প্রিয় গৃহশিক্ষিকা ‘বেলাদি’ মাওবাদী, বিস্মিত কালীপুর

একডাকে তাঁকে চেনেন এলাকার মানুষ। কারও কাছে তাঁর পরিচয় গৃহশিক্ষিকা। কেউ তাঁকে চেনেন খুব ভাল ছাত্রী হিসাবে। কারও কাছে আবার তিনি শুধুই ‘বেলাদি’। গত পনেরো বছর থেকে অবশ্য তাঁর সঙ্গে আর কারও যোগাযোগ নেই।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

চাকদহ শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৫
Share:

একডাকে তাঁকে চেনেন এলাকার মানুষ। কারও কাছে তাঁর পরিচয় গৃহশিক্ষিকা। কেউ তাঁকে চেনেন খুব ভাল ছাত্রী হিসাবে। কারও কাছে আবার তিনি শুধুই ‘বেলাদি’। গত পনেরো বছর থেকে অবশ্য তাঁর সঙ্গে আর কারও যোগাযোগ নেই।

Advertisement

সংবাদমাধ্যমে সেই বেলা ওরফে নির্মলা বিশ্বাসের খবর দেখে রীতিমতো অবাক চাকদহের কালীপুরের বাসিন্দারা। তাঁদের অনেকেই বলছেন, ‘‘এ-ও কি সম্ভব! আমরা তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। কীভাবে সে এ সবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল?’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলদায় ইএফআর শিবিরে হামলা চালিয়ে ২৪ জন জওয়ানকে হত্যা মামলায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে পলাতক ছিলেন নির্মলা বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার অসমের কাছাড় জেলার কাটিগড়া থেকে তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ২০১০-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই হামলায় মাওবাদীদের একটি নারী বাহিনীকে তিনি-ই নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বলে তদন্তে প্রকাশ পায়।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার বক্তব্য, আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও আইইডি তৈরিতে প্রশিক্ষিত বেলা ওরফে নির্মলা বিশ্বাস শুধু শিলদা নয়, পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল থানায় হামলা চালিয়ে দুই পুলিশকর্মীকে হত্যা ও ওসি অপহরণ-কাণ্ডেও জড়িত। সাঁকরাইলের ঘটনা ২০০৯-এর ২০ অক্টোবরের।

ওই বছরই নভেম্বরে গিধনিতে পাঁচ ইএফআর জওয়ান খুনেও বেলা জড়িত বলে গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি। বেলা ওরফে নির্মলা পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের প্রথম মুখপাত্র গৌর চক্রবর্তীর শ্যালিকা। গৌরবাবুও বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) রুজু হওয়া মামলায় অভিযুক্ত।

নদিয়ার চাকদহ থানার দক্ষিণ কালীপুর গ্রামে একসময় বসবাস করতেন নির্মলারা। তাঁরা পাঁচ বোন ও এক ভাই। আজ থেকে প্রায় পনেরো বছর আগে কালীপুরের বাড়ি থেকে তাঁরা মদনপুরে চলে যান বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। এখন কালীপুরের সেই বাড়িতে থাকেন তাঁদের আত্মীয়েরা।

নির্মলার এক বৌদি গীতা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে ওদের পারিবারিক সম্পর্ক ভাল ছিল না। এমনকী ওরা যখন এখান থেকে চলে যায় তখন বাইরের লোকের কাছে তাদের বাড়ির অংশ বিক্রি করে দিয়েছিল। তারপর ওরা আর এখানে আসেনি। আমরাও কোনও সম্পর্ক রাখিনি।’’

নির্মলার একসময়ের প্রতিবেশীরা জানান, কালীপুর থেকে চলে যাওয়ার পরে অন্যেরা দু’একবার ওই গ্রামে এলেও বেলা আর কোনওদিনই আসেননি। তবে তিনি যে মাওবাদী নেত্রী হিসাবে ধরা পড়বেন—এমনটা ভাবতে পারছেন না কেউই।

একটি ঘরে ছাত্রদের পড়াচ্ছিলেন নির্মলার এক কলেজ পড়ুয়া ভাইঝি সুস্মিতা বিশ্বাস। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘পিসি মাওবাদী! কী বলছেন?’’ একটু থেমে তিনি বলেন, ‘‘পিসির কথা খুব বেশি আমার মনে নেই। তবে বাড়িতে শুনেছি পিসি লেখাপড়ায় খুব ভাল ছিল।’’

একসময় নির্মলাদের প্রতিবেশী ছিলেন গুরুদাসী বিশ্বাস। ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধা বলেন, ‘‘চোখের সামনেই ওকে বড় হতে দেখলাম। খুব ঠান্ডা স্বভাবের মেয়ে ছিল। ও কী করে এসবের মধ্যে জড়িয়ে পড়ল!’’ গ্রামের অসিত মণ্ডল, কমল বিশ্বাসরা জানান, তাঁরাও খবরের কাগজ দেখে বিষয়টি জানতে পেরেছেন। কমলবাবুও একসময় নির্মলার কাছে পড়তেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বেলাদি খুব ভাল পড়াতেন। আমরা সবাই দলবেঁধে তাঁর বাড়িতে পড়তেও যেতাম। সেই বেলাদি কেন সব ছেড়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেবেন! কোথাও ভুল হচ্ছে না তো?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন