Train Derailed

একাধিক ‘প্যান্ড্রোল ক্লিপ’ খোলা, রেলের উপর সাদা পাথর বা ধাতু ঘষে যাওয়ার ক্ষত, প্রশ্নে সুরক্ষা

শনিবার রাতে খড়্গপুর স্টেশনের কাছে  লাইনচ্যুত হয় হাওড়া-মেদিনীপুর লোকাল। কেউ মারা যাননি। আহতও হননি সে ভাবে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে কপালের ভাঁজ চওড়া হয়েছে রেলের আধিকারিকদের। 

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৩ ০৮:৩০
Share:

রেললাইনে খোলা প্যান্ড্রোল ক্লিপ। নিজস্ব চিত্র।

একাধিক ‘প্যান্ড্রোল ক্লিপ’ খোলা। রেললাইনের উপরে সাদা পাথর অথবা ধাতু ঘষে যাওয়ার ক্ষত। সিমেন্টের স্লিপারে কয়েকটি চকের দাগ।

Advertisement

শনিবার রাতে খড়্গপুর স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয় হাওড়া-মেদিনীপুর লোকাল। কেউ মারা যাননি। আহতও হননি সে ভাবে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে কপালের ভাঁজ চওড়া হয়েছে রেলের আধিকারিকদের। ‘প্যান্ড্রোল ক্লিপ’ (লাইন এবং সিমেন্টের স্লিপার যার মাধ্যমে জোড়া থাকে) বাইরের কোনও আঘাত ছাড়া খোলা সম্ভব নয় বললেই চলে। অনেকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০১০ সালের জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনার আগেও একাধিক ‘প্যান্ড্রোল ক্লিপ’ আগে থেকে খোলা ছিল। চকের দাগগুলি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। লাইনের উপর পাথর বা ধাতু রাখার জেরে ওই ট্রেনের চাকা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

গত ২ জুন ওড়িশার বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে (যা খড়্গপুর ডিভিশনেই) ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনায় পরে পয়েন্ট ও সিগন্যালের তালগোলের কথা সামনে এসেছিল। তার পরে ফের এই দুর্ঘটনা। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধুরী বলেন, “প্যান্ড্রোল ক্লিপ কীভাবে খুলেছে, লাইনের উপরে ঘষে যাওয়ার দাগ কীসের, সব তদন্তে দেখা হচ্ছে। সিগন্যাল ব্যবস্থা, রিলে রুম, রেলপথ আরও সুরক্ষিত করার বন্দোবস্ত করছি।” মেদিনীপুর স্টেশন থেকে শেষ হাওড়াগামী ওই লোকাল শনিবার রাতে ৯টা ৫ মিনিটে ছেড়েছিল। গিরি ময়দান ছাড়িয়ে পোর্টারখলি রেল বস্তির সামনে ১১৬/১৪ নম্বর খুঁটির কাছে অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি শুরু হয়। তখন ৬ নম্বর কামরা কিছুটা এগিয়ে ১১৬/১২ নম্বর খুঁটিতে ধাক্কা মারে। কিছুটা এগিয়ে দাঁড়িয়ে যায় ট্রেন। যাত্রীদের অনেকেই চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন। আরপিএফ আসে। ট্রেনটি তোলা হয় লাইনে। রাত ১২টা নাগাদ সেটি ফের রওনা দেয়।

Advertisement

রেলের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে সেই লাইনে ভিতর দিকে দু’টি ও বাইরের দিকে তিনটি ‘প্যান্ড্রোল ক্লিপ’ খোলা ছিল। লাইনে রয়েছে ঘষে যাওয়ার ক্ষত, সিমেন্টের স্লিপারে আছে চকের দাগ। শনিবার ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক রেল কর্মী বলছিলেন, “লাইনের ভিতরের প্যান্ড্রোল ক্লিপ খুলে যায় না। হাতুড়ি দিয়ে মেরে খুলতে হয়। এ ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, ভিতরের প্যান্ড্রোল ক্লিপ আগে থেকে আলগা করা হয়েছিল। তাতেই চাকা পিছলে যায়। পরে চাকার আঘাতে লাইনের বাইরের অংশের প্যান্ড্রোল ক্লিপগুলি খুলেছে।”

যে কামরা বেলাইন হয়েছিল তাতে ছিলেন তমলুকের বাসিন্দা অনিমেষ গাজর। তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম সব শেষ। হাতল ধরে ঝুলে বাঁচার চেষ্টা করছিলাম। আমার সামনেই এক যুবক চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিল। আপাতত আর ট্রেনে উঠছি না।” মেদিনীপুর-খড়্গপুর-হাওড়া ডেলি প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জয় দত্তের অভিযোগ, ‘‘নিশ্চয়ই রক্ষণাবেক্ষণ অথবা সুরক্ষার ঘাটতি রয়েছে।” খড়্গপুরের এডিআরএম গিরিশ কুমার বলেন, “প্যান্ড্রোল ক্লিপ খোলার বিষয়টি জানা নেই। যদি আগে থেকে খোলা থাকে সে ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কোনও গাফিলতি আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন