়ার মতো রুক্ষ লাল মাটিতে আম ফলাচ্ছেন গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা। তার জোরেই কলকাতায় প্রথম আম উৎসব করেছে পঞ্চায়েত দফতর।

Advertisement

এই প্রকল্পের সূত্রপাত ছ’বছর আগে। প্রচুর পতিত জমি দেখে ওই সব জেলার কিছু অংশে আমের বাগান তৈরির পরিকল্পনা করেন পঞ্চায়েত কর্তারা। গ্রামবাসীদের নিয়ে তৈরি হয় স্বনির্ভর গোষ্ঠী। এত দিন যাঁরা শুধু দিনমজুরি বা মাটি কাটায় অভ্যস্ত ছিলেন, তাঁরাই ফলাচ্ছেন হরেক আম।

আরও পড়ুন: বিকোচ্ছে ‘মরা’ মুরগি, দাবি বাদুড়িয়া পুরসভার

Advertisement

রাজ্যের পঞ্চায়েত কমিশনার এবং ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত দিব্যেন্দু সরকার বলেন, ‘‘২৫ বছরের জন্য জমি লিজ নেওয়া হয়েছে। দফতরই মধ্যস্থতা করেছে। চুক্তি হয়েছে, জমি-মালিক পাবে ফলনের ২৫%। ১০% দিতে হবে পঞ্চায়েতকে। বাকি ৬৫% পাবে স্বনির্ভর গোষ্ঠী।’’ এই বাণিজ্যিক চুক্তিই বদলে দিয়েছে প্রান্তিক গ্রামের জীবনযাত্রা। আম বেচেই ব্যাঙ্কে টাকা রাখছেন কেদন মুদি, রিতা মুদিরা। শহরে আম পৌঁছে দিতে মোটরসাইকেল কিনছেন কেউ কেউ। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর দিকে ঝোঁক বেড়েছে। যেমন রিতাদেবী বলেন, ‘‘স্বামী গাড়ি চালান। বাগান করার আগে কতই বা আয় হতো! খুব ইচ্ছে, মেয়েকে শহরের স্কুলে পড়াব।’’

এ ভাবে আম ফলিয়ে রানিবাঁধের শান্তি শবর এখন রীতিমতো আলোচিত নাম। কেন্দ্রের দেওয়া ‘প্রগতিশীল চাষি’র তকমা পেয়েছেন তিনি। দিব্যেন্দুবাবুর দাবি, রানিবাঁধের মুকুটমণিপুর বাঁধ লাগোয়া লিপিডিরির ওই শবর-গ্রামের চেহারাই পাল্টে দিয়েছে আম। ১৩টি শবর পরিবার দিনরাত আমবাগানেই পড়ে থাকে।

রুক্ষ জমিতে আম ফলাতে উদ্যান পালন দফতরও হাত মিলিয়েছে পঞ্চায়েত দফতরের সঙ্গে। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আগে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় কিছু কিছু আম হলেও সেগুলো তেমন মিষ্টি হতো না। আমরা উন্নত বীজ দিয়েছি। পাইপের সাহায্যে গাছের গোড়ায় জল দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ওখানকার আম এখন অন্যান্য জেলার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন