অনলাইনে ৫৬ কোটি, লাফ মঞ্জুষার

চার দশকের এই রাজ্য সরকারি সংস্থা প্রথম লাভের মুখ দেখে মোটে দু’বছর আগে। সে বছর, ২০১৫ সালের পুজোর মাসে মঞ্জুষার বিক্রি ছিল ৫৯ লক্ষ টাকা।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:৩০
Share:

পূর্বাভাস ছিলই। পুজোর ঠিক আগে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে জুটেছিল ভারতসেরার তকমা। পুজোর বিক্রিতে সব হিসেব ছাপিয়ে গেল মঞ্জুষা।

Advertisement

চার দশকের এই রাজ্য সরকারি সংস্থা প্রথম লাভের মুখ দেখে মোটে দু’বছর আগে। সে বছর, ২০১৫ সালের পুজোর মাসে মঞ্জুষার বিক্রি ছিল ৫৯ লক্ষ টাকা। গত বছর সেই ‘রিটেল কাউন্টার’ থেকে বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ লক্ষ টাকায়। সেই সঙ্গে অনলাইনেও ব্যবসা শুরু হয়, বিক্রি হয় ২১ লক্ষ টাকার। এ বছর ‘রিটেল কাউন্টার’-এর বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৫ কোটি টাকায়, অনলাইনে হয়েছে ৫৬ কোটি টাকার ব্যবসা।

ঘটনাচক্রে, পুজোর ঠিক আগেই ‌মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া রিটেল ফোরাম’-এর ‘ইমেজেস রিটেল অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার জিতে নিয়েছিল মঞ্জুষা। লড়াইটা ছিল খুচরো ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানোর। এ দেশে ব্যবসা করা ১০০৬টি জাতীয় ও বহুজাতিক সংস্থা আবেদন করেছিল। তার মধ্যে থেকে ১০৪টি সংস্থাকে প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত করা হয়। ‘মোস্ট টার্ন অ্যারাউন্ড স্টোরি’ বিভাগে প্যান্টালুন্স, রেমন্ডস, পিৎজা হাটের মতো সংস্থার সঙ্গে লড়ে সেরার পুরস্কার জেতে মঞ্জুষা।

Advertisement

তখনই আন্দাজ করা গিয়েছিল, এই পুজোয় মঞ্জুষার ব্যবসা লাফিয়ে বাড়বে। আগেই মধ্যস্বত্তভোগীদের ছেঁটে ফেলে শিল্পীদের থেকে পণ্য কিনতে শুরু করেছিল রুগ্ণ সংস্থাটি। ঘুরে দাঁড়ানোর সেই শুরু। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিপণনের ধাঁচ পাল্টে ফেলার ধারাবাহিক চেষ্টা।

যেমন, এ বার পুজোর বাজার ধরার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল জানুয়ারি থেকেই। সংস্থার একটি বিশেষ দল ক্রেতাদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে চাহিদার একটা রূপরেখা তৈরি করে। তা ধরে ডিজাইনার, তাঁতি, হস্তশিল্পী ও সহায়ক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে কর্মশালা হয়। পিওর সিল্ক থেকে শুরু করে কাঁথাস্টিচ, জামদানি, রেশম ও বালুচরি কাপড়ের জামা, চুড়িদার, স্কার্ট ও লংস্কার্টের বিচিত্র সম্ভার তৈরি করে ফেলা হয়। কয়েক মাস আগে থেকে বিশেষ ‘মার্কেটিং টিম’ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, অসরকারি সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অর্ডার এনেছেন। ক্রেতার চোখ টানতে বিশেষ ভাবে সাজানো হয় বিক্রয় কেন্দ্রগুলি। নতুন প্রজন্মকে টানতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার প্রচারও চালানো হয়।

তারই ফল ফলেছে হাতেনাতে। ১৯৭৬ সালে পত্তন হওয়া যে সংস্থা ৩৮ বছর লাভের মুখ দেখতে পারেনি, তারা খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে তারা প্রথম ১ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা লাভ করেছিল। গত বছর তা ৩ কোটি ৩৯ লক্ষে পৌঁছয়। এই পুজোয় শুধু অনলাইন বিক্রি যেখানে পৌঁছেছে, তাতে ছবিটা আমূল পাল্টে যাবে বলে আশা কর্তাদের।

মঞ্জুষার চেয়ারম্যান অজয় দে-র কথায়, “লড়াইটা খুব কঠিন ছিল। এই সাফল্যের প্রধান কারিগর আমাদের কর্মীরা।” সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিত দত্ত বলেন, “এত দিন বাদে কর্মীদের উৎসাহ ভাতা দিতে পেরে আমরা গর্ব বোধ করছি।”

এই অর্থবর্ষের শেষে লাভক্ষতির চূড়ান্ত হিসেব যখন বেরোবে, পরের পুজোর পথে মঞ্জুষা হয়তো আরও এগিয়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement