স্কুলে নেই লিফট, মন্ত্রীর দ্বারস্থ শিক্ষকেরা

লিফট বসানোর জন্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানিয়েছে সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:৩৫
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যের অনেক সরকারি স্কুলেরই বয়স ১০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। ওই সব তেতলা-চারতলা স্কুলবাড়ি খুবই উঁচু। এখনকার তেতলা-চারতলা বাড়ির চেয়ে সেই সব স্কুলভবনের উচ্চতা অনেক বেশি হওয়ায় সিঁড়ি ভেঙে নিয়মিত ক্লাসে যেতে এবং অন্যান্য কাজ করতে শারীরিক অসুবিধায় পড়ছেন বয়স্ক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা। তাই লিফট বসানোর জন্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানিয়েছে সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতি।

Advertisement

এই সমস্যা শুধু সরকারি স্কুলের নয়। রাজ্যে অনেক সরকার পোষিত, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল এবং বেসরকারি বিভিন্ন স্কুলও বহুতল। কিন্তু সেই সব স্কুলের অনেক জায়গাতেই লিফট নেই। ফলে একই ধরনের অসুবিধা হচ্ছে বয়স্ক শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের। এই সমস্যার কথাও ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে বিকাশ ভবনে।

রাজ্যে সরকারি স্কুল ৩৯টি। তার মধ্যে হিন্দু, হেয়ার, সংস্কৃত কলেজিয়েট, সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস, বালিগঞ্জ সরকারি স্কুল-সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানই বহুতল। অধিকাংশই শতাব্দী-প্রাচীন স্কুল। ওই সব বাড়ির উচ্চতা এখনকার বাড়ির তুলনায় অনেক বেশি। সিঁড়ির সংখ্যাও বেশি। সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু জানান, প্রতিটি স্কুলেই ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সি শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা রয়েছেন। শারীরিক অসুবিধা সত্ত্বেও সিঁড়ি ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের কোমর, হাঁটুর ক্ষতি হচ্ছে। ‘‘শিক্ষিকা এবং মহিলা শিক্ষাকর্মীদের সমস্যা কখনও কখনও এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, তাঁরা ছুটি নিতে বাধ্য হন। কিছু স্কুলে প্রতিবন্ধী পড়ুয়ারাও কষ্ট ভোগ করছে। তাই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্কুলগুলিতে লিফট বসানোর আর্জি জানিয়েছি,’’ বলেন সৌগতবাবু।

Advertisement

অস্থি-শল্য চিকিৎসক রামেন্দু হোমচৌধুরী জানান, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলারা হাড়ের সমস্যায় ভোগেন বেশি। তিনি বলেন, ‘‘মেনোপজ (রজোনিবৃত্তি) যত এগিয়ে আসে, মহিলাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হয়। ফলে অস্টিয়োপোরেসিস হয়। ধীরে ধীরে হাড়ের গড়নে পরিবর্তন আসতে থাকে।’’ তিনি জানান, যেখানে প্রতি ছ’জন পুরুষের মধ্যে এক জন অস্টিয়োপোরেসিসের শিকার, সেখানে প্রতি দু’জন মহিলার মধ্যে এক জন এই রোগে আক্রান্ত।

সরকার পোষিত যাদবপুর বিদ্যাপীঠের বাড়ি চারতলা। লিফট নেই। যাতে প্রতিদিন সকলকে চারতলা পর্যন্ত উঠতে না-হয়, তাই ক্লাসঘরের বদলে গ্রন্থাগার ও ল্যাবরেটরি রাখা হয়েছে চতুর্থ তলে। লিফট যে জরুরি, তা মেনে নিয়ে প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য জানান, তাঁরা এই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন। সরকারের কাছে অর্থসাহায্যের জন্য আবেদন করবেন। প্রাক্তনী সংসদকেও অর্থসাহায্যের কথা বলা হবে। সিঁড়িতে ভাল রেলিং বসানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। যাতে সিঁড়ি ধরে ওঠা যায়।

বেসরকারি স্কুল দ্য হেরিটেজ বা সাউথ পয়েন্টের বহুতল ভবনে লিফট আছে। হেরিটেজ স্কুলের অধ্যক্ষা সীমা সাপ্রু অবশ্য জানান, লিফট থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে সিঁড়ি ভেঙে ওঠার প্রবণতা বেশি। প্রতিবন্ধী পড়ুয়া অথবা অন্যেরাই সাধারণত লিফটে ওঠানামা করে। সাউথ পয়েন্টের পক্ষে কৃষ্ণ দামানি জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকারা লিফট ব্যবহার করেন। পড়ুয়াদের কোনও সমস্যা থাকলে অনুমতিসাপেক্ষে তারাও লিফট ব্যবহার করতে পারে। তবে দিল্লি পাবলিক স্কুল, মেগাসিটি চারতলা হলেও সেখানে লিফট নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সিঁড়ি ভাঙতে হয়। অধ্যক্ষা ইন্দ্রাণী সান্যাল জানান, তাঁরা ইতিমধ্যেই লিফট বসানোর ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘সরকারি স্কুলে পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকলে নিশ্চয়ই দেখব।’’ তবে বেসরকারি স্কুলে এমন সমস্যা থাকলে সেটা তার দেখার কথা নয় বলে জানান মন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement