Schools in West Bengal

প্রধান পদ শূন্য, নেই সহকারী প্রধান শিক্ষকও! শিক্ষকের অভাবে বিপাকে শহরের বহু নামী স্কুল

শিক্ষকদের অনেকের মতে, বহু স্কুলেরই দশা এখন মাথাহীন কনিষ্কের মতো! স্কুলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকও কম। বিভিন্ন শ্রেণির পড়ুয়ারা চুপ করে বসে থাকছে, ক্লাসই হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:০৯
Share:

শিক্ষকদের অনেকের মতে, বহু স্কুলেরই দশা এখন মাথাহীন কনিষ্কের মতো! ফাইল চিত্র।

প্রধান শিক্ষিকা, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা, প্রাতঃ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা— তিনটি প্রধান পদই ফাঁকা ১৭৫ বছরে পা দিতে চলা বেথুনে স্কুলে। সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই সংস্কৃত কলেজিয়েট এবং বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলেও। হিন্দু এবং হেয়ার স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকলেও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই।’’ খাস কলকাতার অত্যন্ত নামী এই সব স্কুলেই শুধু নয়, এমন মাথাহীনতার দুর্দশা চলছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের অজস্র স্কুলে। কোনও স্কুলে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই তো কোথাও প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রাতঃকালীন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক— কেউই নেই।

Advertisement

শিক্ষকদের অনেকের মতে, বহু স্কুলেরই দশা এখন মাথাহীন কনিষ্কের মতো! স্কুলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকও কম। বিভিন্ন শ্রেণির পড়ুয়ারা চুপ করে বসে থাকছে, ক্লাসই হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে পাঠ্যক্রমেরও শেষ দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষকেরা নিয়ম মেনে অবসর নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের জায়গায় নতুন শিক্ষক আসছেন না। কিছু দিন পরেই মাধ্যমিকের ফল বেরোবে। স্কুলে স্কুলে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক না-থাকায় অনেক ছাত্রছাত্রীই নিজেদের পছন্দের বিষয় নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে না বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রাজ্যের সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির এই অবস্থা দেখে অভিভাবক ও শিক্ষকদের অনেকের প্রশ্ন, স্কুলগুলির ঝাঁপ বন্ধ হতে চলেছে? শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, অনেক স্কুলের অবস্থা ‘আইসিইউ’-এ থাকা রোগীর মতো। ক’দিন আগে সরকারি সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, সরকারি ৮২০০ স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০-এর নীচে। আশঙ্কা, এই সংখ্যাটা ক্রমশই বাড়বে।

Advertisement

হিন্দু, হেয়ার, সংস্কৃত কলেজিয়েট, বেথুন কলেজিয়েট, বালিগঞ্জ গভর্নমেন্টের মতো ঐতিহ্যবাহী স্কুলকে এক সময় গোটা রাজ্য চিনত তাদের ভাল ফলের জন্য। শিক্ষকদের মতে, এখন ওই সব স্কুলের মিল ভাল ফলের জন্য নয়, শূন্য পদের জন্য। এক শিক্ষক জানাচ্ছেন, সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলে বাংলার শিক্ষক মাত্র এক জন। এই মুহূর্তে হেয়ার স্কুলে ইতিহাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষক নেই। হিন্দুতে নেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়ের মতো শিক্ষক।

‘‘ক্যাপ্টেন না-থাকলে জাহাজের যেমন দিশাহারা অবস্থা হয়, সেই অবস্থাই হয়েছে এই সব ঐতিহ্যবাহী স্কুলের। তার পাশাপাশি প্রায় সব সরকারি স্কুলে ৪০% বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই,’’ বলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু।

অভিযোগ, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংখ্যা এতই কমে গিয়েছে যে, দিনের পর দিন বহু ক্লাসই হচ্ছে না। দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক ভূগোল পড়ান। নইলে ভূগোলের ক্লাসটাই হবে না।’’

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা শিক্ষক-নেতা নবকুমার কর্মকার জানান, গত বারেও মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পরে দেখা গিয়েছিল, পছন্দের বিষয় নিয়ে অনেক পড়ুয়া একাদশে ভর্তি হতে পারেনি। কারণ, বহু স্কুলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকই নেই। এ বছর অবস্থা আরও খারাপ হতে চলেছে। গত এক বছরে অনেক শিক্ষক অবসর নিয়েছেন। বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করছেন অভিভাবকেরা। ‘‘কিন্তু গ্রামে যেখানে বেসরকারি স্কুল নেই, সেখানে পড়ুয়াদের পছন্দের বিষয় পড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে,’’ বলেন নবকুমার।

‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘পরিসংখ্যান বলছে ৮০% স্কুলে ও মাদ্রাসায় ৫০ শতাংশের বেশি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই। যারা ভর্তি হবে, তাদের পড়াবে কে? আংশিক সময়ের বা অস্থায়ী শিক্ষক রেখে পড়ানোর মতো সামর্থ্য নেই সব স্কুলের। ফলে অনেকে ‘ড্রপ আউট’ বা স্কুলছুট হয়ে যাচ্ছে।’’

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর আশ্বাস, শিক্ষক নিয়োগের জটিলতা সরকারের সদিচ্ছায় অনেকটাই কেটে গিয়েছে। প্রাথমিকের ইন্টারভিউয়ের পরে নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে। ‘‘প্রধান শিক্ষক নিয়োগ আমরা দ্রুত শুরু করার বিষয়ে আশাবাদী। এর পরে ধাপে ধাপে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগও হবে। সরকারি স্কুলে পিএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য ইতিমধ্যেই আমরা রিকুইজ়িশন দিয়েছি,’’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন